সীমান্তে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যাখ্যানসহ অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার পরপরই সীমান্তে নজরদারি জোরদার করতে শুরু করেছে জার্মান পুলিশ। জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলো।
৬ এপ্রিল গঠিত হয় জার্মানির নতুন সরকার। পরদিনই জার্মান সরকারের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডব্রিন্ডট বলেছেন, সরকার সীমান্ত পুলিশকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং আশ্রয়প্রার্থীসহ অনথিভুক্ত অভিবাসীদের প্রত্যাখ্যানে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সন্তানসম্ভবা নারী এবং শিশুসহ ‘দুর্বল মানুষদের’ ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা শিথিল থাকবে।
একদিনের ব্যবধানেই নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামের সঙ্গে থাকা সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে জার্মান পুলিশ। দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য বাভারিয়ার ফেডারেল পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেছেন, অস্ট্রিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে থাকা সীমান্তেও তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে।
জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ-কে তিনি বলেছেন, সীমান্ত পারাপার ‘‘যতটা সম্ভব কম বিঘ্নিত হয়, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি আমরা।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘তবে আমরা তল্লাশি আরো জোরদার করেছি এবং ভ্রমণকারীদের অবশ্যই এর মুখোমুখি হতে হবে।’’
অস্ট্রিয়ার সালৎসবুর্গ এবং জার্মান শহর ফ্রাইলাসিংকে সংযোগকারী ছোট্ট সড়কেও একটি তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে জার্মান পুলিশ।
পশ্চিম জার্মান রাজ্য নর্থ রাইন-ওয়েস্টফেলিয়া থেকে ডিপিএ-র একজন সংবাদকর্মী জানিয়েছেন, যতটা কঠোর নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে, ততটা চোখে পড়েনি।
পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘যদি আপনি আমাদের দেখতে না পান, তবে এটি ভালো৷ কারণ তাহলে আমরা যাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, তারাও আমাদের দেখতে পাবেন না।’’
৮ এপ্রিল পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেছেন, নতুন নীতির অধীনে কোনো আশ্রয়প্রার্থীকে সীমান্তে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে কিনা তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
উদ্বিগ্ন প্রতিবেশী দেশগুলো
এদিন ইউরোপীয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে জার্মানির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অস্ট্রিয়া৷ জার্মানির এমন সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে প্রতিবেশী অন্যান্য দেশগুলোও৷ সমালোচকেরা বলছেন, এই নীতি ইইউ আইনের পরিপন্থি৷
অভিবাসন সংক্রান্ত কঠোর নীতির প্রতি সমর্থন জানালেও জার্মানির নতুন সরকারকে ইইউ আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে সতর্ক করেছে অস্ট্রিয়া৷ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ‘‘অস্ট্রিয়া সাধারণত চোরাচালান, মাফিয়া এবং অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জার্মানির প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানায়৷’’
এতে আরো বলা হয়েছে, ‘‘আমরা আশা করছি, জার্মান কর্তৃপক্ষের নেয়া সব পদক্ষেপ ইউরোপীয় আইন মেনে চলবে৷’’
জার্মানির নতুন সরকারের এই পদক্ষেপে বিরক্তি জানিয়েছে প্রতিবেশী দেশ সুইজারল্যান্ড৷ আক্ষেপ প্রকাশ করে সুইজারল্যান্ড জানিয়েছে, নতুন ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে জার্মানি কোনো আলোচনা, পরামর্শ করেনি৷
সুইস ফেডারেল ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস অ্যান্ড পুলিশ তাদের ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ‘‘সুইজারল্যান্ডের দৃষ্টিকোণ থেকে সীমান্তে পদ্ধতিগতভাবে পুশব্যাক বর্তমান আইনের লঙ্ঘন৷’’
এতে আরো বলা হয়েছে, ‘‘জার্মানি কোনো পরামর্শ ছাড়াই এই ব্যবস্থা নিয়েছে৷ এতে সুইজারল্যান্ড ব্যথিত হয়েছে৷’’
জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেননি ম্যার্ৎস
অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরপরই গুঞ্জন উঠে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে যাচ্ছে চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস৷ এমন দাবি, প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার৷
সরকারের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা ডিপিএ-কে জানিয়েছেন, ‘‘চ্যান্সেলর জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন না৷’’
জার্মান দৈনিক ডি ভেল্ট জানিয়েছে, দেশটির নতুন সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্যকারিতা সম্পর্কিত চুক্তির ৭২ অনুচ্ছেদ সক্রিয় করতে চায়৷ জার্মানির প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের বিষয়টি অবহিত করা হবে৷ এই অনুচ্ছেদে মূলত আইন প্রয়োগ এবং নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জাতীয় সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের অধিকার দেয়া হয়েছে৷
এই অনুচ্ছেদে একটি তথাকথিত জরুরি ধারা রয়েছে৷ এর মাধ্যমে, জনশৃঙ্খলা বা জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে সীমান্তে প্রত্যাখ্যান নিষেধাজ্ঞার ব্যতিক্রম সম্ভব৷
মাইক্রো ব্লগিং সাইট ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ তবে, বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদারে আগের পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে তাদের অবহিত করতেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷
এতে আরো বলা হয়েছে, ‘‘এই বৈঠকে যে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, সেটা হলো পারস্পরিক অংশীদারত্বের মনোভাব নিয়ে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাব৷’’
কমছে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা
এপ্রিলেও আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা কমেছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে ফেডারেল অফিস ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজিস৷ সংস্থাটি বলেছে, গত মাসে নয় হাজার ১০৮ জন প্রথমবারের মতো আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন৷ ২০২৪ সালের এপ্রিলে সংখ্যাটি ছিল ১৭ হাজার পাঁচশো৷
তবে, মার্চের তুলনায় এপ্রিলে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা এক দশমিক চার শতাংশ বেড়েছে বলেও জানানো হয়েছে৷
মন্তব্য করুন