ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে দেশটির এক সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে দিনের বেলায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। রাজধানীর একটি পার্কিং লটে অজ্ঞাত এক হামলাকারী তাকে একাধিকবার গুলি করে পালিয়ে যান। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত ওই কর্মকর্তা ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ-এর এক সদস্য ছিলেন। যদিও সংস্থাটি তার নাম প্রকাশ করেনি, তবে ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তিনি কর্নেল ইভান ভোরোনিচ।
এসবিইউ মূলত ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা নজরদারির কাজ করে — যেমন যুক্তরাজ্যের এমআই-৫। তবে ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণের পর থেকে এসবিইউ সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে গুপ্তহত্যা এবং নাশকতা চালানোর ক্ষেত্রেও সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে।
সংস্থাটির সূত্র বলেছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রাশিয়ার উচ্চপদস্থ জেনারেল ইগর কিরিলভকে হত্যার পেছনেও ইউক্রেনের হাত ছিল। আবার চলতি বছরের শুরুর দিকে মস্কোতে গাড়িবোমা বিস্ফোরণে জেনারেল ইয়ারোস্লাভ মোস্কালিক নিহত হন। এর জন্য রাশিয়া সরাসরি কিয়েভকে দায়ী করে। যদিও ইউক্রেন এসব হত্যাকাণ্ডের দায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি।
ঘটনার পর কিয়েভ পুলিশ জানিয়েছে, তারা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক পুরুষের লাশ উদ্ধার করেছেন। অপরাধীর পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে এবং তাকে আটক করতে তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
এসবিইউ এক বিবৃতিতে জানায়, ঘটনাটির পূর্ণ তদন্ত চলছে এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স যাচাইকৃত একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার একটু পরে কিয়েভের দক্ষিণাঞ্চলীয় হোলোসিইভস্কি এলাকায় এক ব্যক্তি একটি ভবন থেকে বের হয়ে গাড়ির দিকে হাঁটছেন। সঙ্গে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ এবং কাঁধব্যাগ ছিল। ঠিক তখনই আরেক ব্যক্তি দৌড়ে এসে তার দিকে গুলি চালায়।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম ইউক্রেনস্কা প্রাভদা জানিয়েছে, হামলাকারী একটি পিস্তল ব্যবহার করে এসবিইউ কর্মকর্তার শরীরে পাঁচবার গুলি চালায়।
এই হত্যাকাণ্ড ঘটে এমন এক সময়ে, যখন ইউক্রেন বড় ধরনের রুশ বিমান হামলার পরপরই টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে রাশিয়া ইউক্রেনজুড়ে রেকর্ডসংখ্যক ৭২৮টি ড্রোন ও ১৩টি মিসাইল নিক্ষেপ করে। এরপর বৃহস্পতিবার ভোরে কিয়েভে আরেক দফা হামলায় কমপক্ষে দুজন নিহত ও ১৬ জন আহত হন। শহরের ৮টি এলাকার ওপর হামলা চালানো হয়।
এদিকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রন্টলাইনে রুশ বাহিনী ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে এবং কুরস্ক অঞ্চলের একটি অংশ পুনর্দখল করেছে। রুশ এই অঞ্চলটি গত বছর গ্রীষ্মে ইউক্রেনের বাহিনী সাময়িকভাবে দখল করেছিল।
রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে দখল করা ক্রিমিয়া উপদ্বীপও রয়েছে।
মন্তব্য করুন