শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

অনিয়মিত অভিবাসী ঠেকাতে ফ্রান্স-স্পেন সীমান্ত গোয়েন্দা সংস্থা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১২ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৫

গত সপ্তাহে ফ্রান্স-স্পেন সীমান্তের বিরিয়াতু শহরে একটি নতুন তথ্য বিনিময় কেন্দ্র চালু করেছে ফরাসি কর্তৃপক্ষ৷ স্পেন সীমান্তঘেঁষা এই শহরটি এখন অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য ফ্রান্সে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ রুটে পরিণত হয়েছে৷

ইউনিটটির নেতৃত্বে আছে অনিয়মিত অভিবাসী পাচারের বিরুদ্ধে নির্ধারিত ফরাসি কার্যালয় (অল্টিম)৷ এই ইউনিটে কাস্টমস, আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ এবং পুলিশের জেন্ডারমারি শাখার কর্মকর্তারা একত্রে কাজ করছেন।

চলতি বছরের ১১ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রোতাইয়ো সীমান্ত সফরে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ইউনিট গঠনের ঘোষণা করেছিলেন। গত ২ জুলাই ইউনিটটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। 

রোতাইয়ো এপ্রিল মাসে এক টুইটে বলেছিলেন, "ফ্রান্স কোনো ট্রানজিট পয়েন্ট নয়। বিরিয়াতুর টোল প্লাজার সীমান্ত থেকে আমি আমাদের নতুন কড়া কৌশল তুলে ধরেছি। এর তিনটি প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ জোরদার, পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নিরন্তর অভিযান এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা।"

তিনি জানান, "এই কৌশলের প্রতিফলন ঘটছে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী, কাস্টমস ও সেনাবাহিনীর সর্বাত্মক সক্রিয়তায়। যেটিকে আমরা বলছি ‘সীমান্তে শক্তি।’

পিরেনে-আটলান্টিক অঞ্চলের প্রিফেকচারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "এই ইউনিটটি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান বাড়াতে সাহায্য করবে। যাতে স্থানীয় নেটওয়ার্ক, পাচারকারীদের ব্যবহৃত রুট এবং তাদের কার্যপ্রণালি চিহ্নিত করা যায়।"

পিরেনে-আটলান্টিক অঞ্চলের প্রশাসক জ্ঁ-মারি গিরিয়ে জানান, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এই অঞ্চলত ফ্রান্সে অনিয়মিত অভিবাসনের প্রধান প্রবেশদ্বার হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালে অঞ্চলটিতে পাঁচ হাজার ২৬৪ জন অভিবাসীকে আটক করা হয়েছিল। শুধুমাত্র জানুয়ারিতেই আটক হন ৬৮০ জন। 

তিনি জানান, "গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি পাঁচগুণ বেশি। যদিও ২০২২ ও ২০২৩ সালের তুলনায় সামগ্রিক সংখ্যা কিছুটা কম।”

ফরাসি সাপ্তাহিক সুদ ওয়েস্ট জানিয়েছে, বিরিয়াতুর টোল গেট ও এ৬৩ হাইওয়েতে প্রায়ই অভিবাসী পাচারকারীদের গ্রেফতার করা হয়। এই সড়ক ব্যবহার করেই সাধারণত সীমান্ত পেরিয়ে অভিবাসীরা প্যারিস বা ইউরোপের অন্যত্র যাত্রা করেন।

২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই এই অঞ্চলে ১৭ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। ২০২৪ সালে গোটা বছরে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০। ফরাসি প্রশাসনের মতে, এই পরিসংখ্যান "এলাকাটিতে পাচার নেটওয়ার্কগুলোর সক্রিয়তা ও স্থায়িত্ব" উঠে এসেছে। 

২০২৪ সালে ফ্রান্সজুড়ে চার হাজারেরও বেশি পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অল্টিম প্রধান জাভিয়ে দেলরিউ। 

সংস্থাটিতে ১৫৭ জন বিশেষজ্ঞ তদন্তকারী রয়েছেন, যাদের সহায়তা করছেন দেশজুড়ে ৪৫০ পুলিশ কর্মকর্তা। তারা ২০২৪ সালে ২৬৯টি অপরাধ চক্র ভেঙে দিয়েছেন। এর মধ্যে ৬৬টি ছিল ফ্রান্সে প্রবেশে সহায়তাকারী, ১৩২টি ফ্রান্সে অবৈধ অবস্থানে সহায়তাকারী এবং বাকিগুলো ট্রানজিট ও মানবপাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্বে আসার পর থেকে ব্রুনো রোতাইয়ো অভিবাসন ও পাচারবিরোধী কড়া অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তিনি রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা সহায়তা বাতিল, ফের অবৈধ বসবাসকে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা এবং বহিষ্কারের হার বাড়ানোর মতো একাধিক উদ্যোগ নিয়েছেন।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি ‘সার্কুলার রোতাইয়ো’ নামে পরিচিত একটি নির্দেশনার মাধ্যমে অনিয়মিত অভিবাসীদের বসবাসের অনুমতির জন্য শর্ত কঠোর করেন। 

এছাড়া জুন মাসে ৪৮ ঘণ্টার জন্য সারা দেশে এক বড় ধরনের পরিবহন তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। ১৮ ও ১৯ জুন দুই দিনে ৮৪৪টি রেলস্টেশন ও এক হাজার ২৭৩টি ট্রেন তল্লাশি করা হয়। এই অভিযানে চার হাজারেরও বেশি পুলিশ, জেন্ডারমারি, কাস্টমস ও সেনা সদস্য অভিযানে অংশ নেন। এসময়ে ৬৯১ জনকে আটক করা হয়, যাদের মধ্যে ৫০০ জনেরও বেশি পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মন্তব্য করুন