বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের প্রাণকেন্দ্র। বন্দর ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বিদেশি অপারেটরদের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন উঠায় বন্দর নিরাপত্তা ও পরিচালনায় দেশের স্বার্থ রক্ষা একটি জটিল ও সংবেদনশীল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুটি ইস্যুতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষা, মানবিক সহায়তা সুষ্ঠুভাবে বিতরণ, এবং বন্দর নিরাপত্তা তত্ত্বাবধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব, সতর্কতা ও কার্যকরী সমন্বয় এই প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত এবং রোহিঙ্গা সংকটের প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি মানবিক করিডোর স্থাপনের প্রস্তাব আসে। বাংলাদেশ সরকার এ প্রস্তাবে নীতিগত সম্মতি জানালেও, সেনাবাহিনী এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে। ১। সীমান্ত নিরাপত্তা: সেনাবাহিনী সীমান্ত এলাকায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) ওপর চাপ কমাতে সীমান্তকে 'মিলিটারি অপারেশনস জোন (এমওজেড)' ঘোষণা করার প্রস্তাব করেছে।bbc ২। সার্বভৌমত্ব রক্ষা: সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্ট করেছেন যে, মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো "রক্তাক্ত করিডোর" অনুমোদন করা হবে না, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হতে পারে।bddigest.com ২। সামরিক প্রস্তুতি: সেনাবাহিনী সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে এবং করিডোর ব্যবস্থাপনায় জাতিসংঘের সঙ্গে সমন্বয় করছে, যাতে মানবিক সহায়তা নিরাপদে পৌঁছানো যায়। Bangladesh Military Forces ,৩।চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশি অপারেটরদের সম্পৃক্ততা নিয়ে সেনাবাহিনী উদ্বেগ প্রকাশ করেছে. 1. জাতীয় স্বার্থ: সেনাবাহিনী মনে করে, বন্দরের ব্যবস্থাপনায় বিদেশি অপারেটরদের সম্পৃক্ততা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী হতে পারে এবং এটি দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে. ২। সিদ্ধান্ত গ্রহণ: সেনাবাহিনী উল্লেখ করেছে যে, করিডোর বা বন্দর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়; এটি একটি নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব।সার সক্ষেপে বলা যায় , বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মানবিক করিডোর এবং চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুতে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তারা সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে এবং বিদেশি সম্পৃক্ততা নিয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।bddigest.com এখন জুলাই ২০২৪ – মে ২০২৫ এই সময়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করছি , ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংস রূপ ধারণ করলে সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেনাবাহিনী ছাত্র আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যার মধ্যে ছিল গুলি চালানো এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা ।Human Rights Watch, আন্দোলনের সময় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে। মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক জানান, সেনাবাহিনীকে দমন-পীড়নে অংশ না নিতে সতর্ক করা হয়েছিল। BBC+1Dhaka Tribune+1, আন্দোলনের চাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করলে সেনাবাহিনী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে সহায়তা করে। নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়, যার প্রতি সেনাবাহিনী সমর্থন জানায় ।Wikipedia, আন্দোলন দমনের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের তথ্যমতে, তিন সপ্তাহের দমন-পীড়নে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য ।BBC+2Dhaka Tribune+2AP News+2, এই সময়কালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রথমে আন্দোলন দমন এবং পরে রাজনৈতিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে তাদের ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বর্তমানে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। ২০২৪ সালের ২৩ জুন তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আসুন এখন তার সম্পর্কে জেনে নেই, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ১৯৮৫ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। তার ৩৫ বছরের সামরিক ক্যারিয়ারে তিনি পদাতিক ব্যাটালিয়ন, ব্রিগেড এবং ডিভিশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি সেনা সদর দপ্তরের সামরিক সচিব এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, তিনি অ্যাঙ্গোলা ও লাইবেরিয়ায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করেছেন। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের সময়, সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সেনা সদস্যদের নির্দেশ দেন যে, নির্বাহী আদেশ ছাড়া আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো যাবে না। