১৯৭৮ সালে পূর্ব লন্ডনের হ্যাকনিতে বর্ণবাদী হামলায় নিহত ইসহাক আলীর স্মরণে এক হৃদয়বিদারক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ভ্যালেন্স রোডের পিওর চা সেমিনার কক্ষে। আলতাব আলী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয় ইসহাক আলীর ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকীর প্রাক্কালে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন নূরউদ্দিন আহমেদ এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আনসার আহমেদ উল্লাহ। স্মরণসভায় ইসহাক আলীর পরিবার, বর্ণবাদবিরোধী সংগঠক, যুব নেতৃবৃন্দ ও কমিউনিটির সদস্যরা অংশ নেন এবং তাঁর জীবন ও সংগ্রামের স্মৃতিচারণ করেন।
আনসার আহমেদ উল্লাহ ২৬ জুন ১৯৭৮ সালের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ৪৫ বছর বয়সী ইসহাক আলী এবং ২০ বছর বয়সী ফারুক উদ্দিন হ্যাকনির উরসউইক রোডে আলীর বাড়ির কাছে তিনজন শ্বেতাঙ্গ যুবকের হামলার শিকার হন। তাদের ঘুষি মারা হয় এবং এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুটের ফিতার সাহায্যে শ্বাসরোধের চেষ্টা করা হয়। মারাত্মক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইসহাক আলী হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর মৃত্যুবরণ করেন।
তৎকালীন সময়ে আলীর চাচাতো ভাই সফর উদ্দিন হ্যাকনি গেজেট-এ বলেছিলেন, “ওনার গায়ের রঙের জন্যই তাকে মারা হয়েছে। কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। ইস্ট এন্ডে এটা সবসময়ই ঘটে।” কমিউনিটি কর্মী অলোক বিশ্বাস জানান, হামলাকারীরা বর্ণবাদী ভাষা ব্যবহার করে আক্রমণ চালায়।
স্মরণসভায় ইসহাক আলীর শ্যালক জাহাঙ্গীর খান বলেন, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মোরিয়া ইউনিয়নের ফেন গ্রামে জন্মগ্রহণকারী ইসহাক আলী ছিলেন অমায়িক, রসিক এবং বন্ধুবৎসল মানুষ। তিনি পূর্ব লন্ডনের হলওয়ে রোডে একটি রেস্তোরাঁ এবং হ্যাকনিতে একটি পোশাক কারখানার মালিক ছিলেন।
বক্তব্য দেন আলতাব আলী ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা আকিকুর রহমান, ট্রাস্টের রফিক উল্লাহ, বাংলাদেশ ইয়ুথ ফ্রন্টের জামাল মিয়া, জয়নাল চৌধুরী, আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশ ইয়ুথ মুভমেন্টের চুনু মিয়া, কমিউনিটি নেতা আব্দুল মালিক খুকন, অভিনেতা স্বাধীন খসরু, সহকারী সম্পাদক জামাল খান, স্বাধীনতা ট্রাস্টের চেয়ারপারসন জুলি বেগম, বাংলাদেশ ইয়ুথ লীগের সেলিম উল্লাহ, সাংবাদিক শাহ মুস্তাফিজুর রহমান বেলাল, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাজিদুর রহমান এবং ইসহাক আলীর পুত্র শুহেল আহমেদ ও পুত্রবধূ হাসিনা আহমেদ। এছাড়া বক্তব্য রাখেন প্রগ্রেসিভ ইয়ুথ অর্গানাইজেশনের শুভামতিন ও খালিক আহমেদ।
অনুষ্ঠানে ১৯৭৮ সালের পর ইসহাক আলীর মৃত্যু নিয়ে গঠিত হ্যাকনি ও টাওয়ার হ্যামলেটস ডিফেন্স কমিটির সদস্য অলোক বিশ্বাস, ভজন চ্যাটার্জী ও প্যাট্রিক কোডিকার প্রতিও শ্রদ্ধা জানানো হয়।
বক্তারা ইসহাক আলীর স্মৃতি রক্ষায় স্বাধীনতা ট্রাস্টের সহযোগিতায় একটি স্মারক পুস্তিকা প্রকাশ এবং প্রতিবছর মৃত্যুবার্ষিকী পালনের প্রস্তাব করেন।
উল্লেখযোগ্য যে, ইসহাক আলী বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে আসেন তাঁর মৃত্যুর নয় বছর আগে। তাঁর হত্যাকাণ্ডের জন্য তিন কিশোরকে আটক করা হয়—কেনটিশ টাউন রোডের ১৭ বছর বয়সী এক যুবক এবং হোমারটনের ১৬ বছর বয়সী দুই কিশোর। ১৯৭৯ সালে তাদের সবাইকে খুন নয় বরং ছিনতাইয়ের অভিযোগে মাত্র ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের শেষে হাফিজ মোঃ জিল্লু খানের নেতৃত্বে ইসহাক আলীর আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য করুন