চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত স্পেন পৌঁছানোর চেষ্টায় এক হাজার ৮৬৫ জন অভিবাসী সমুদ্রে প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে স্প্যানিশ এনজিও কামিনান্দো ফ্রন্তেরাস।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এনজিওটি জানায়, এই সময়ের মধ্যে মোট ১১৩টি নৌকাডুবির ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে আটলান্টিক মহাসাগরীয় ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের রুটে। ওই রুটে মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৪৮২ জনের। নিহতদের মধ্যে ৩৪২ জন শিশু এবং ১১২ জন নারী রয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জগামী নৌকাগুলোর অধিকাংশই আফ্রিকার মৌরিতানিয়া উপকূল থেকে যাত্রা শুরু করে। এই রুটে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে এক হাজার ৩১৮ জন মৌরিতানিয়া থেকে, ১১০ জন সেনেগাল ও গাম্বিয়া থেকে এবং ৫৪ জন দক্ষিণ মরক্কো থেকে যাত্রা করেছিলেন।
এছাড়া, ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরে ৩৮টি নৌকা সম্পূর্ণরূপে নিখোঁজ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে এনজিওটি। এই সব নৌকার কোনো যাত্রী জীবিত ফেরেননি।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) একই সময়ের মধ্যে স্পেনগামী রুটে ৪০ জনের মৃত্যু নথিভুক্ত করেছে। সংখ্যার এই পার্থক্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আইওএম জানায়, তারা কেবল সেইসব নৌকাডুবির তথ্যই গণনা করে যেগুলোর ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়।
আইওএম এর একজন মুখপাত্র ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানান, ‘‘আমরা কেবল সেই ঘটনাগুলো অন্তর্ভুক্ত করি, যেগুলোতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।’’
অন্যদিকে, কামিনান্দো ফ্রন্তেরাস তাদের তথ্য সংগ্রহ করে সমুদ্রে থাকা অভিবাসীরা বিভিন্ন সংস্থাকে দেওয়া ফোন কল, পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য এবং বিভিন্ন জরুরি হটলাইনের ভিত্তিতে।
কামিনান্দো ফ্রন্তেরাস তাদের প্রতিবেদনে অভিযোগ করেছে, যেসব অভিবাসী সাগরে মারা গেছেন, তাদের অনেকে সময়মতো সাহায্য পেলে হয়তো প্রাণে বেঁচে যেতেন।
তারা বলছে, ‘‘অনেক সময় উপযুক্ত উদ্ধার সামগ্রী মোতায়েন করা হয় না বা যেগুলো দেওয়া হয় সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল থাকে।’’
এনজিওটি আরও অভিযোগ করেছে, অনেক ক্ষেত্রে অভিবাসীদের পাঠানো বিপদসংকেত পেয়েও উদ্ধারকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয় না।
‘‘তারা মনে করে, যদি তাত্ক্ষণিকভাবে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি না থাকে, তাহলে সেটি জরুরি পরিস্থিতি নয়। এমনকি যদি নৌকাটি নিরাপদ হওয়ার ন্যূনতম শর্তও পূরণ না করে,’’ উল্লেখ করেছে এনজিওটি।
এনজিওটি বলছে, বিশেষ করে আকাশপথে পর্যবেক্ষণের অভাব রয়েছে, যার ফলে দুর্ঘটনায় পড়া নৌকাগুলোকে দ্রুত চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে স্পেনে পৌঁছেছে ১৫ হাজার জন অনিয়মিত অভিবাসী। ২০২৪ সালের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৭১৫ জন — অর্থাৎ আগমনের হার ২৭ শতাংশ কমেছে।
ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে এই পরিসংখ্যান আরো নিম্নমুখী। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত সেখানে পৌঁছেছে প্রায় ১১ হাজার অভিবাসী। যেখানে ২০২৪ সালে একই সময়ে পৌঁছেছিল ১৭ হাজার অভিবাসী। যা ৩৫ শতাংশ হ্রাস।
ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের রুটটি ২০০৫ সাল থেকে সক্রিয়। ২০০৬ সালে ‘কায়ুকো সংকট’-এর সময় প্রায় ৩২ হাজার অভিবাসী সেখানে পৌঁছেছিল, যা ছিল রেকর্ড। এরপর আটলান্টিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হওয়ায় রুটটি কিছুটা বন্ধ হয়ে যায়।
তবে ২০১৮ সালের পর থেকে লিবিয়ায় সহিংসতা, মরক্কো উপকূলে নজরদারি বৃদ্ধি এবং ইউরোপমুখী অন্যান্য রুটের সামরিকীকরণের কারণে অনেক অভিবাসী আবার এই বিপজ্জনক রুট বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
মন্তব্য করুন