বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

ইউক্রেনের সঙ্গে ‘সরাসরি আলোচনা’ করার প্রস্তাব রাশিয়ার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১১ মে ২০২৫, ১৫:২০

ইউক্রেনের সঙ্গে ফের ‘সরাসরি আলোচনা’ শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কোনো শর্ত ছাড়াই আগামী ১৫ মে তুরস্কের ইস্তানবুলে তিনি এই বৈঠক করতে চাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। 

এমন এক সময় তিনি এই প্রস্তাব দিয়েছেন, যখন রাশিয়াকে নিঃশর্তভাবে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন ও তার মিত্র দেশগুলো। এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে আরও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে মস্কো বলেও হুঁশিয়ারে দেন তারা। যদিও তাদের এই আল্টিমেটাম প্রত্যাখ্যান করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর ২০২২ সালের মার্চে ইস্তানবুলে হওয়া অসফল বৈঠকের উদহারণ টেনে সেই আলোচনাই ফের শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। রবিবার (১১ মে) টেলিভিশনে দেওয়া এক বিরল বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘স্থায়ী ও ফলপ্রসূ শান্তির দিকে এগিয়ে যেতে আন্তরিক আলোচনা করতে চাচ্ছে রাশিয়া।’

ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চলাকালীন একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে একমত হওয়ার বিষয়টিও উড়িয়ে দেননি তিনি। এরআগে শনিবার ইউরোপের শক্তিধর চার দেশ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘মস্কো যদি নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হয়, তাহলে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।’

ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও পোল্যান্ডের নেতারা বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থিত তাদের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সোমবার থেকে শুরু হবে। এরআগে এ বিষয়ে ট্রাম্পকে অবগত করা হয়েছে।’

এরআগে ‘খুবই উচ্চ পর্যায়ের’ বৈঠকের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘তিনবছর ধরে চলা এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধে তারা একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছেন।’
 
এদিকে, শান্তি আলোচনায় প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে শর্ত দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা তখনই হবে, যখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।’

মস্কোর প্রস্তাব

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়া বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে বলে দাবি করেন পুতিন। যার মধ্যে রয়েছে—জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা বন্ধ রাখা, যাতে ইউক্রেনও রাজি হয়েছে; ইস্টার সানডেতে ত্রিশ-ঘণ্টার একতরফা অস্ত্রবিরতি; এছাড়াও গেল ৮ থেকে ১০ মে দুদিনের একতরফা অস্ত্রবিরতি।

ইউক্রেন বারবার এসব পদক্ষেপ ব্যর্থ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। বিপরীতে রাশিয়া নিজেই এসব অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করেছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।

গেল মার্চে, ত্রিশ দিনে সীমিত একটি অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যাতে রাজি হয়েছিল ইউক্রেন। কিন্তু নিজস্ব শর্ত জুড়ে দিয়ে তা আটকে দিয়েছিল রাশিয়া।

রবিবার পুতিন বলেন, ‘ক্রেমলিনের এমন একটি যুদ্ধবিরতি দরকার, যা তাদের একটি স্থায়ী শান্তির দিকে নিয়ে যাবে। তারা এমন যুদ্ধবিরতি চায় না, যাতে ইউক্রেন নতুন করে অস্ত্র মজুত ও সামরিক বাহিনীতে নতুন জনশক্তি নিয়োগের সুযোগ পায়।’

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে কথা বলে আগামী ১৫ মে শান্তি আলোচনার আয়োজনের অনুরোধ করবেন বলেও জানান পুতিন।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বৈঠকের আয়োজন করেছিল তুরস্ক, যদিও তা সফল হয়নি। প্রস্তাবিত চুক্তিতে ইউক্রেনের ‘নিরপেক্ষ মর্যাদা, দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর আকার কতটা হবে, সেই সীমা আরোপ করে দেওয়ার কথা ছিল। পাশাপাশি রাশিয়া অধিকৃত অঞ্চলগুলোর মর্যাদা নিয়ে আলোচনা বিলম্বিত করা হয়েছিল।

সেই আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোকে দায়ী করে রাশিয়া। পুতিন বলেন, ‘যারা সত্যিই শান্তি চাচ্ছেন, ফের শান্তি আলোচনা শুরুর প্রস্তাব নাকচ করে দিতে পারেন না তারা।’

খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংকেত

শনিবার ইউরোপীয় নেতাদের পাশাপাশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। চার ইউরোপীয় দেশের নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠককে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংকেত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।

জেলেনস্কির সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা এক যৌথ বিবৃতিতে সোমবার থেকে পরবর্তী ত্রিশ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন তারা। যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক উদ্যোগের সুযোগ তৈরি করার উদ্দেশ্যে তারা এই প্রস্তাব দিয়েছেন বলে দাবি করেন। 

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেন, ‘ইউরোপীয় দেশগুলোর সহায়তায় প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের নেতৃত্ব দেবে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া যদি এই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে, তাহলে তাদেরকে ইউরোপ ও আমেরিকার ব্যাপক সমন্বিত নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে।’

মন্তব্য করুন