লোকজন এখন বেড়ান সারা বছরই। তবে বর্ষার ভ্রমণ একটু আলাদা। এই মরসুমে বৃষ্টির সৌন্দর্য যেমন আছে, তেমনই বর্ষার প্রাবল্য কখনও কখনও হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর।
পাহাড়ি এলাকায় থাকে ধসের ভয়, জোঁকের ভয়। হড়পা বানও হয়ে ওঠে বিপজ্জনক। তার উপর বেড়াতে গিয়ে কাকভেজা হয়ে সর্দি-কাশি বাধালে বিপত্তির শেষ থাকে না।
ঠিক সে কারণেই বর্ষাকালে বেড়াতে যাওয়ার আগে প্রয়োজন সতর্ক হওয়া। উপযুক্ত পরিকল্পনা, বাড়তি সতর্কতা যেমন আচমকা বিপদ এড়াতে সহায়ক হতে পারে, তেমনই বেড়ানো হতে পারে নির্ঝঞ্ঝাট।
কীভাবে করবেন পরিকল্পনা?
বর্ষায় পাহাড়, নদী, ঝর্না দেখতে যাবেন? দু’মাস পরে বেড়ানোর তারিখ। কিন্তু বর্ষার মরসুমে মাস দুই পরে কী পরিস্থিতি থাকবে, কেউ জানেন না। তাই এমন জায়গা বেছে নিন, যে স্থান প্রবল বৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে না। পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রাম, ট্রেক করে বা নদী পেরিয়ে যেতে হয়, এমন জায়গাগুলি বর্ষায় ভ্রমণের তালিকায় না রাখাই ভাল। পাহাড়ে গেলেও, একটু বড় জনপদ, যেখানে আটকে পড়লে কয়েক দিন অন্তত থাকা-খাওয়ার অসুবিধা হবে না, এমন স্থান নির্বাচন করতে পারেন। কিংবা পাহাড় এড়িয়ে ধস নামে না, এমন জায়গা বেছে নিতে পারেন।
আবহাওয়া: ভ্রমণের প্রস্তুতি যত আগেই করুন না কেন, যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকে সেই জায়গার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিন। পাহাড়ি এলাকায় প্রবল বৃষ্টিতে নদী ফুঁসে উঠলে, পাকা সড়কও ভেঙে যেতে পারে। সেই জায়গায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস কী বলছে, রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি কেমন, সে সম্পর্কে জেনে তবেই বেরোনো উচিত। যদি কোনও সতর্কতা জারি থাকে, তা এড়িয়ে যাওয়া কাজের কথা নয়।
প্যাকিং: বর্ষার মরসুমে প্যাকিং কিন্তু ভেবেচিন্তে করতে হবে। এমন পোশাক নিন, যা ভিজে গেলেও চট করে শুকিয়ে যাবে। লিনেন বা নাইলনের জামাকাপড় নিতে পারেন। ব্যাগটিও হওয়া দরকার জলনিরোধী। যাতে ব্যাগ ভিজলেও জিনিসপত্র ভিজে না যায়। সঙ্গে রাখুন বর্ষাতি এবং ছাতা। মোবাইল, চার্জার, ক্যামেরার ব্যাটারি, বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি জিপলকে ভরে রাখুন। জল এবং অতিরিক্ত আর্দ্রতা ক্যামেরার লেন্সের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সে কারণে ক্যামরো রাখতে হবে অত্যন্ত সাবধানে।
পাওয়ার ব্যাঙ্ক: এই জিনিসটি নিতে ভুললে চলবে না। বর্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোনও এলাকা বিদ্যুৎবিহীন থাকতে পারে। বিপদে পড়লে যোগাযোগের জন্য মোবাইলটি কিন্তু কাজে লাগবে। ফলে সঙ্গে পাওয়ার ব্যাঙ্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
জরুরি জিনিস: বর্ষায় নিজের গাড়ি নিয়ে বেরোলে অবশ্যই সঙ্গে মোটা দড়ি, ছুরি, কাঁচি, গাড়ির প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সঙ্গে রাখুন। সচরাচর যা কাজে লাগে না, এমন ছোটখাটো অথচ প্রয়োজনের জিনিস সঙ্গে রেখে দিতে পারেন। কারণ, দুর্যোগের সময় কখন কোনটি কাজে লাগবে, কেউ বলতে পারে না।
গাড়ি: বর্ষায় রাস্তায় জলকাদা হয়ে যায়। ধসও নামতে পারে। ছোট গাড়ি ভাড়া করলে তার সুবিধা, অসুবিধা দেখে নিন। পাহাড়ি অনেক জায়গাতেই বড় গাড়ি ভাড়া করলে সুবিধা হয়। বর্ষার মরসুমে কোনটি নিলে ভাল, বুঝে নিন।
জল, খাবার এবং ওষুধ: বর্ষায় ধস নামলে বা রাস্তা ভেঙে গেলে আটকে পড়তে পারেন যে কোনও স্থানেই। সঙ্গে পানীয় জল, শুকনো খাবার এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ থাকলে কিন্তু লম্বা সময়ও সামাল দেওয়া সম্ভব।
করবেন না কোন কাজ?
· বর্ষায় পেটখারাপের সম্ভবনা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। হাত না ধুয়ে খাওয়া এবং যে কোনও জায়গার জল খেয়ে নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। পরিশুদ্ধ পানীয় জল বা বোতলবন্দি জল কিনে খাওয়া ভাল। রাস্তার খাবারও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা দরকার।
· পাহাড় নয়, শহরাঞ্চলেও বেড়াতে যান লোকে। জল জমলে যাতায়াতে সমস্যা হবে। বাড়তি সময়ও লাগতে পারে। তাই হাতে সময় রেখে বেড়ানোর পরিকল্পনা করুন। বিমান, ট্রেন বা বাস ধরার থাকলে, হাতে সময় নিয়ে বেরোনো জরুরি।
· বর্ষার সময় নদীর স্রোত যেমন বেশি থাকে তেমনই জলপ্রপাতেও জল থাকে অত্যন্ত বেশি। পাহাড়ের ঢালে বা নদীর মধ্যে জেগে থাকা বোল্ডারে দাঁড়িয়ে শখ করে ছবি তুলতে যাওয়ার প্রবণতা বিপজ্জনক হতে পারে। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সেলফির পোজ় দিতে দিয়ে বিপদ যাতে না হয়, সে জন্য সতর্কতা জরুরি।
মন্তব্য করুন