বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

১ লাখ অভিবাসীর স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১৪ জুন ২০২৫, ১৫:১৩
ছবি-সংগৃহীত

এক দশকে লিবিয়া থেকে এক লাখ অভিবাসীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর মাইলফলক অর্জন করেছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম৷

২০১৫ সাল থেকে লিবিয়ায় অনিয়মিতভাবে বসবাসরত অভিবাসীদের স্বেচ্ছায় নিজ নিজ দেশ ফেরত পাঠানোর কাজটি করে আসছে আইওএম৷ স্বেচ্ছাসেবী মানবিক প্রত্যাবর্তন (ভিএইচআর) কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশি অভিবাসীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে আইওএম৷

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইওএম জানিয়েছে, এই পরিসংখ্যান লিবিয়াজুড়ে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে আটকেপড়া অভিবাসীদের জীবন রক্ষাকারী একটি কর্মসূচিকেই প্রতিফলিত করে৷

এখন পর্যন্ত আফ্রিকা ও এশিয়ার ৪৯টি দেশে অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন করা হয়েছে৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসাবে নাইজেরিয়া, মালি, নাইজার, বাংলাদেশ এবং গাম্বিয়ার নাম উল্লেখ করেছে আইওএম৷

আইওএম এর কর্মসূচির আওতায় যারা নিজ দেশে ফিরে গেছেন তাদের মধ্যে অন্তত ৭৩ হাজার পুরুষ, ১৭ হাজার নারী এবং ১০ হাজারের বেশি শিশু৷ শিশুদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন অভিভাবকবিহীন৷ আইওএম বলছে, এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় লিবিয়ার অভিবাসীদের সংখ্যা, বৈচিত্র্য আর অভিবাসী ব্যবস্থাপনার দেশটির দূর্বল অবস্থা৷

আইওএম লিবিয়া মিশনের প্রধান নিকোলেতা জর্দানো বলেন, ‘‘যেখানে সুরক্ষা ঝুঁকি বেশি থাকে এবং নিয়মিত পথের সুযোগ সীমিত থাকে, সেখানে স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তন কর্মসূচি অভিবাসীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ, জীবন রক্ষাকারী বিকল্প৷’’

তিনি আরো বলেছেন, ‘‘যদিও আমরা ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা দেয়া অব্যাহত রেখেছি, আমরা আরো টেকসই, দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্যও কাজ করছি৷’’

এই কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক অভিবাসীকে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আগে এবং পরে সহযোগিতা দিয়ে থাকে আইওএম৷ এর মধ্যে রয়েছে সুরক্ষা পরিষেবা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনোসামাজিক সহায়তা, ভ্রমণ নথির সুবিধা এবং পুনঃএকত্রীকরণ সহায়তা৷

আইওএম নিশ্চিত করে, প্রত্যেক অভিবাসীর সম্মতির ভিত্তিতেই তাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা হয়৷

গত সপ্তাহেও পাঁচটি প্রত্যাবর্তন ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছিল আইওএম৷ এর মধ্যে দুটি বেনগাজি থেকে, দুটি সেভা থেকে এবং একটি মিসরাতা থেকে পরিচালনা করা হয়৷

সম্প্রতি নিজ দেশে ফিরেছেন নাইজেরিয়ান দম্পতি জন এবং টেমনাইয়া৷ লিবিয়ার অভিবাসী জীবনেই তারা একে অপরের দেখা পেয়েছিলেন৷ তারা যখন একসাথে জীবন গড়ার চেষ্টা করছিলেন, তখন তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আরো বড় হতে থাকে৷ বিশেষ করে, তাদের ঘরে প্রথম সন্তান জন্মের পর৷ কারণ, লিবিয়ার তার জন্য শিক্ষার কোনো সুযোগ ছিল না৷

জন বলেন, ‘‘আমরা সেখানে তার জন্য কোনো ভবিষ্যত দেখতে পাইনি৷’’

আইওএম বলছে, তাদের গল্পটি এমন অনেকের প্রতিনিধিত্ব করে, যারা সুরক্ষার পথ এবং স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে চায়৷ আর এসব কারণে অভিবাসীরা স্বেচ্ছাপ্রত্যাবর্তন কর্মসূচিতে যুক্ত হচ্ছে বলে মনে করে আইওএম

আইওএম বলছে, সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় রুটে অভিবাসীদের চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকি নিয়েও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন সংস্থাটি৷ তারা অভিবাসীদের জন্য নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং অধিকার-ভিত্তিক সমাধানগুলো সহজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ একইসঙ্গে সবার জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে আইওএম৷

লিবিয়ায় আইওএম-এর স্বেচ্ছাসেবী মানবিক প্রত্যাবাসন কর্মসূচি মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়ন অর্থায়নে পরিচালিত হয়৷ এছাড়া ইটালি, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, ডেনমার্ক এবং সুইজারল্যান্ড সরকারও এই কর্মসূচিতে সহায়তা দিয়ে থাকে৷

