সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

অভিবাসন নীতি গ্রহণে ব্যর্থ, ভেঙে গেলো নেদারল্যান্ডস সরকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০৫ জুন ২০২৫, ০০:১৩
ছবি-সংগৃহীত

কঠোর অভিবাসন নীতি গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় নেদারল্যান্ডসের জোট সরকার থেকে বের হয়ে গেছে প্রধান শরিক দল পার্টি ফর ফ্রিডম (পিভিভি)। ফলে ভেঙে গেছে দেশটির সরকার। নিজ পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও ভোটের আগ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী ডিক শুফ।

৩ জুন জোট সরকার ভেঙে যাওয়ার পরই নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন ডিক শুফ৷ তবে নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে তার দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি৷ বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগামী অক্টোবর বা নভেম্বরের আগে ভোট হচ্ছে না।

২৬ মে অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন দেশটির অতি-ডানপন্থি, অভিবাসনবিরোধী ও ইসলামবিরোধী রাজনীতিবিদ এবং পিভিভির প্রধান নেতা খেয়ার্ট ভিল্ডার্স৷ অন্যথা সরকার ভেঙে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি৷ শেষ পর্যন্ত ৩ জুন তার দল জোট সরকারের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে ভেঙে যায় ডাচ সরকার।

শুফ বলেছেন, তার প্রশাসন পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকা পালন করবে৷ আনুষ্ঠানিকভাবে ডাচ রাজার কাছে ভিল্ডার্সের পার্টি ফর ফ্রিডম মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র পেশ করবেন তিনি৷ জোটের অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়েই নির্বাচন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বারবার জোট নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে সরকার ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তটি ‘‘অপ্রয়োজনীয় এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন’’।

শুফ বলেন, ‘‘আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে আমাদের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সুরক্ষায় আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়ার মনোভাব প্রয়োজন।’’

অনিয়মিত অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের শরিক দলগুলোর সঙ্গে মতভিন্নতার কারণেই মূলত বেরিয়ে গেছেন ভিল্ডার্স ও তার দল পার্টি ফর ফ্রিডম (পিভিভি)।

মাইক্রো ব্লগিং সাইট ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে অতি ডানপন্থি এই নেতা লিখেছেন, ‘‘আমাদের আশ্রয় পরিকল্পনার জন্য কোনো উদ্যোগ নেই৷ জোট চুক্তির কোনো সমন্বয় নেই৷ পিভিভি জোট ছেড়ে যাচ্ছে।’’

তিনি বলেছেন, তার দলের সব মন্ত্রীর সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী শুফকে তিনি জানিয়েছেন।

৩ জুন ইসলামবিরোধী এই নেতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া, সীমান্ত থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেয়া এবং আশ্রয় স্থগিত করার একটি পরিকল্পনা আমি পেশ করেছিলাম। আমি জোট সরকারের শরিকদের এই প্রস্তাব মেনে নিতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা তা মেনে নেননি। ফলে সরকারের প্রতি আমাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।’’

ভিল্ডার্স বলেন, ‘‘আমি নেদারল্যান্ডসের পতনের জন্য নয়, বরং কঠোরতম আশ্রয় নীতির পক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছি।’’

২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত দেশটির সাধারণ নির্বাচনে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সর্বোচ্চ আসন পায় ভিল্ডার্সের নেতৃত্বাধীন অভিবাসনবিরোধী দল পার্টি ফর ফ্রিডম। ১৫০টি আসনের মধ্যে ৩৭টি জিতে নেয় তার দল। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দীর্ঘ অপেক্ষার পর চার দলীয় সরকার গঠিত হয়।

জোট সরকারে থাকা চারটি দল হলো: পার্টি ফর ফ্রিডম, ডানপন্থি পিপলস পার্টি ফর ফ্রিডম অ্যান্ড ডেমোক্রেসি, সংস্কারবাদী নিউ সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট এবং জনপ্রিয় ধারার ফার্মার্স সিটিজেনস মুভমেন্ট। 

২৬ মে দেশটির প্রশাসনিক রাজধানী হেগে এক সংবাদ সম্মেলনে ভিল্ডার্স বলেছেন, কয়েক মাস ধরে চলা আলোচনা এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে জোট সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তার ধৈর্য ফুরিয়ে গেছে।

এ সময় তিনি আরো বলেছেন, অক্টোবরে সীমান্ত নজরদারি পুনঃপ্রবর্তন, আশ্রয়প্রাপ্ত ব্যক্তির পারিবারিক পুনর্মিলনের সুযোগ সীমিত করা এবং অস্থায়ী ভিসার মেয়াদ কমানোর মতো পদক্ষেপ গ্রহণের পর অভিবাসন ইস্যুতে আর কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি জোট সরকার৷ এ কারণেই তার ধৈর্যচ্যুতি হয়েছে।

খেয়ার্ট ভিল্ডার্সের ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে: সীমান্ত থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো, কঠোর সীমান্ত নজরদারি এবং সীমান্ত তল্লাশিতে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া।

অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে: শরণার্থী মর্যাদাপ্রাপ্ত আশ্রয়প্রার্থীদের পারিবারিক পুনর্মিলন সাময়িকভাবে বন্ধ করা।

আশ্রয়প্রার্থী হিসাবে অথবা অস্থায়ী ভিসায় নেদারল্যান্ডসে বসবাসরত সিরীয়দের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো৷ এক্ষেত্রে ভিল্ডার্স যুক্তি দেখিয়েছেন, বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ার বেশিরভাগ অংশ এখন নিরাপদ।

সহিংস বা যৌন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত অভিবাসীদের অবশ্যই নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে৷ এই দাবিকে ‘‘একটি ঘটনা, আপনাকে যেতে হবে’’ নীতি বলে উল্লেখ করেছিলেন ভিল্ডার্স।

দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে এমন কোনো ব্যক্তি যদি ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়, তাকেও নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।

নতুন করে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ না করারও দাবি জানিয়েছেন এই নেতা। যেসব আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলো বন্ধেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

মন্তব্য করুন