বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট রাজনীতিক ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একনিষ্ঠ সৈনিক অ্যাডভোকেট শাহ মোদাব্বির আলীর স্মরণে এক হৃদয়স্পর্শী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে পূর্ব লন্ডনের কর্মাশিয়াল রোডের এন্টারপ্রাইজ একাডেমির হলরুমে।
সোমবার সন্ধ্যায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে আগত বিপুল সংখ্যক সুধীজন ও রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান এবং সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন আবদুল আহাদ চৌধুরী ও জামাল আহমদ খান।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রবাসকল্যাণ ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন, ফয়জুর রহমান খান, আওয়ামী লীগ নেতা জালাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকসহ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা জিল্লুর খান। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, বঙ্গবন্ধু এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এডভোকেট শাহ ফারুক আহমেদের স্বাগত বক্তব্যের পর, প্রয়াত শাহ মোদাব্বির আলীর কর্মময় জীবন ও অবদান নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। তাঁর জীবনের নানা অনবদ্য দিক উঠে আসে এতে, যা দেখে অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
বক্তারা বলেন, শাহ মোদাব্বির আলী ছিলেন একজন নির্লোভ ও নির্মোহ রাজনীতিক। তিনি বৃহত্তর সিলেট জেলার শীর্ষ নেতাদের একজন হওয়া সত্ত্বেও কখনোই ব্যক্তিগত স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। শিক্ষকতা, আইন পেশা, রাজনীতি ও সাংবাদিকতায় তাঁর দক্ষতা ছিল প্রশংসনীয়।
শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, “শাহ মোদাব্বির আলী ছিলেন আওয়ামী লীগের সংকটকালে দলের কান্ডারি। তাঁর সততা ও সাহসিকতা আমাদের জন্য অনুকরণীয়।”
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জানান, “তিনি ছিলেন জনমানুষের নেতা, যার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ছিল আদর্শের আলোকে উজ্জ্বল।”
পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন তাঁর ভাই শাহ ফারুক আহমেদ, কন্যা এবং চাচাতো ভাই শাহ শামীম আহমেদ।
তাঁরা জানান, শাহ মোদাব্বির আলীর নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি ও প্রতিবাদী কণ্ঠ তাঁদের রাজনৈতিক জীবনের অনুপ্রেরণা। পরিবারের সদস্যরা জানান, শাহ মোদাব্বির আলীর আদর্শ অনুসরণ করেই তাঁদের পরিবার আজও আওয়ামী রাজনীতিতে নিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত এবং দুর্নীতিমুক্ত।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মো. হরমুজ আলী, জালাল উদ্দিন, নঈম উদ্দিন রিয়াজ, মারুফ চৌধুরী, শাহ আজিজুর রহমান, সৈয়দ ছুরুক আলী, ভিপি খসরু, আনসারুল হক, কাউন্সিলার ইকবাল আহমেদ, কবি মুজিবুল হক মনি, নারী নেত্রী শাহীনা আখতারসহ অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ১৫ মিনিটে সিলেট শহরের নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তিনি ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের তিনবারের সাধারণ সম্পাদক (১৯৭২-১৯৭৫), সিলেট মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সিলেট জেলা বাকশালের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পাশাপাশি তিনি ‘জয় বাংলা’ পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিশ্বনাথ উপজেলার প্রথম প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আইনজীবী, রাজনীতিক, সমাজসেবক ও মানবিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে শাহ মোদাব্বির আলী চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ধর্মদা গ্রামের ‘পীরবাড়ি’তে। তাঁর বংশধারা হজরত শাহজালাল (র.) এর অন্যতম সঙ্গী সৈয়দ আদম খাকি (র.) থেকে উদ্ভূত।
মন্তব্য করুন