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী জনগণের পাশে থাকবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে ।চ্যানেল আই অনলাইন, ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এই সরকার ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করবে এবং সামরিক বাহিনী রাজনীতিতে নিরপেক্ষ থাকবে।Facebook+4Wikipedia+4চ্যানেল আই অনলাইন+4Reuters, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর ভূমিকা আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে। তবে, কিছু মহল তার রাজনৈতিক অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তিনি স্পষ্টভাবে জানান, তার কোনো রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা নেই এবং তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমর্থন করেন (BBC), জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শেখ হাসিনার ফুফাতো বোন সারাহনাজ কমলিকার স্বামী। তাদের দুই কন্যা রয়েছে। তিনি প্রয়াত সেনাপ্রধান জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমানের জামাতা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (Bangladesh Army) বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এটি স্থলভিত্তিক সামরিক বাহিনী এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এর সূচনা হয়।আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় ২১ নভেম্বর ১৯৭১ (এই দিনটি ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়)। আসুন সেনাবাহিনীর মূল ভূমিকা কি ? জেনে নেই, ১। জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা।২। দুর্যোগকালীন সহায়তা প্রদান (বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভবনধস ইত্যাদি)।৩। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ।৪। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখা (যেমন: নির্বাচনকালীন সহায়তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা)। সেনাবাহিনীর সেনা সদর দফতর (Army Headquarters): ঢাকায় অবস্থিত।
বিভিন্ন ডিভিশন: চট্টগ্রাম, যশোর, রংপুর, বগুড়া, কুমিল্লা, সাভার, সিলেট, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত। বিভিন্ন কোর: যেমন ইনফ্যান্ট্রি, আর্টিলারি, ইঞ্জিনিয়ার, সিগন্যাল, মেডিক্যাল, মিলিটারি পুলিশ, ইত্যাদি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী শীর্ষ দেশগুলোর একটি। আফ্রিকা ও অন্যান্য অঞ্চলে তারা সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে।এর প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান হল : 1. বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (BMA): চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে অবস্থিত।2. ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (DSCSC)।3. আর্মি মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ইত্যাদি। মোটো (Motto): "In War, In Peace, We are Everywhere for our Country." বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জনগণ সেনাবাহিনীর প্রতি যেসব প্রত্যাশা রাখে এবং বাস্তবে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে যেসব প্রাপ্তি পেতে পারে—তা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো: ১। জনগণ আশা করে সেনাবাহিনী রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে নিরপেক্ষভাবে দেশের স্বার্থ রক্ষা করবে, ২।
অতীতের মতো কোনো পক্ষাবলম্বন না করে শান্তি বজায় রাখতে সেনাবাহিনী পেশাদার ভূমিকা পালন করবে, ৩। রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাস ও গুজব রোধে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ, ৪। জরুরি অবস্থায় জাতীয় সম্পদ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ৫। অস্থায়ী সরকার বা প্রশাসনিক দুর্বলতার সময়ে স্থিতিশীলতা আনয়ন ও সুশাসনের সহায়ক ভূমিকা পালন করা, ৬। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে "ট্রাস্টেড ফোর্স" হিসেবে কাজ করা, ৭। ভারত, মিয়ানমার কিংবা অভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্নতাবাদী হুমকির বিরুদ্ধে দেশের সীমান্ত রক্ষা, ৮। চীন -ভারত কৌশলগত প্রতিযোগিতার প্রেক্ষিতে নিরপেক্ষ এবং স্বার্থরক্ষাকারী ভূমিকায় থাকা, ৯। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প বা করোনা মহামারির মতো দুর্যোগে সামনের সারিতে থেকে সহায়তা ও ১০।
শান্তিরক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্মান বজায় রাখা।কিন্তু বাস্তবে যে প্রাপ্তি ঘটেছে বিগত দিনে তা হল : ১। ২০২৪-২৫ সালের ছাত্র আন্দোলন ও সরকারবিরোধী আন্দোলনে সেনাবাহিনী সহিংসতা প্রশমনে নিয়ন্ত্রিত হস্তক্ষেপ করেছে, ২।সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করেছে বিনা রক্তপাতের সমাধানের জন্য, ৩।অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সেনাবাহিনী সরাসরি রাজনৈতিক ক্ষমতায় অংশগ্রহণ না করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধানে সহায়তা করছে, ৪।রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধ, চোরাচালান ও সীমান্ত সংঘাতে সক্রিয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ, ও ৫।
