শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

সারাবিশ্বে ৭২ হাজার অভিবাসীর মৃত্যু: আইওএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০১ মে ২০২৫, ২৩:১৪
ছবি-সংগৃহীত

২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নিজ দেশে বা বিভিন্ন অভিবাসন রুটে বিশ্বজুড়ে ৭২ হাজার অভিবাসী মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন। এই ১১ বছরে ৫২ হাজারেরও বেশি মানুষ সংকট কবলিত দেশগুলো থেকে পালিয়ে বাঁচতে গিয়ে বিভিন্ন অভিবাসন রুটে মারা গেছেন।

সংকট উত্তরণে বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা (আইওএম)।

২৮ এপ্রিল (সোমবার) আইওএম এর মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রজেক্ট তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে৷ সেখানেই এসব তথ্য উঠে এসেছে৷

পরদিন, মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, অভিবাসন রুটে প্রাণ হারানো বেশিরভাগ মানুষই নিজের ইচ্ছায় বিপজ্জনক যাত্রা বেছে নেননি। বরং হতাশা, নিরাপত্তাহীনতা, সংঘাত, দুর্যোগ এবং অন্যান্য মানবিক সংকটের কারণেই পালাতে বাধ্য হয়েছেন তারা, বেছে নিতে হয়েছে বিপজ্জনক পথ।

এই সময়কালে ৩৯ হাজারেরও বেশি মানুষ সংকট অঞ্চলে মারা গেছেন। আইওএম জানিয়েছে, প্রাণ হারানো এসব মানুষেরা নিজ দেশেই অনিরাপদ পরিস্থিতিতে আটকা পড়েছিলেন। আর ১৩ হাজার পাঁচশো জনেরও বেশি মানুষ সংঘাত বা দুর্যোগ থেকে পালাতে গিয়ে মারা গেছেন।

প্রতিবেদনে ‘সংকট কবলিত দেশ’ বলতে ৪০টি দেশকে বুঝিয়েছে আইওএম৷ এর ব্যাখ্যায় সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আইওএম অথবা জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ইউএনওসিএইচএ-এর তালিকাভুক্ত ৪০টি দেশকে বোঝানো হয়েছে, যেখানে ক্রাইসিস রেসপন্স প্ল্যান (সিআরপি) বা হিউম্যানিটেরিয়ান রেসপন্স প্ল্যান (এইচআরপি) কার্যকর রয়েছে।

এই ১১ বছরে সবেচেয়ে বেশি মারা গেছেন আফগানিস্তানের নাগরিকেরা৷ দেশটির অন্তত পাঁচ হাজার ৪৬ জন মানুষের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে আইওএম৷ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী৷ তিন হাজার ১৪৯ রোহিঙ্গার মৃত্যু নথিভুক্ত করা হয়েছে৷ তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইথিওপিয়ার এক হাজার ৯২৩ জন এবং চতুর্থ স্থানে থাকা সিরিয়ার এক হাজার ৪৩৩ জন নাগরিকের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে আইওএম৷

তালিকার দশম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম৷ এই ১১ বছরে অভিবাসন রুটে দেশটির ৩৪৬ জন নাগরিকের মৃত্যু নথিভুক্ত করেছে আইওএম৷

আইওএম-এর মহাপরিচালক অ্যামি পোপ বলেন, “এই সংখ্যাগুলো একটি দুঃখজনক পরিস্থিতিকে তুলে ধরে৷ যখন নিরাপত্তাহীনতা, সুযোগের অভাব এবং অন্যান্য চাপের কারণে নিজ দেশেও কোনো নিরাপদ বা কার্যকর বিকল্প খুঁজে পাওয়া যায় না, মানুষ তখনই জীবনের ঝুঁকি নেয়৷’’

অ্যামি পোপ আরো বলেন, ‘‘আমাদের অবশ্যই সমাজের মধ্যে স্থিতিশীলতা এবং সুযোগ তৈরির জন্য বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে অভিবাসন একটি বিকল্প হয়, কিন্তু প্রয়োজনীয়তা যেন না হয়৷ কিন্তু যখন একটি জায়গায় আর কোনোভাবেই থাকা সম্ভব হবে না, তখনই মানুষ ঝুঁকি নেবে৷ এজন্য আমাদের অবশ্যই জীবন বাঁচাতে নিরাপদ, আইনি এবং নিয়মিত পথ তৈরিতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে৷’’ 

২০২৪ সালে অভিবাসী মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে বলে জানিয়েছে আইওএম৷ গত এক বছরেই মারা গেছে প্রায় নয় হাজার অভিবাসী৷ ২০২৪ সালকে আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ এবং সেন্ট্রাল অ্যামেরিকার অভিবাসীদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ বছর হিসাবে আখ্যায়িত করেছে সংস্থাটি৷

সংকট অঞ্চল: অভিবাসীদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ
আইওএম জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে রেকর্ড করা অভিবাসী মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি (৫৪ শতাংশ) হয়েছে সংঘাত বা দুর্যোগ আক্রান্ত দেশগুলোতে বা তার কাছাকাছি কোনো স্থানে৷

২০২১ সালে আফগানিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতার পরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ মারা গেছেন।

বাংলাদেশ ঢোকার সময় এবং নৌকাডুবি মিলিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অন্তত তিন হাজার একশো জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন৷

সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরকে এখনও বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিবাসন রুট হিসাবে চিহ্নিত করেছে আইওএম৷ এই রুটে ২০১৪ সাল থেকে অন্তত ২৫ হাজার মানুষ সমুদ্রে ডুবে মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন৷

বৈশ্বিক সহযোগিতা শক্তিশালী করার আহ্বান
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানবিক সংকট তীব্রতর হলেও মানবিক পরিকল্পনায় অভিবাসীদের বেশিরভাগ সময়ই উপেক্ষা করা হয়৷ উদ্বাস্তু মানুষের চাহিদা মূল্যায়ন এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতারও অভাব রয়েছে৷

আইওএম বলছে, মারা যাওয়া বা নিখোঁজ অভিবাসীদের প্রতি চার জনের মধ্যে একজন সংকট কবলিত দেশের নাগরিক৷

আইওএম-এর মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রজেক্টের সমন্বয়কারী এবং এই প্রতিবেদনটির লেখক জুলিয়া ব্ল্যাক বলেছেন, ‘‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিবাসীরা ঝুঁকির মধ্যে পড়েন৷’’

অভিবাসী মৃত্যুর সঠিক তথ্য পাওয়াও কঠিন বলে জানান তিনি৷ জুলিয়া ব্ল্যাক বলেন, ‘‘বিশেষ করে যুদ্ধক্ষেত্র এবং দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা সম্ভবত আমরা যা রেকর্ড করেছি তার চেয়ে অনেক বেশি৷’’

এমন বৈশ্বিক বাস্তবতায় অভিবাসীদের সংকটে সাড়া দিতে রাষ্ট্র এবং মানবিক অংশীদারদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে আইওএম৷ এর অর্থ হলো অভিবাসনে আইনি পথের সুযোগ বাড়ানো, সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বড় করা৷ 

একইসঙ্গে তথ্য ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ বাড়ানোর উপরও জোর দিয়েছে আইওএম৷ সংস্থাটি বলছে, এতে করে ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের আরো ভালভাবে ট্র্যাক এবং সুরক্ষা দেয়া সম্ভব হবে।

মন্তব্য করুন