মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইতালিতে বিচারের মুখোমুখি অভিবাসী উদ্ধারকারী জাহাজের কর্মীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ৩১ মে ২০২৫, ১১:২২

অনিয়মিত অভিবাসনে সহায়তার অভিযোগে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীদের উদ্ধারে সক্রিয় উদ্ধারকারী জাহাজ মারে ইয়োনিওর কর্মীদের বিচারের মুখোমুখি করার নির্দেশ দিয়েছেন ইটালির সিসিলির একজন বিচারক৷

অভিযুক্তদের আইনজীবী সেরেনা রোমানো বলেছেন, এই প্রথমবারের মতো কোনো উদ্ধারকারী জাহাজের কর্মীরা এমন অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন৷

মেডিটেরেনিয়া সেভিংস হিউম্যানস (এমএসএইচ) নামের এনজিওটি ভূমধ্যসাগরে বিপদাপন্ন অভিবাসীদের উদ্ধারে মারে ইয়োনিও নামের উদ্ধারকারী জাহাজটি পরিচালনা করে৷ সংস্থাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছে, অনিয়মিত অভিবাসনে সহায়তার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে৷ আগামী ২১ অক্টোবর এ সংক্রান্ত মামলাটির অভিযোগ শুনানি শুরু হবে৷

২০২০ সালে ভূমধ্যসাগরে মারে ইয়োনিওর একটি উদ্ধার অভিযানের পর তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মিত অভিবাসনে সহায়তার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়৷ মেডিটেরেনিয়া পরিচালিত এই উদ্ধারকারী জাহাজটি ওই ঘটনায় বিশাল এক ট্যাঙ্কার থেকে ২৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে৷ উদ্ধারের পর তাদের সবাইকে ইটালি নিয়ে আসা হয়৷

অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন একজন চিকিৎসক, মারে ইয়োনিও’র কমান্ডার, দাতব্য সংস্থা মেডিটেরেনিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং বামপন্থি কর্মী লুকা ক্যাসারিনি এবং তিন জন উদ্ধারকর্মী৷ ছয় আসামির মধ্যে পাঁচজন পুরুষ এবং একজন নারী রয়েছেন৷ তারা সবাই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আইনজীবী সেরেনা রোমানো বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এমন অভিযোগে উদ্ধারকর্মীদের বিচারের মুখোমুখি করার ঘটনা এটিই প্রথম৷

তিনি আরো বলেন, ‘‘এনজিও কর্মীদের বিরুদ্ধে আগেও এমন অভিযোগ আনা হয়েছে৷ কিন্তু সেসব কার্যক্রম তদন্ত পর্যায়ে বা প্রাথমিক শুনানির সময় বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷’’

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ডেনিশ ট্যাঙ্কার মেয়ারস্ক এটিয়েনে আটকেপড়া অভিবাসীদের উদ্ধার করার কারণেই তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মিত অভিবাসনে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়৷

মেয়ারস্ক এটিয়েন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই সময় মাল্টিজ, ইটালীয় বা লিবিয়ার কর্তৃপক্ষের কেউই ট্যাঙ্কারটিকে অভিবাসীদের তীরে নেয়ার অনুমতি দেয়নি৷

ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টারত এই অভিবাসীরা একটি কাঠের নৌকা নিয়ে রওনা হয়েছিলেন৷ কিন্তু মাল্টার জলসীমায় তাদের নৌকাটি ডুবে যেতে শুরু করে৷ পরে ট্যাঙ্কারটি তাদের উদ্ধার করে৷ এরপর ট্যাঙ্কার থেকে অভিবাসীদের উদ্ধার করে ইটালির সিসিলিতে নিয়ে আসে মারে ইয়োনিও জাহাজটি৷

ইটালির সংবাদ সংস্থা আনসা জানিয়েছে, প্রসিকিউটরেরা অভিযোগ করেছেন আর্থিক লেনদেনের কারণেই মারে ইয়োনিও উদ্ধার অভিযানটি পরিচালনা করেছিল৷ এ জন্য মায়েরস্ক কর্তৃপক্ষ থেকে মেডিটেরানিয়া এক লাখ ২৫ হাজার ইউরো অর্থ নিয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে৷

অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে মেডিটেরেনিয়া৷ সংস্থাটি বলেছে, ভূমধ্যসাগরে অভিবাসী উদ্ধার প্রচেষ্টায় সহায়তার অংশ হিসাবেই তারা ‘স্বচ্ছ অনুদান’ হিসাবে এই অর্থ নিয়েছে৷

প্রয়াত ধর্মযাজক পোপ ফ্রান্সিসের বন্ধু ক্যাসারিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, রাগুসার আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছে, তার মাধ্যমে ঘটনার সময় সরকারি আচরণ কেমন ছিল, তা যাচাই করে দেখার সুযোগও পাওয়া যাবে৷

তিনি বলেন, ‘‘আমরা মন্ত্রী এবং কর্তৃপক্ষকে সাক্ষী হিসেবে ডাকবো, যারা ২৭ জন মানুষকে সমুদ্রের মাঝে ভাসিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷’’

২০২২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে আসা অভিবাসীদের থামাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছেন ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি৷ যদিও এই ঘটনাটি মেলোনির আমলের নয়৷ কিন্তু তার সময়েই ভূমধ্যসাগরে সক্রিয় উদ্ধারকারী জাহাজগুলোর কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে৷

ভূমধ্যসাগরে উদ্ধারকারী জাহাজ পরিচালনা করা এনজিওগুলো অনিয়মিত অভিবাসনে সহায়তা করে আসছে বলে অভিযোগ করে আসছেন জর্জা মেলোনি৷ এমনকি, এনজিওগুলো মানবপাচারকারীদের সঙ্গে যোগসাজশে এ কাজ করছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি৷ 

এমনিতেই, আলবেনিয়ায় নির্মিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত ইটালির উদ্যোগটি আদালতের সিদ্ধান্তে আটকে গেছে৷ এ নিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েন চলছে৷ এর মধ্যেই আদালতের এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছেন অনেকেই৷

এই বছরের শুরুতে ক্যাসারিনিসহ বেশ কয়েকজন মেডিটেরেনিয়া সদস্যের আলাপচারিতা স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে আঁড়িপাতার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে৷ তবে, এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে মেলোনির সরকার৷ বরং তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্তের পদক্ষেপও নিয়েছে৷

মন্তব্য করুন