ইসলামের ইতিহাসে কারবালার ঘটনা এক বেদনাবিধুর,স্মরণীয় ও দীপ্তিময় এক অধ্যায়। আর এই অধ্যায়ের কেন্দ্রবিন্দু হলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র,হজরত ইমাম হোসাইন (রাঃ)। আজও তার আত্মত্যাগে মুসলিম হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে সাহস,সত্য এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের দীপ্তশিখা।
মিশরের রাজধানী কায়রোতে রয়েছে এক মহান স্মারক। যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন তার পবিত্র শির মোবারক। এই পবিত্র স্থানটি শুধু ধর্মীয় তাৎপর্যের জন্যই নয়,বরং ইতিহাস,সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার এক মহাকেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।
জানা যায়, ৬১ হিজরির ১০ মহররম, ইরাকের কারবালা প্রান্তরে ফোরাত নদীর তীরে সংঘটিত হয় মানব ইতিহাসের অন্যতম হৃদয়বিদারক ঘটনা। ইয়াজিদের নিযুক্ত গভর্নর উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদের সেনারা ইমাম হোসাইন (রাঃ) এবং তার পরিবার ও অনুসারীদের নির্মমভাবে শহীদ করে।
নরপিশাচ শিমর ইবনে জিলজউশান নিজ হাতে ছুরি চালিয়ে ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর পবিত্র মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে, সেই শির মোবারক এবং পরিবারের নারী ও শিশুদের নিয়ে যায় কুফা ও পরে দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে।
ইয়াজিদ ইমাম হোসাইনের (রাঃ) শির মোবারক দামেস্কের দরজায় ঝুলিয়ে জনগণের মনে ভীতি সঞ্চার করতে চেয়েছিল। কিছুদিন পর সেই শির মোবারক রাখা হয় সালাম নামক একটি রাজকীয় গুদামে। সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শন করা হয়, এবং পরে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী ফিলিস্তিনের আসকালান শহরে তা দাফন করা হয়।
প্রচলিত বর্ণনা অনুযায়ী, ইয়াজিদের নির্দেশে পবিত্র শির মোবারক গোলাপজল দিয়ে ধুঁয়ে কাফন পরানো হয়। আসকালানের কিছু বিশ্বস্ত মুসলিম তখন দাফনের অনুমতি চাইলে রাজ দরবার তা মঞ্জুর করে। তারা পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে দাফন করেন।
ক্রুসেড হুমকি ও শির মোবারক মিশরে আগমন
৫৪৯ হিজরিতে ক্রুসেডারদের আগ্রাসনে যখন আসকালান শহর হুমকির মুখে পড়ে, গুজব ওঠে। তারা ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর শির মোবারক উত্তোলন করতে চায়। তখন মিশরের ফাতেমীয় খলিফা এ সংকট মোকাবেলায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেন। উজিরের পরামর্শে সিদ্ধান্ত হয। পবিত্র শির মোবারককে নিরাপদ আশ্রয়ে,মিশরে স্থানান্তর করা হবে।
ফাতেমী আমীর কায়েদুল জুয়ুস বদরুদ্দিন, এক বিশাল কাফেলার মাধ্যমে ৮ জমাদিউল আখর ৫৪৮ হিজরিতে আসকালান থেকে শির মোবারক ১০ জমাদিউল আখর, মঙ্গলবার পূর্ণ মর্যাদার সঙ্গে তা কায়রোতে নিয়ে আসেন।
মিশরের আমীর সাইফ তা গ্রহণ করেন এবং লাখো মানুষ পথে দাঁড়িয়ে,জুতা খুলে,ফুল হাতে ইমামের শির মোবারককে স্বাগত জানায়। সেদিন কায়রোর আকাশ-বাতাস আবেগে,ভালোবাসায় ও ভক্তিতে পূর্ণ হয়ে ওঠে।
ইতিহাসবিদ মাকিরজির বর্ণনায় জানা যায়, সোনারুপা খচিত যে,সবুজ সিন্দুকে শির মোবারক রাখা হয়েছিল। সেটি আজও কায়রোর ইসলামিক জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
মন্তব্য করুন