বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ আর্কিটেকচার প্রদর্শনী শুরু হয়েছে ইতালির ভেনিসে। ভেনিস বিয়েন্নালে নামে পরিচিত এই প্রদর্শনী হয় প্রতি দু’বছরে একবার। এ বছরের প্রদর্শনীতে সরব উপস্থিতি দেখা যায় ভবিষ্যতের নির্মাণ ভাবনার।
বিয়েন্নালের দুই প্রধান ভেন্যু-জারদিনি ও আরসেনালেসহ গোটা শহর জুড়ে ছড়িয়ে আছে ৬৬টি দেশের প্যাভিলিয়ন। হাজারো দর্শকের ভিড়ে স্থান পেয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর টেকসই বাসস্থান ও জলবায়ু সচেতন ডিজাইনের ধারণা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিক হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়ে আমি ঘুরে দেখি- বৃটেন, ডেনমার্ক, স্পেন, হাঙ্গেরি, জাপান, ফিনল্যান্ড, ওম্যানসহ অনেকগুলো দেশের প্যাভিলিয়ন। প্রতিটি প্যাভিলিয়নে উঠে এসেছে জলবায়ুর পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে টিকে থাকার পরিকল্পনা।
ভেনিসের খালের পানি পরিশোধন করে তা দিয়ে বানানো কফি পরিবেশন করা হয় আরসেনালের ভেন্যুতে। অনেকের সাথে আমিও এই অভিনব প্রযুক্তি দিয়ে বানানো কফি উপভোগ করি।
এ বছর স্থাপত্য বিয়েন্নালের একটি ব্যতিক্রমী দিক হলো- বাংলাদেশের প্রভাব। ইতালীয় অধ্যাপক এলিজা বেরতুচ্ছো- বাংলাদেশের প্রতি তার ভালোবাসা ও গবেষণার স্মৃতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, ইতালিতে এখন বহু প্রবাসী বাংলাদেশি কৃষিজমিতে লাউ, শিম, করলাসহ নানা দেশি সবজি চাষ করছেন, যা একসময় ছিল কেবল শখের ব্যাপার, এখন তা বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। এলিজার এই গবেষণাভিত্তিক প্রজেক্ট বিয়েন্নালে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
আরসেনালের প্রধান ভেন্যুতে বাংলাদেশের স্থপতি মারিনা তাবাচ্চুমের একটি প্রজেক্ট সবার দৃষ্টি কেড়েছে। তার উপস্থাপনায় উঠে এসেছে জলবায়ুর বিপর্যয় মোকাবিলায় টেকসই, পরিবেশবান্ধব গৃহনির্মাণের সম্ভাবনা। বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবিলার বাস্তব অভিজ্ঞতা তার পরিকল্পনায় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
আজ ১০ মে থেকে শুরু হওয়া এই আন্তর্জাতিক স্থাপত্য প্রদর্শনী চলবে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত। জারদিনি এবং আরসেনালের প্রধান ভেন্যুতে প্রবেশ করতে টিকেট দারকার হলেও- অনেক দেশের প্যাভিলিয়ন আছে, যেগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। শুধু একটু সময় নিয়ে খুজে নিতে হবে।
ভেনিসের এই আন্তর্জাতিক আয়োজনে বাংলাদেশি ভাবনা ও অভিজ্ঞতা বিশ্বমঞ্চে আলোচনায় এসেছে, যা নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়। স্থাপত্যের ভুবনে বৈশ্বিক ভবিষ্যতের ছক আঁকার এই উৎসবে বাংলাদেশি স্থপত্যর অংশগ্রহণ এক নতুন আশা জাগিয়েছে।
মন্তব্য করুন