উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার বেনগাজির একটি বন্দিশালায় আটক থাকা ১৫০ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। বুধবার (২৮ মে) সকালে তারা ঢাকায় পৌঁছেছেন বলে জানা গেছে।
লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সহযোগিতায় মঙ্গলবার (২৭ মে) এসব বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
লিবিয়ার বেনিনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বুরাক এয়ারের একটি ফ্লাইটে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ ফ্লাইটটি বুধবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দের পৌঁছেছে৷ ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে বিষয়টি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
দূতাবাস জানিয়েছেন, দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম)-এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশি অভিবাসীদের বেনগাজির গানফুদা আটককেন্দ্র থেকে গ্রহণ করেন৷ পরে, বেনিনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
লিবিয়া বিভিন্ন আটককেন্দ্রে আটকেপড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে দেশে ফেরত পাঠাতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
এর আগে দূতাবাসের প্রতিনিধি দল গানফুদা ডিটেনশন সেন্টার পরিদর্শন করে আটক বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ তাদের সঙ্গে আলাপের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে দেশে ফিরতে চাওয়া বাংলাদেশিদের জন্য ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করা হয়।
লিবিয়ার কর্তৃপক্ষের অনুমতি এবং আইওএম-এর সার্বিক সহযোগিতায় এসব বাংলাদেশিকে বিনা খরচে দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে দূতাবাস।
লিবিয়াতে অনিয়মিত অবস্থায় এবং বিভিন্ন আটককেন্দ্র বন্দিরত বাংলাদেশিদের উদ্ধারের মাধ্যমে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করছে স্থানীয় বাংলাদেশ দূতাবাস।
তারই ধারাবাহিকতায় জুনেও লিবিয়া থেকে তিনটি প্রত্যাবাসন ফ্লাইট পরিচালনার কথা ভাবা হচ্ছে৷ এই তিনটি ফ্লাইট যোগে অন্তত পাঁচশ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে বলেও জানিয়েছে দূতাবাস।
এদের মধ্যে রয়েছে ত্রিপোলি ও মিসরাতায় আটকেপড়া অন্তত ২৫০ জন বাংলাদেশি৷ তাদের সবার জন্য ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করা হয়েছে এবং অনেকে নতুন করে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন৷ এছাড়াও লিবিয়ার তাজুরা আটককেন্দ্রে বন্দি বাংলাদেশিদেরও ওই তিনটি ফ্লাইটে করে দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
সহজ হচ্ছে বহির্গমন ছাড়পত্র
গত ২৫ মে লিবিয়ার ত্রিপোলিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল ওয়াহেদ আব্দুল সামাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার৷ এসময় মন্ত্রণালয়ের অর্গানাইজেশন বিভাগের পরিচালক এবং দূতাবাসের মিনিস্টার (শ্রম) উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে লিবিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের সার্বিক কল্যাণ এবং স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে চাওয়া বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট ও ট্রাভেল পারমিটে (আউটপাস) বহির্গমন ছাড়পত্র (খুরুজ) দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ দূতাবাস জানিয়েছে, এই ইস্যুতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
এছাড়াও লিবিয়ার বিভিন্ন আটককেন্দ্রে বন্দি থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে দ্রুত দেখা করার সুযোগ এবং তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াকে সহজ করতেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চান রাষ্ট্রদূত।
ত্রিপোলিতে চলমান অস্থিরতার মধ্যে আবুসেলিমসহ বৃহত্তর ত্রিপোলিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান।
লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জানান, স্বেচ্ছাপ্রত্যাবর্তন কর্মসূচির আওতায় অভিবাসীদের প্রশাসনিক ও লজিস্টিক সমস্যা দূর করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
তিনি আইওএম, দূতাবাস এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে নতুন পাসপোর্ট ও আউটপাস বহনকারী বাংলাদেশি অভিবাসীদের বহির্গমন ছাড়পত্র পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন তারা।
মন্তব্য করুন