স্পেনে সক্রিয় একটি আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং চক্র ভেঙে দিয়েছে দেশটির পুলিশ। মানবপাচার ও মাদক ব্যবসা থেকে অর্জিত অর্থ ‘হাওয়ালা’ পদ্ধতির মাধ্যমে পাচার করছিল চক্রটি।
এক বিবৃতিতে স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এটি ছিল মানবপাচার এবং মাদক ব্যবসা সংশ্লিষ্ট সবচেয়ে ক্ষমতাধর অর্থ পাচার চক্রগুলোর একটি।
চক্রটি ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৯ মিলিয়ন অর্থাৎ এক কোটি ৯০ লাখ ইউরো এই পদ্ধতিতে পাচার করেছিল।
চক্রটি ‘হাওয়ালা’ নামে পরিচিত একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক ও বেআইনি অর্থ লেনদেন ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থ পাচার করত। এই পদ্ধতিতে টাকার স্থানান্তর হয় কাগজপত্র ছাড়াই, যার ফলে এর কোনো আইনগত রেকর্ড থাকে না এবং প্রশাসনিক নজরদারি এড়ানো সম্ভব হয়।
এই ব্যবস্থাকে অনেক সময় মানবপাচারকারী, সন্ত্রাসী সংগঠন বা মাফিয়া গোষ্ঠীগুলো ব্যবহার করে থাকে।
১৭ জন গ্রেপ্তার, বিপুল সম্পদ জব্দ
‘অপারেশন কারাসু’ নামের তদন্তে স্পেন, অস্ট্রিয়া ও বেলজিয়াম থেকে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ জনকে স্পেন থেকে, বাকি দুইজনকে অস্ট্রিয়া ও বেলজিয়াম থেকে আটক করা হয়।
ইউরোপীয় পুলিশ সংস্থা ইউরোপোলের সহায়তায় পরিচালিত এই অভিযানে মোট ২৫০ জন পুলিশ সদস্য অংশ নিয়েছেন৷ অভিযানে দুই লাখ ৫ হাজার ইউরো নগদ অর্থ, এক লাখ ৮৩ হাজার ইউরো মূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি, ১৮টি গাড়ি, অস্ত্র, বাড়িঘর, ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং চীনে পাঠানোর উদ্দেশ্যে রাখা ছয় লাখ ইউরোর মূল্যের সিগারেট জব্দ করা হয়।
ইউরোপোল জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা মূলত চীনা ও সিরীয় নাগরিক৷ তারা মানবপাচার ও মাদকচক্রের হয়ে অর্থ পাচারের কাজ করছিল।
মাত্র তিন মাসের মধ্যেই এই চক্রটি ৩২টি লেনদেনের মাধ্যমে সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন ইউরো পাচার করেছে।
তদন্তকারীরা জানান, এই অপরাধী নেটওয়ার্ক মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল৷ একটি শাখা ছিল আরব বংশোদ্ভূতদের, যারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ করত৷ অন্যদিকে, চীনা বংশোদ্ভূতরা স্পেনে সেই টাকা হাওয়ালা ব্যবস্থায় সরবরাহ করত এবং এর বিনিময়ে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কমিশন পেত।
চক্রটির প্রধান ছিলেন এক জর্ডান-ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ব্যক্তি, যিনি বেলজিয়ামে অবস্থান করতো৷ তার মাধ্যমেই চক্রের দুটি শাখার মধ্যে সংযোগ তৈরি হয়।
স্প্যানিশ পুলিশের প্রধান গোয়েন্দা কর্মকর্তা এনকারনা ওর্তেগা জানান, এই ব্যক্তি আরও বহু অর্থ পাচারের চক্র পরিচালনা করতেন, যা মানবপাচার ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
তদন্তে উঠে এসেছে, এই চক্রের মাধ্যমে অন্তত এক হাজার সিরীয় নাগরিককে আলজেরিয়া থেকে স্পেনে পাচার করা হয়৷ জনপ্রতি আটশো থেকে এক হাজার ইউরো নেওয়া হতো৷
অভ্যন্তরীণ তদন্ত অনুযায়ী, পাচারকারীরা স্পেন থেকে মাদকভর্তি নৌকায় আলজেরিয়ায় যেত এবং সেখান থেকে অভিবাসীদের ইউরোপে ফিরিয়ে আনতো। এই ধরনের কার্যক্রম সম্প্রতি স্পেনের দক্ষিণ উপকূলে ব্যাপক হারে বেড়েছে।
স্পেনের পুলিশ জানিয়েছে, এর আগেও তারা এ ধরনের বেশ কয়েকটি পাচার চক্র ভেঙে দিয়েছে৷ তবে এই চক্রটি ছিল সবচেয়ে বড় এবং সুসংগঠিত।
মন্তব্য করুন