সেনাবাহিনী মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, রোড নির্মাণ, হাসপাতাল নির্মাণে কার্যকরী অংশ নিয়েছে।নিচে চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা করছি । মানুষ আশা করে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা কিন্তু রাজনৈতিক পরিবার ও নেতৃত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিতর্ক আছে , সার্বভৌমত্ব রক্ষা কিন্তু বিদেশি চাপে করিডোর বা বন্দরের মত বিষয়ে সেনাবাহিনী সীমিত ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ আছে , দুর্নীতি দমন কিন্তু সেনা-সম্পৃক্ত ব্যবসা ও সুবিধা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে, গণতান্ত্রিক সহায়ক ভূমিকা কিন্তু সেনাবাহিনীর দৃশ্যমান নিয়ন্ত্রণ বা নেপথ্য প্রভাব নিয়ে দ্বিমত আছে অনেকের ।আসলে সাধারণ মানুষ চায়—সেনাবাহিনী যেন জনগণের আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়ায়, একটি রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ, আধুনিক ও মানবিক শক্তি হিসেবে। বাস্তবে, সেনাবাহিনী এই প্রত্যাশার কিছুটা পূরণ করতে পেরেছে, তবে সম্পূর্ণভাবে নয়।
গুণীজনরা মনে করেন, যদি সেনাবাহিনী জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে এর রাজনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তাগত প্রভাব হতে পারে অনেক গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী। নিচে সম্ভাব্য প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করা হলো:১।সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষের ঐতিহাসিক আস্থা কমে যেতে পারে,২। যারা সেনাবাহিনীকে "শেষ ভরসা" হিসেবে দেখে, তারা হতাশ হয়ে পড়বে, ৩। জাতীয় ঐক্যে চিড় ধরতে পারে, ৪।সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ না থাকলে বা কোনো বিশেষ পক্ষের প্রতি পক্ষপাত দেখালে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়বে,৫। সামরিক-বেসামরিক সম্পর্কে অবিশ্বাস তৈরি হবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হবে, ৬। শিক্ষার্থী, তরুণ, এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণি—যারা সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে শান্তি প্রত্যাশা করে—তারা হতাশ হলে অসহযোগ ও গণআন্দোলন বাড়তে পারে,৭, এটি সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনগণের সংঘর্ষেও রূপ নিতে পারে (যেমনটি ইতিহাসে অন্য দেশে ঘটেছে),৮। মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক পক্ষপাত অথবা গণদমন হলে আন্তর্জাতিক মহল (জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ) চাপ তৈরি করবে,৯। নিষেধাজ্ঞা, সাহায্য বন্ধ, এমনকি শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণে বাধা আসতে পারে, ১০।
সেনাবাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে রাষ্ট্রবিরোধী গোষ্ঠী (মিলিট্যান্ট, চরমপন্থী, বিচ্ছিন্নতাবাদী) সুযোগ নিতে পারে, ১১। সীমান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা দুর্বল হতে পারে, মাদক ও অস্ত্র পাচার বেড়ে যেতে পারে, ১২।পেশাদারিত্বের অভাব এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় জড়িয়ে পড়লে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে দ্বিধা তৈরি হতে পারে,ও ১৩। কমান্ড ও নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা বাড়বে, যা একটি বাহিনীর স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। কথায় আছে, "যে বাহিনী জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা ভুলে যায়, তার অস্ত্র একদিন নিজের দিকেই ফিরে আসে।"সেনাবাহিনী যদি গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা শুধু রাজনৈতিক বা সামরিক সংকটই নয়, বরং রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর আস্থা হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তাই সেনাবাহিনীর কিছু করণীয় আছে বলে সুশীলরা মনে করেন, ১। সেনাবাহিনীর উচিত হবে গণতান্ত্রিক কাঠামোতে থেকে নিরপেক্ষ ও মানবিক ভূমিকা পালন করা, ২। জনসচেতনতা, স্বচ্ছতা, এবং মানবাধিকারকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করা, ৩। সংলাপ, সহনশীলতা ও দায়িত্বশীলতা বজায় রাখা। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ চলে আসে যা দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না । বাংলাদেশের জন্য এখন প্রয়োজন হল সেনাবাহিনীর সুশাসন স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, পেশাদারিত্বয় বজায় রাখা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মজবুত করা । বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক ভূমিকা স্পষ্ট করে যে, দেশের স্বার্থে তারা কেবল অস্ত্রধারী নয়, বরং চিন্তাশীল, দায়িত্বশীল ও দূরদর্শী। মানবিক করিডোর, চট্টগ্রাম বন্দর এবং রাজনৈতিক পালাবদলের মধ্যেও তারা যেন রাষ্ট্রের জন্য নির্ভরযোগ্য স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভারসাম্য, সচেতনতা ও কৌশলই আগামী দিনের বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ও গণতন্ত্রের ভিত্তি গড়ে তুলবে।
লেখকঃ ড.আজিজুল আম্বিয়া, কলাম লেখক ও গবেষক । email: azizu;[email protected]
মন্তব্য করুন