শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন আনছে জার্মানি, বিপাকে শরণার্থীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ২৬ মে ২০২৫, ২৩:১৯
ছবি-সংগৃহীত

প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রিয়ার পর শরণার্থীদের পারিবারিক পুনর্মিলন স্থগিত করতে আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে জার্মানির নতুন সরকার। পরবর্তী মন্ত্রিসভা বৈঠকে আইনটির খসড়া উত্থাপনে প্রস্তুত জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আগামী ২৮ মে মন্ত্রিসভা বৈঠক করতে যাচ্ছে চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের সরকার। ওই বৈঠকে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ডট নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির শরণার্থীদের ক্ষেত্রে পারিবারিক পুনর্মিলন বন্ধে খসড়া আইনটি উত্থাপন করবেন। রোববার (২৫ মে) জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

কী থাকছে আইনে?
খসড়া আইনটিতে বলা হয়েছে, সীমিত সুরক্ষা মর্যাদা পাওয়া একজন শরণার্থী অন্তত দুই বছর পর তার আত্মীয়-স্বজনকে জার্মানি আনার সুযোগ পাবেন, তার আগে নয়। তবে, বিশেষভাবে জরুরি বলে প্রতীয়মান হলে পারিবারিক পুনর্মিলনের শর্ত শিথিল রাখারও বিধানও আইনে রাখা হচ্ছে।

অবশ্য এমন আইন প্রণয়নের ইঙ্গিত সরকার গঠনের আগেই দেয়া হয়েছিল। এসপিডি-এর সঙ্গে জোট করেই ক্ষমতায় আসে চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল দল সিডিইউ/সিএসইউ। দুই দলের জোট চুক্তির সময় এমন আইন প্রণয়নের কথা তারা উল্লেখ করেছিলেন।

জার্মানির নতুন সরকারের এমন আইন তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে সর্বপ্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল দেশটির সংবাদমাধ্যম বিল্ড। সংবাদমাধ্যমটিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডোব্রিন্ডট বলেছিলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে অন্তত এক হাজার মানুষ পারিবারিক পুনর্মিলনের আওতায় জার্মানিতে আসতে পারছেন৷ এখন তা শেষ হবে।’’

তিনি আরো বলেছিলেন, ‘‘জার্মানিতে (অভিবাসীদের) আসার বিভিন্ন সুযোগ বা পুল ফ্যাক্টরগুলো আমাদের কমিয়ে আনতে হবে৷ এর মধ্য দিয়ে আমরা দেখাতে চাই, জার্মানিতে অভিবাসন নীতি বদলে গেছে।’’

সমালোচনায় গ্রিন পার্টি
সরকারের এমন পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে গ্রিন পার্টি৷ দলটির অভ্যন্তরীণ নীতি বিষয়ক মুখপাত্র শাহিনা গাম্বির ডিপিএ-কে বলেন, ‘‘নতুন ফেডারেল সরকার সমাজের দুর্বলতম সদস্যদের প্রতি বিরূপ আচরণের মধ্য দিয়ে প্রতীকী রাজনীতির উপর জোর দিচ্ছে এবং আইন ভঙ্গ করতেও দ্বিধা করছে না।’’

পারিবারিক পুনর্মিলন স্থগিত করা ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশন এবং জাতিসংঘের শিশু অধিকার কনভেনশনের লঙ্ঘন জানিয়ে শাহিনা বলেন, ‘‘এই নীতি অনৈতিক। এটি সামাজিক সংহতির মধ্যে একটি ফাটল তৈরি করে।’’

অবশ্য এর আগে ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত জার্মানিতে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে যারা শরণার্থী মর্যাদা পাননি, তাদের ক্ষেত্রে পারিবারিক পুনর্মিলন স্থগিত করেছিল সরকার।

কিন্তু ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে প্রতিমাসে শরণার্থী মর্যাদাবিহীন আশ্রয়প্রার্থীদের পরিবারের এক হাজার সদস্যকে পারিবারিক পুনর্মিলনের আওতায় জার্মানি আসার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

সদ্য বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সরকার পারিবারিক পুনর্মিলনের ক্ষেত্রে সব বিধি-নিষেধ তুলে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল৷ কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে জোট সরকার ভেঙে গেলে পরিকল্পনাগুলো আর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

এদিকে, ৩০টিরও বেশি এনজিও পারিবারিক পুনর্মিলনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷

পরিবর্তন আসছে নাগরিকত্ব আইনেও
দক্ষ কর্মীদের কাছে জার্মানিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেছিল এসপিডি-এর নেতৃত্বাধীন সদ্য বিদায়ী জোট সরকার৷ ওই আইনের একটি বিধান ছিল, অভিবাসীদের মধ্যে যারা জার্মান সমাজের মানিয়ে নেয়ার (ইন্টিগ্রেশন) ক্ষেত্রে ‘বিশেষ সাফল্য’ দেখাতে পারবেন, তারা তিন বছর পরই নাগরিকত্ব চাইতে পারবেন৷ বিশেষ সাফল্যের মধ্যে রয়েছে: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভালো ফল করা, কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণ করা, ভাষাগত দক্ষতা এবং স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে পারদর্শীতা৷

নতুন সরকার নাগরিকত্ব আইনের এই বিধানটিও বাদ দেয়ার পরিকল্পনা করছে৷ আগামী ২৮ মে জার্মান মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্তও একটি আইনের খসড়া উত্থাপন করা হতে পারে।

‘টার্বো ন্যাচারালাইজেশন’ বা মাত্র তিন বছরের মধ্য নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ সম্পর্কে রক্ষণশীল সিডিইউ/সিএসইউ বলছে, ভবিষ্যতে এটি আর সম্ভব হবে না।

এই খসড়া বিলটির অনুলিপি দেখেছে জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ৷ এই খসড়া আইনটির উদ্দেশ্য হলো, ‘‘নাগরিকত্বের অর্জনে পূর্বশর্ত হিসাবে দেশটিতে আইনি বসবাসের গুরুত্বকে শক্তিশালী করা।’’

১১ জুলাই থেকে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হওয়ার আগেই জার্মান পার্লামেন্টের ‘বুন্ডেসটাগ’ ও ‘বুন্ডেসরাট’-এ বিলটি পাস করাতে চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডোব্রিন্ডট।

এসপিডির সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় আসে রক্ষণশীল সিডিইউ/সিএসইউ৷ ৬ মে দায়িত্ব নিয়েছে চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের সরকার৷ ক্ষমতা নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডোব্রিন্ডট।

সীমান্তে তল্লাশি কঠোর করার পাশাপাশি আশ্রয়প্রার্থীদের সীমান্ত থেকেই ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ডোব্রিন্ডট। সমালোচকেরা বলছেন, জার্মানির এই পদক্ষেপ ইইউ আইনের লঙ্ঘন৷ কিন্তু সেদিকে মোটেও কান দিচ্ছে না সরকার।

মন্তব্য করুন