শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

জিতলো ইতালি, হারলেন অভিবাসীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১৫ জুন ২০২৫, ১১:০১

২০১৭ সালে লিবিয়ার উপকূলে সমুদ্রে উদ্ধার অভিযানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ইটালির বিরুদ্ধে করা এক অভিবাসী মামলাকে গ্রহণযোগ্য মনে করেনি ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত (ইসিএইচআর)।

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে অবস্থিত এই আদালত জানায়, মামলাটি শুনানির যোগ্য নয়, কারণ অভিযোগকারীরা ইটালির অধীনস্থ বিচারাধীন এলাকার মধ্যে ছিলেন না।

নাইজেরিয়া ও ঘানার মোট ১৭ জন অভিবাসী ২০১৮ সালের মে মাসে এই মামলা দায়ের করেন।

তাদের অভিযোগ, ২০১৭ সালের নভেম্বরে তারা একটি ওপেন বোটে করে ইউরোপে পাড়ি জমানোর সময় সাগরে বিপদে পড়েন এবং তখন ইটালির সহযোগিতায় এক লিবীয় জাহাজ তাদের ‘বাধ্যতামূলকভাবে’ লিবিয়ায় ফিরিয়ে নেয়।

আদালতের রায়ে বলা হয়, সমুদ্রে বিপদের সিগনাল পাওয়ার পর রোমের মেরিটাইম রেসকিউ কো-অর্ডিনেশন সেন্টার আশপাশের জাহাজগুলোকে উদ্ধারে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করে৷ সেই সময় ‘রাস জাদির’ নামের একটি লিবীয় জাহাজ প্রায় ৪৫ জনকে উদ্ধার করে, যাদের মধ্যে মামলার দুই অভিযোগকারীও ছিলেন।

এই অভিবাসীদের অভিযোগ, তারা লিবিয়ায় ফিরে গিয়ে তাজুরার এক আটক কেন্দ্রে নির্যাতনের শিকার হন৷ তাদের মধ্যে দুজন জানান, ওই ঘটনার সময় তাদের শিশু সন্তানরা নৌকাডুবিতে মারা যায়। এই ঘটনার জন্য তারা লিবীয় জাহাজের উপস্থিতিকে দায়ী করেন।

তবে আদালত বলেছে, উদ্ধার অভিযানটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় সংঘটিত হয়েছিল এবং ঘটনাস্থল ইটালির “বাস্তব নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায়” ছিল না।

রায়ের ভাষায়, “লিবীয় জাহাজের ক্যাপ্টেন ও ক্রুরা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তে কাজ করেছেন৷ রোমের রেসকিউ সেন্টারের এদের ওপর কোনো বাস্তব নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব ছিল না।” ফলে অভিযোগকারীদের ইটালির বিচারিক কর্তৃত্বের আওতায় আনা যায় না এবং মামলা গ্রহণযোগ্য নয় বলেই বিবেচনা করা হয়েছে।

এই রায় এমন এক সময় এলো, যখন অভিবাসন ইস্যুতে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইটালি ও আরও আটটি ইউরোপীয় দেশ।

ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে ওই দেশগুলো অভিযোগ করে, আদালত “অনেক ক্ষেত্রে চুক্তির সীমা অতিক্রম করে রায় দিচ্ছে”। 

জবাবে ইউরোপীয় পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল আলাঁ বেরসে বলেন, “আদালতের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে রাজনৈতিক চাপের মুখে।”

উল্লেখ্য, ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত ৪৬টি সদস্য দেশের মধ্যে মানবাধিকার সনদের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত।

মন্তব্য করুন