ভূমধ্যসাগরের ভালো আবহাওয়ার সুযোগে গত পাঁচ দিনে নতুন করে এক হাজার ৬১২ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ইটালির লাম্পেদুসায় পৌঁছেছেন৷ ইইউ সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্স জানিয়েছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভূমধ্যসাগর হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রযাত্রা বেড়েছে৷
এপ্রিলের শেষে এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে ইইউ সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্স৷
ইউরোপীয় সীমান্তরক্ষী সংস্থা জানায়, ‘‘আবহাওয়ার উন্নতির কারণে আমরা সাম্প্রতিক সময়ে ভূমধ্যসাগরে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারের সংখ্যা বেড়ে যেতে দেখছি৷’’
তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ইটালি, লিথুয়ানিয়া এবং ডেনমার্কের কয়েকটি উদ্ধারকারী নৌকা পাঁচটি ছোট নৌকা থেকে প্রায় ৪০০ জনকে উদ্ধার করেছে৷ এসব নৌযান সমুদ্রে চলাচলের অনুপযুক্ত ছিল৷
এছাড়া, ফ্রন্টেক্সের নজরদারি বিমানের সহায়তায় আরো সাতটি নৌকা থেকে ৪৫০ জনেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়েছে৷
সবমিলিয়ে, ২৬ থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এক হাজার ৬১২ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী লাম্পেদুসায় পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছে ইটালি৷
ইটালির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল জুড়ে মোট ছয় হাজার ৩০০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী দ্বীপটিতে পৌঁছেছেন৷ শুধু ৬ এপ্রিলই এসেছে ৮৯৯ জন৷
এই সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি৷ ২০২৪ সালের এপ্রিলে চার হাজার ৭০০ জন এসেছিলেন৷
ফ্রন্টেক্সের বিতর্কিত ভূমিকা
সাধারণত, ফ্রন্টেক্স ভূমধ্যসাগরের মধ্যাঞ্চলে উদ্ধার অভিযান সংক্রান্ত তথ্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে সহযোগিতা করে থাকে৷ এর মধ্যে রয়েছে মাল্টা, ইটালি, লিবিয়া ও টিউনিশিয়া কর্তৃপক্ষ৷
তবে সংস্থাটির সমালোচকেরা বলছেন, ফ্রন্টেক্স মানবিক অভিবাসন সংগঠনগুলো এবং এনজিওগুলোর সঙ্গে আলাপের বদলে লিবীয় উপকূলরক্ষীদের সঙ্গে বেশি যোগাযোগ করে৷
২০২৪ সালের একটি তদন্তে দেখা গেছে, ফ্রন্টেক্স প্রায় নিয়মিতভাবেই নৌকাগুলোর অবস্থান লিবিয়া কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়, যেখানে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যাত্রা আটকে দেয়ার পর নির্যাতনের মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে৷
২০২৪ সালের জুনে রিফিউজিস ইন লিবিয়া ও ফ্রন্ট-লেক্স নামের দুটি সংস্থা ইইউ সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়৷ তাদের অভিযোগ, সংস্থাটি লিবিয়াকে তথ্য দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনে সহায়তা করছে৷
এ প্রসঙ্গে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে ফ্রন্টেক্স জানিয়েছে, ‘‘আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে জীবন রক্ষা করা৷ ফলে, নৌকাগুলোর অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উপকূলীয় কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিক জানানো হয়।”
ভূমধ্যসাগরের মধ্যাঞ্চল বা সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী অভিবাসন রুট বলা হয়ে থাকে৷
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার জনের বেশি মানুষ এখানে প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত তিন হাজার ৫০০ জন শিশু, অর্থাৎ গত দশ বছরে প্রতিদিন গড়ে একজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে৷
মন্তব্য করুন