জার্মানিতে বসবসারত অভিবাসীদের এক-চতুর্থাংশের বেশি দেশটি ছেড়ে চলে যেতে চান৷ তবে আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে এমন মনোভাব কম৷ সরকারের সাম্প্রতিক এক জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে৷
জার্মানির ইনস্টিটিউট ফর এমপ্লয়মেন্টে রিসার্চ প্রকাশিত এই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২৬ ভাগ জানান, তারা দেশটি ছেড়ে দেওয়ার কথা খুব গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করছেন৷ জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বয়স ১৮ থেকে ৬৫ বছর৷ এদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বয়স ৪০-এর কম৷ অনলাইনে জরিপটি পরিচালনা করা হয়৷
এদিকে, উত্তরদাতাদের তিন ভাগ জানিয়েছেন, তারা আগামী ১২ মাসের মধ্যে জার্মানি ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে৷ উত্তরদাতাদের ৫৭ ভাগ জানিয়েছেন, তারা দেশটিতে দীর্ঘ সময় থাকতে চান৷
জার্মানি ছেড়ে যাওয়ার চিন্তার পেছনের কারণ হিসেবে অভিবাসীরা জটিল আমলাতন্ত্র, উচ্চ করের হার, দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতির নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন৷ উল্লেখ্য, এই উত্তরদাতাদের বেশিরভাগই ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কোনো দেশ, ইউক্রেন এবং তুরস্ক থেকে আসা অভিবাসী৷
এদিকে যে তিন ভাগ অভিবাসী জার্মানি ছাড়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন, তাদের অর্ধেক নিজ দেশে ফেরত যেতে চান৷ আর বাকি অর্ধেক অন্য কোনো দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন৷
উল্লেখ্য, জরিপের ফলাফলে লিঙ্গ ভেদে তেমন কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি৷ তবে জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণকারী এক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, কম বয়সি এবং প্রবীণদের মধ্যে জার্মানি ছেড়ে যাওয়ার মনোভাবের প্রবণতা বেশি৷ আর মধ্য বয়স্কদের মধ্যে দেশটিতে থেকে যাওয়ার মনোভাব দেখা গেছে৷
জরিপে অংশ নেয়া ৫০ হাজার উত্তরদাতাদের মধ্যে সার্বিকভাবে জার্মানিতে জীবনযাপনের বিষয় যেমন উচ্চ কর, আমলাতন্ত্র ইত্যাদির ক্ষেত্রে অসন্তুষ্টি দেখা গেছে৷ তাছাড়া নিজ দেশে অর্জিত যোগ্যতার স্বীকৃতি না পাওয়ার বিষয়টিও তাদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করেছে৷
জরিপের ফলাফল বলছে, জার্মানির রাজনৈতিক পরিবর্তন অংশগ্রহণকারীদের উপর প্রভাব ফেলেছে৷ তাদের অনেকেই বিশেষ করে যারা শরণার্থী হয়ে এসেছেন, তারা বৈষম্যের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন৷
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের দুই তৃতীয়াংশ জানিয়েছেন তার জার্মানিতে পুরোপুরি বা অনেকটাই সাধুবাদ পেয়েছেন এমন মনে হয়েছে৷
‘ইন্টারন্যাশনার মবিলিটি প্যানেল অব মাইগ্রেন্টস ইন জার্মানি’ নামের এই জরিপটিতে তাদেরকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাদের জার্মানিতে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে৷৷ সেই হিসেবে যেসব অভিবাসীর জার্মানিতে অবস্থানের বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি৷
জরিপে আরো দেখা গেছে, অনেক অভিবাসী সামাজিক, পারিবারিক, বন্ধু, সঙ্গী ইত্যাদির কারণে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন৷ আবার অনেকে জার্মানির বাইরে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ার পরিকল্পনা থেকে এমন চিন্তা করছেন৷ জার্মানির বাইরে ক্যারিয়ার গড়ার তালিকায় রয়েছে সুইজারল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের এক তৃতীয়াংশই জানিয়েছেন, তারা চাকরির সন্ধানে জার্মানিতে এসেছিলেন৷ আর এক-তৃতীয়াংশ জানিয়েছেন, তারা আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে জার্মানিতে এসেছেন৷ বাকি এক তৃতীয়াংশ নিজ পরিবারের সাথে যুক্ত হতে জার্মানিতে পাড়ি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন৷
আশ্রয়প্রার্থীদের অনীহা
জরিপে ইইউ এবং এর বাইরের দেশগুলোতে থেকে আসা অভিবাসীদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য করা হয়নি৷ তবে ফলাফল বলছে, নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার মধ্যে তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পোল্যান্ড ১৫ ভাগ এবং রোমানিয়া ১০ ভাগ৷ এদিকে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ইউক্রেনের অভিবাসী আর দ্বিতীয় অবস্থানে তুরস্কের অভিবাসীরা৷
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইউক্রেনের মাত্র ছয় ভাগ অভিবাসী নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন৷ আর তুরস্কের আট ভাগ অভিবাসী এমন মনোভাবের কথা জানিয়েছে৷
দক্ষ কর্মীদের মনোভাব
উচ্চাশিক্ষার ডিগ্রিধারী কিংবা ভোকেশনাল ট্রেনিংধারী অভিবাসীদের মধ্যে ভবিষ্যতে জার্মানি ছেড়ে যাওয়ার মনোভাব বেশি লক্ষ্য করা গেছে৷
এই ফলাফলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জরিপকারী সংস্থাটি৷ প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এমন ফলাফলের মানে হলো, শ্রমিকের ঘাটতি পূরণে জার্মানি যে শ্রেণীর অভিবাসীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে, তারা শেষ পর্যন্ত দেশটি ছেড়ে যেতে চায়৷ জার্মানির শ্রমখাত চলমান রাখতে হলে আমাদের তৃতীয় দেশ থেকে দক্ষ জনবল প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন জার্মানির ফেডারেল এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির পরিচালক ভানেসা আগুয়া৷
গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা
আগামী বছরগুলোতে জার্মানির অভিবাসীদের নিয়ে এই ধরণের গবেষণা চালিয়ে যাওয়া ইচ্ছার কথা জানিয়েছে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চ৷ ভবিষ্যতে জার্মানির অভিবাসন বিষয়ক পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরার মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের সহায়তা করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি৷
গভীর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে আগামীতে এই জরিপে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা সাত লাখে উন্নীত করতে চায় সংস্থাটি৷ তবে সর্বশেষ প্রকাশিত এই গবেষণায়, দক্ষ কর্মীদের ধরে রাখতে সরকারকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পরমার্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটিা৷ গবেষণাটি বলছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সার্বিকভাবে কমিয়ে আনাসহ অভিবাসন ও প্রশাসনিক বিষয়গুলোকে দ্রুততর করার মাধ্যমে সমাজে অন্তর্ভু্ক্তি সহজ হবে, যা অভিবাসীদের দীর্ঘ মেয়াদে জার্মানিতে থাকার ইচ্ছাকে উৎসাহিত করবে৷
মন্তব্য করুন