ইউরোপে প্রবেশের লক্ষ্যে স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জগামী আটলান্টিক রুটে বড় পরিবর্তন এসেছে। সেনেগাল ও মৌরিতানিয়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হওয়ায় এখন অনেক অভিবাসীরা পশ্চিম আফ্রিকার গিনি ও গিনি-বিসাউ থেকে যাত্রা করছেন। ফলে যাত্রাপথ আরও দীর্ঘ ও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
আগে অভিবাসীরা সেনেগাল, মৌরিতানিয়া বা মরক্কো থেকে যাত্রা করতেন। কিন্তু এখন পাচারকারী চক্র তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করেছে। তারা পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনিকে নতুন কেন্দ্রস্থল বানিয়েছে।
এছাড়া আলজেরিয়া হয়ে স্পেনের বালিয়ারিক দ্বীপপুঞ্জে প্রবেশের চেষ্টা করছেন অনেকে।
এই নতুন রুটে সমুদ্র পাড়ি দিতে ১০ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ফলে খাদ্য, পানি, ইঞ্জিন বিকল হওয়া, সূর্যপাতে মৃত্যুর ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে গেছে। ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের সরকারি প্রতিনিধি আনসেলমো পেস্টানা বলেন, “মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে, কারণ তারা নিরাপত্তা ফাঁকি দিতে সমুদ্রের আরো গভীরে যাত্রা করছে।”
মাত্র কিছুদিন আগেই গিনি থেকে রওনা হওয়া একটি নৌকা ক্যানারির লা রেস্তিঙ্গা উপকূলে ডুবে যায়। ওই ঘটনায় চার নারী ও তিন কিশোরী মারা যান।
এনজিও কামিনান্দো ফ্রন্তেরাস জানায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সমুদ্রে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজার ৮৬৫ জন অভিবাসী। এর মধ্যে ক্যানারি রুটেই প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজার ৪৮২ জন। নিখোঁজ নৌকার সংখ্যা ৩৮টি।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম একই সময়ের মধ্যে কেবল ৪০টি মৃত্যুর তথ্য নথিভুক্ত করেছে। কারণ তারা শুধুমাত্র শতভাগ নিশ্চিত হওয়া ঘটনাগুলো গণনায় রাখে।
আইওএম এর মুখপাত্র ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানান, “আমরা শুধুমাত্র নিশ্চিত ঘটনা গণনায় রাখি।” অন্যদিকে, কামিনান্দো ফ্রন্তেরাস অভিবাসীদের ফোন, আত্মীয়স্বজনের খবর এবং হটলাইনের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করে।
তারা বলছে, অনেক সময় সঠিক সময় উদ্ধার ব্যবস্থা না থাকায় নৌকার আরোহীরা প্রাণ হারান। “বিপদ সংকেত দেওয়া হলেও সাড়া দিতে দেরি করা হয় বা সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।”
এনজিওটি বলছে, পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ না থাকায় সমুদ্রে বিপন্ন নৌকাগুলো শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
আগমনের হার কমলেও ঝুঁকি কমেনি
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত স্পেনে পৌঁছেছেন ১৫ হাজার অভিবাসী, যা আগের বছরের তুলনায় ২৭ শতাংশ কম। তবে ফ্রন্টেক্সের মতে, এই সংখ্যা বিপজ্জনক রুটে নতুন রূপান্তরের ইঙ্গিত। আগমন কমলেও চাপে রয়েছে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের শরণার্থী ব্যবস্থা।
আটলান্টিকের ক্যানারি রুট চালু হয় ২০০৫ সালে। ২০০৬ সালে কায়ুকো সংকটকালে প্রায় ৩২ হাজার অভিবাসী এই পথে এসেছিলেন। এরপর কিছু সময় বন্ধ থাকলেও ২০১৮ সালের পর আবারও এই রুটে চাপ বাড়ছে।
আলজেরিয়া রুটও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। সম্প্রতি বালিয়ারিকে বেশ কিছু নৌকায় হাত-পা বাঁধা অভিবাসীদের মরদেহ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, পাচারকারী চক্রের সহিংসতার শিকার হয়ে তারা মারা গেছেন।
মরক্কো উপকূলে নজরদারি, লিবিয়ায় সংঘাত এবং ইউরোপগামী অন্য রুটে কড়াকড়ির কারণে অনেক অভিবাসী ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের ভয়ংকর রুট বেছে নিচ্ছেন।
এনজিওগুলোর আশঙ্কা, সামনের মাসগুলোতে গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই রুটে আগমন আবারও বাড়তে পারে।
নতুন এই গিনি-ভিত্তিক রুট অভিবাসীদের জন্য আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে বলে সতর্ক করেছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য করুন