বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই রাজবাড়ীর দৌলতিদয়া ফেরিঘাট এলাকায় নদীর পাড় ধসে যেতে শুরু করেছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে ৭ নম্বর ফেরিঘাট। ফেরি ভেড়া ও ছেড়ে যাওয়ার সময় নৌযানটির পাখার ঘুর্ণিপাকে এই ভাঙন আরও তীব্র হচ্ছে।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ফেরিঘাটসহ দৌলতদিয়ার নদীপাড়ের বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে। এ বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার পদ্মায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি বাড়ার সঙ্গে ফেরিঘাট এলাকায় নদীর পাড় ধসে পড়ছে। বিশেষ করে ৭ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুন থেকে পাশের ৬ নম্বর ঘাটের আগ পর্যন্ত এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ফেরিঘাটসহ স্থানীয় শাহাদত মেম্বার পাড়া ও ফেরিঘাটের ভাটিতে বাহির চর ছাত্তার মেম্বার পাড়া ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।
ভাঙন নিয়ে ইতোমধ্যে দুশ্চিন্তা ভর করছে ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দাদের। ভাঙন নিয়ে অনেকের মাঝে ক্ষোভও রয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন দেখা দেয়। বিলীন হয়ে যায় বসতবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। অথচ কর্তৃপক্ষ আগাম ব্যবস্থা হিসেবে শুষ্ক মৌসুমে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ।
৬ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা মুদি দোকানি বারেক মৃধা আক্ষেপ করে বলেন, ‘তিন বার নদী ভাঙনে সব হারিয়ে প্রায় ১৫ বছর ধরে ৬ নম্বর ঘাটে বাস করছি। নদীর পাড় তখনও ছিল প্রায় এক কিলোমিটার দূরে, ভাঙতে ভাঙতে এখন তা ঘরের কোণায় এসে ঠেকেছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর ভাঙনে বাড়িঘর, দোকানপাট বিলীন হতে থাকে। প্রশাসনসহ সবাই তখন দৌড় ঝাপ শুরু করে। স্থানীয়দের অনেকে প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বালুর বস্তা ফেলতে থাকে। পানির নিচে কী ফেলছে কেউ তো বোঝে না। এ সময় অনেকের ভালো ব্যবসা হয়। শুষ্ক মৌসুমে ভাঙন ঠেকাতে অনেক অনুরোধ করেছি, কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনেনি।’
বাহির চর ছাত্তার মেম্বার পাড়ার বাসিন্দা ও বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা সেলিম খান বলেন, ‘পদ্মার ভাঙনে ১৫ বছরে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের অর্ধেকের বেশি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। মানচিত্র থেকে দৌলতদিয়ার প্রায় অর্ধেক হারিয়ে গেছে। আমরা প্রতি বছর রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কাছে বারবার নদী শাসনের দাবি জানিয়েছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত জোরালো কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি।’
এদিকে, ফেরিঘাটের পাশাপাশি লঞ্চঘাটও ভাঙন-ঝুঁকিতে আছে। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের মালিক সমিতির ব্যবস্থাপক নুরুল আনোয়ার মিলন বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষা এলেই ভাঙন দেখা দেয়। লঞ্চ এলাকাসহ স্থানীয় অনেক বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙন প্রতিরোধে এখনই ব্যবস্থা নিলে হয়তো অনেক কিছুই রক্ষা পেত।’
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা অঞ্চলের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘দৌলতদিয়ার সবকটি ঘাট ভাঙন-ঝুঁকিতে আছে। ৭ নম্বর ফেরিঘাটটি বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে।
দুদিন আগেও রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ঘাট ব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজিত সমন্বয় সভায় বিষয়টি অবগত করা হয়। দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও (পাউবো) চিঠি লিখছি।’
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘ফেরিঘাট রক্ষায় আমাদের যে ধরনের প্রস্তুতি রাখা দরকার তা রয়েছে। বড় ধরনের ভাঙন দেখা দিলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করার পর তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হয়।’
দৌলতদিয়া ঘাট রক্ষায় আগাম প্রস্তুতির বিষয়টিও কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন