ইতালির ভেনিসে অনুষ্ঠিত হয়েছে “মর্যাদাপূর্ণ প্রবাস জীবন ও পরকালীন উন্নতি” শীর্ষক এক সেমিনার। শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় মাদরাসাতুল ইত্তিহাদ মিলনায়তনে শতাধিক বাংলাদেশি প্রবাসীর উপস্থিতিতে আয়োজিত এ সেমিনারে বক্তারা বলেন, একজন প্রবাসী কেবল নিজের দেশে অর্থনৈতিক অবদান রাখেন না, নিজের জন্মভূমি ও স্বাগতিক দেশের জন্য তাকে কাজ করতে হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমদ সজল। তিনি বলেন, “প্রবাসীরা শুধু অর্থ পাঠিয়েই দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন না, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটকালেও তারা নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে ভূমিকা রাখেন। বিশেষ করে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ইতালি প্রবাসীরা বিভিন্ন শহরে সভা-সমাবেশ করে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন করেছেন।”
তিনি বলেন, “আজ সময় এসেছে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করার। যেখানে প্রবাসীদের চিন্তা, অভিজ্ঞতা ও নৈতিকতা গড়ে তুলতে পারে একটি আদর্শ সমাজব্যবস্থা।”
অনুষ্ঠানের সভাপতি মাওলানা আরিফ মাহমুদ বলেন, “শুধু দুনিয়ার সফলতার জন্য প্রবাসে থাকা সঠিক নয়, পরকালীন মুক্তির জন্যও চেষ্টা করতে হবে। ইসলামে নিষিদ্ধ কাজ- বিশেষ করে মদ, জুয়া ও সুদের মতো পাপ থেকে বিরত থেকে আত্মাকে পরিশুদ্ধ রাখতে হবে। সুদের প্রতারণামূলক প্রলোভন ও সহজ কিস্তির লোভে আত্মিক ধ্বংস ডেকে আনা যাবে না।”
তিনি আরো বলেন, “মদ মানুষের অন্তত ৫ শতাংশ জটিল রোগের কারণ। মদ মানুষের আত্মমর্যাদা ধ্বংস করে, পরিবার ভাঙে, দুর্ঘটনা বাড়ায় এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
মাওলানা আরিফ বলেন, মুসলিম পিতা-মাতার দায়িত্ব সন্তানের মুখে হালাল খাবার তুলে দেয়া, পরিশুদ্ধ জীবন শিক্ষা দেয়া।”
বিশেষ অতিথি ডাক্তার সাজ্জাদ তিশাদ বলেন, “অনেক অভিবাসী কাজের সময় সেফটি সরঞ্জাম ব্যবহার করেন না। মালিক পক্ষও দায়িত্বহীন আচরণ করে। কর্মস্থলে দুর্ঘটনার ঘটলে অনেকেই হাসপাতালে যান না, আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দাবি করেন না, যার ফলে পরবর্তীতে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।”
তরুণ গবেষক আবদুল্লাহ সম্রাট বলেন, “ইতালির শিক্ষা ব্যবস্থা অভিভাবকদের সক্রিয় ভূমিকা ছাড়া সন্তানের নৈতিক ভবিষ্যৎ গড়তে পারবে না। এই সিস্টেম শিক্ষিত শ্রমিক তৈরি করে, নৈতিক মানুষ নয়। এজন্য পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে নৈতিক শিক্ষা।”
ইতালীয় নাগরিক সেবা ও কমার্শিয়াল অ্যাসিস্টেন্ট কামরুল হাছান বলেন, “প্রবাসে সাফল্য পেতে হলে নিজেকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। আইন-কানুন জানতে হবে, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। ইতিহাস বলে, মুসলিম অভিবাসীরা কোনোদিনই সমাজের বোঝা হননি। বরং জ্ঞান ও নৈতিকতা দিয়ে তারা আলোকিত সমাজ গড়েছেন।”
আয়োজকেরা জানান, অভিবাসীদের মাঝে নৈতিকতা, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও শিক্ষাবিষয়ক ধারণা ছড়িয়ে দিতে এ ধরনের সেমিনারের আয়োজন নিয়মিত করা হবে।
মন্তব্য করুন