২০১১ সালে লিবিয়ার প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে লিবিয়ায় নিরাপত্তাহীনতা এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ মানবপাচারকারী চক্র দেশটিতে খুবই সক্রিয়া৷ আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অনেক অভিবাসী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছার জন্য লিবিয়ায় আসেন৷ তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে অত্যাচার, নির্যাতন, মারধর, জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করে পাচারকারী চক্রগুলো৷

বন্দিশালায় নির্যাতনের শিকার, অনিয়মিত হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফেরাতে আইওএম এর সঙ্গে কাজ করছে ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস।

দূতাবাস জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত নয় হাজার ১৮৩ জন বাংলাদেশি নাগরিককে লিবিয়া থেকে দেশে ফেরানো হয়েছে৷ ২০২৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত মোট চার হাজার ৪০৫ বাংলাদেশি নাগরিককে নিরাপদে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে৷ এসব প্রত্যাবাসন আইওএম এর সহযোগিতায় হয়েছে৷

নিয়মিতভাবে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন ফ্লাইট চলমান রয়েছে৷ এ বছরের ১৩ মার্চ লিবিয়ায় অনিয়মিত অভিবাসী হিসাবে আটকেপড়া ১৭৬ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন৷

এ বছরের ২৮ মে লিবিয়ার বেনগাজির একটি বন্দিশালায় আটক থাকা ১৫০ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন আইওএম এর 

লিবিয়ার বেনিনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে ১৯ মার্চ বিকালে আইওএম-এর ভাড়া করা লিবিয়ার বুরাক এয়ারের একটি ফ্লাইটে করে ১৬১ জন বাংলাদেশিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়৷ ২০ মার্চ সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে ফ্লাইটটি৷ 

২৬ মার্চ লিবিয়া থেকে ১৪৪ জন এবং টিউনিশিয়া থেকে ১৭ জন বাংলাদেশি আইওএম এর সহযোগিতায় দেশে ফিরেছেন৷ ২৭ মার্চ ঢাকায় পৌঁছেছেন তারা৷ লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের মধ্যে ৫৫ জন ত্রিপোলির তাজুরা আটককেন্দ্রে আটক ছিলেন৷ এছাড়া, ১৪ জন বাংলাদেশি ত্রিপোলিতে অনিয়মিত অবস্থায় অর্থনৈতিক ও মানসিক যন্ত্রণায় ছিলেন৷ অবশিষ্ট ৭৫ জন বিপদগ্রস্ত অবস্থায় মিসরাতা থেকে দেশে ফিরেছেন৷ এদের মধ্য ছয় জন বাংলাদেশি শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন৷ 

১০ এপ্রিল লিবিয়ায় অনিয়মিত অভিবাসী হিসাবে আটকেপড়া আরো ১৬৭ জন বাংলাদেশি দেশে পৌঁছেছেন৷ লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ও লিবিয়ার ধারাবাহিক ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় ১৬৭ জন বাংলাদেশি নাগরিককে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সহযোগিতায় বুধবার (৯ এপ্রিল) লিবিয়া থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷

৩০ এপ্রিল উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ায় অনিয়মিত অভিবাসী হিসাবে আটকেপড়া ১৭৭ বাংলাদেশি দেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন৷ ১ মে তারা ঢাকায় পৌঁছেছেন৷ দূতাবাস জানিয়েছে, প্রত্যাবাসিত অভিবাসীদের মধ্যে ২৫ জন বাংলাদেশি লিবিয়ার বেনগাজির গানফুদা ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন৷ অবশিষ্ট ১৫২ জন বাংলাদেশি বিপদগ্রস্ত অবস্থায় লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল ও বেনগাজী হতে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে গেছেন৷ তাদের মধ্যে ১৬ জন অভিবাসী শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন৷

চলতি বছর, সবশেষ ২৮ মে লিবিয়ার বেনগাজির একটি বন্দিশালায় আটক থাকা ১৫০ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন৷

বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, লিবিয়াতে অনিয়মিত অবস্থায় এবং বিভিন্ন আটককেন্দ্র বন্দিরত বাংলাদেশিদের উদ্ধারের মাধ্যমে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করছে স্থানীয় বাংলাদেশ দূতাবাস৷

তারই ধারাবাহিকতায় জুনেও লিবিয়া থেকে তিনটি প্রত্যাবাসন ফ্লাইট পরিচালনার কথা ভাবা হচ্ছে৷ এই তিনটি ফ্লাইট যোগে অন্তত পাঁচশ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে বলেও জানিয়েছে দূতাবাস৷

মন্তব্য করুন