ভেনিসে মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি নামাজের স্থান ‘মসজিদুল ইত্তেহাদ’ স্থানীয় নগর কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেয়।
নগর কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্তর প্রতিবাদে ইত্তেহাদ কর্তৃপক্ষ ভেনিসের একটি পার্কে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করেন, একই সাথে আইনি লড়াই অব্যাহত রাখেন।
মসজিদ বন্ধের কার্যক্রম শুরু হয় মূলত ৩ বছর আগে, মসজিদুল ইত্তেহাদ প্রতিষ্ঠার সূচনা থেকে। স্থানীয় একটি সাবেক সুপার মার্কেট ভাড়া নিয়ে, সংস্কার করে ইত্তেহাদ কর্তৃপক্ষ একটি নামাজের স্থান তৈরি করেন। তখন নগর কর্তৃপক্ষ একটি আইন দেখিয়ে বলে, শহরের ভেতরে নামাজের স্থান করা যাবে না। করতে হবে লোকালয়ের বাইরে। ইত্তিহাদ কর্তৃপক্ষ ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, মুসলমানরা দিনে পাঁচবার মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করে। শহরের বাইরে মসজিদ হলে- তা কোনভাবেই সম্ভব নয়। এটা সরাসরি নাগরিকের ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা। মানবাধিকার লঙ্ঘন করা।
তখন মসজিদুল ইত্তিহাদ কর্তৃপক্ষ নগর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করেন। নিম্ন আদালত তাদের মামলার বিপক্ষে রায় দেয়। এরপর তারা ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। গত তিন মাস আগে আপিলটি খারিজ করে দেয় আদালত।
গত ১৯ তারিখ আপিল খারিজের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালত কাসাসিওনে ফের আপিল করেছেন ইত্তেহাদ কর্তৃপক্ষ। তারা আশা করছেন, এবার ন্যায় বিচার পাবেন। আপিলটি কাসাসিওন কোর্টে নথিভুক্ত হয়েছে নং ১২৬৯০/২০২৫ হিসেবে।
মসজিদ বন্ধের প্রতিবাদে গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ইত্তেহাদ কর্তৃপক্ষ পার্কের খোলা চত্বরে জুমার নামাজ আয়োজন করছেন।
শুক্রবার (২০ জুন) পার্কে আয়োজিত জুমার জামাতে প্রায় এক হাজারের বেশি মুসল্লী অংশগ্রহণ করেন- যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, ধর্মীয় আচার পালনের অধিকার কেবল সাংবিধানিক বিষয় নয়, মানুষের মনের গভীর থেকে উৎসারিত একটি অপ্রতিরোধ্য প্রয়োজন।
ইমাম মাওলানা আরিফ মাহমুদ বলেন, “আমরা ন্যায়বিচারের আশায় ইতালির সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছি। আশা করছি, রায় আমাদের পক্ষে আসবে এবং আমরা পুনরায় আমাদের মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারবো।”
তিনি জানান, ইতোমধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের অনেক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হচ্ছে এবং এই লড়াইয়ে তারা একা নন।
পার্কের নিয়মিত মুসল্লী সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, “শহরে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না- এমন একটি আইন আমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী। প্রশাসনের উচিত মানুষের ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করা।”
ইতালির ভেনেতো অঞ্চলে প্রচলিত একটি আইন অনুসারে, নতুন উপাসনালয় বা মসজিদ শহরের মধ্যে নির্মাণ করা যাবে না; এগুলো নির্মাণ করতে হবে শহরের বাইরে, তথাকথিত F-জোন এ।
মসজিদুল ইত্তেহাদ কর্তৃপক্ষ এই আইনকে মানবতাবিরোধী এবং ইতালির সভ্যতা ও বহুত্ববাদী মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে মনে করেন। তারা এই আইনের পরিবর্তন দাবি করেছেন।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অনেক অধিকারকর্মী বলেছেন, এটি শুধু একটি মসজিদ বন্ধের ঘটনা নয়; এটি একটি বৃহত্তর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে- ইতালির মতো একটি আধুনিক রাষ্ট্রে সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীর অধিকার ও মর্যাদার সুরক্ষা কতোটা বাস্তবায়িত হচ্ছে?
ভেনিস প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি শোহানুর রহমান উজ্জ্বল বলেন, এই প্রতিবাদ শুধু ভেনিসের নয়, বরং ইউরোপের সকল সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীর এক নিঃশব্দ আকাঙ্ক্ষার প্রতিধ্বনি। "আমরা আমাদের প্রার্থনার জন্য সম্মান ও ন্যায়বিচার চাই।"
মন্তব্য করুন