ছেলেবেলায় কাউকে জব্দ করতে হলে অনেকেই রসিকতার ছলে বিছুটি পাতা ব্যবহার করেছেন। পালং, কলমি, নটে শাকের পুষ্টিগুণ নিয়ে কথা হলেও, এই পাতা খাওয়ার কথা এ রাজ্যে কেউ ভাবতে পারেন না। তবে জানলে অবাক হবেন, অনেক জায়গাতেই তরিবত করে বিছুটি পাতা রান্না এবং খাওয়া হয়।
বিছুটি পাতার পরিচয় এ রাজ্যে কিছুটা ভিন্ন। গায়ে লাগলেই চুলকায়। অনেক সময় অবাধ্য ছেলেপুলেকে শাসনের নামে বিছুটি পাতা গায়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হত। তবে জানেন কি, এমন রাজ্যও আছে যেখানে বিছুটি পাতা রীতিমতো তোয়াজ করে রেঁধে তরিবত করে খাওয়া হয়। ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর এটি।
হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড— দুই জায়গাতেই পাহাড়ি ঢালে বুনো পাতা গজায় নিজে থেকেই। সেটাই শাক হিসাবে খাওয়া হয়। শুধু শাক নয়, এই পাতার পুষ্টিগুণ এতটাই যে ইদানীং পানীয় হিসাবে তা খাওয়ার চল হয়েছে। কী ভাবে এই পাতা খাওয়া যায় জানার আগে, জানা দরকার, কেন খাওয়া হয় তা।
অ্যালার্জি থেকে মুক্তি: বিছুটি পাতার গুঁড়ো অ্যালার্জি জনিত সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। ২০১৩ সালে ‘জার্নাল অফ হার্বাল মেডিসিন’-এর গবেষণালব্ধ তথ্যে এমনটাই উঠে এসেছে। চোখের চুলকানি, অ্যালার্জি জনিত হাঁচির মতো সমস্যা দূর করতে এই পাতা কার্যকর।
অস্থিসন্ধির এবং পেশির যত্ন নেয়: ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড এবং পলিফেনল সমৃদ্ধ বিছুটি পাতা অস্থিসন্ধি এবং পেশির প্রদাহ কমাতে সহায়ক। গেঁটে বাত, আর্থ্রাইটিসের রোগীদের পক্ষে উপকারী পাতাটি।
সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এটি, বলছে ২০১৯ সালে ‘ফাইটোথেরাপি রিসার্চ’ নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র। টাইপ ২ ডায়াবিটিসের চিকিৎসতেও এই পাতা কাজে লাগে।
এখানেই গুণের শেষ নয়। গরমে ত্বকের জন্যও ভাল এটি। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। ভিটামিন এ, সি। র্যাশ ও অ্যালার্জির সমস্যাতেও এই পাতা দারুণ কাজ দেয়। এই পাতার তৈরি চা খেলে হজমের গন্ডগোল কমে।
এত যার গুণ, সেই পাতা কী ভাবে খাওয়া যায়?
শাক: হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে বিছুটা খাওয়া হয় শাক হিসেবে। এই গাছের পাতা তুলতে হবে সাবধানে। ডাঁটি নয়, শুধু পাতা ছিঁড়তে হবে। পাতা তোলার সময় হাত চুলকাতে পারে তাই গ্লাভস বা চিমটে ব্যবহার করা যেতে পারে। এক এক জায়গায় এক এক কায়দায় এটি রান্না হয়। বিছুটি গাছের পাতায় যে রোঁয়া থাকে সেটিই জ্বালা বা চুলকানির কারণ। প্রথমে পাতাগুলি আগুনে হালকা সেঁকে নিলে এই সমস্যা হবে না। তার পর পাতাগুলি গরম জলে ভাপিয়ে বেটে নিয়ে হবে। কড়াইয়ে তেলে এবং ঘি মিশিয়ে সেটি গরম করে শুকনো লঙ্কা, সর্ষে, রসুন ফোড়ন দিয়ে স্বাদমতো নুন দিয়ে শাক ভেজে নিলেই হবে।
চা: পুষ্টিগুণের জন্য বিছুটি পাতার চা নিয়েও সমাজমাধ্যমে চর্চা রয়েছে। জলে এই পাতা ফুটিয়ে সেই জলটি ‘চা’ হিসেবে খেতে হবে। স্বাদের জন্য মধু যোগ করা যেতে পারে।
স্যুপ: বিদেশে কোথাও কোথাও বিছুটি পাতার স্যুপ খাওয়া হয়। পাতা ধুয়ে ভাপিয়ে নিয়ে বেটে নিতে হবে। একটি পাত্রে মাখন দিয়ে তাতে পেঁয়াজ কুচি, রসুন পাতা নাড়াচাড়া করে মুরগির মাংস বা সব্জি সেদ্ধ করা জল দিতে হবে। তার মধ্যে দিতে হবে ভাপিয়ে নেওয়া বিছুটি পাতা বাটা। স্বাদমতো নুন, গোলমরিচ দিলেই স্যুপ তৈরি।
মন্তব্য করুন