রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সিরিয়াল ছাড়া যেন মরতেও পারবেন না প্রবাসীরা

মাহাফুজুল হক চৌধুরী, আরব আমিরাত
  ০৩ মে ২০২৫, ১০:৩৯

শ্রমিকদের জন্য বিশেষ একটি দিন পহেলা মে। কারণ দিনটি এসেছে শ্রমিকদের জন্যই। তবে যারা মনে করেন দিনটি শ্রমিকদের বন্ধের জন্য তা ঠিক নয়। মূলত পহেলা মে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এই মে দিবস চালু করা হয়েছে। তবে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে এটি পালন করা হয় না। তার মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত অন্যতম।

প্রতিদিনের মতো পহেলা মেও ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠে কাজের জন্য রেডি হই, এরপর দোকান থেকে সকালের নাস্তা নিই। সকালে অনেক তাড়াহুড়ো করে রেডি হতে হতো নয়তো কোম্পানির বাস ধরা যাবে না। বাস মিস হলেই কাজ মিস। সাড়ে ৫টায় কোম্পানির বাস আসবে কাজে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

আমরা থাকি কোম্পানির লেবার ক্যাম্পে এক রুমে ২০ থেকে ২৫ জন করে, অনেক বড় রুম ও তিনতলা বিশিষ্ট লোহার খাটে থাকতে হয়। একসঙ্গে ৫০ থেকে ৬০ জন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম কখন বাস আসবে সে অপেক্ষায়। দশ মিনিটের মধ্যে বাস চলে আসল, এরপর একের পর এক ভেতরে ঢুকে পড়লাম। ঢুকেই দেখি বাসের অবস্থা ভালো না, ভেতরে এসি নেই ফ্যানগুলোও নষ্ট, জানালার গ্লাস খুলে দিলে গরম হাওয়া আসে কিন্তু কি আর করার শ্রমিক যখন হয়েছি মেনে নিতে হবে, মেনে নিতে নিতে আমরা
অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে হবে এই তপ্ত গরমের ভেতর। ক্যাম্প থেকে কাজের সাইট প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে। অবশেষে ৭টার দিকে কাজের সাইটে পৌঁছালাম। বাস থেকে নেমেই সাইট ইঞ্জিনিয়ার ও ফোরম্যানের চিল্লাচিল্লি শুরু, তাড়াতাড়ি কাজ ধরার জন্য।

খাবারটা যে রাখব একটু সেই সুযোগটাও দেয় না। তাপমাত্রাও অনেক বেশি। অন্যান্য দিনের চেয়ে ৫ ডিগ্রি বেশি পড়ছে। কিছুক্ষণ পরপর পানি খেতে হয় নয়তো গরমে মাথা ঘোরে।

এভাবে সকাল ১০টা পর্যন্ত কাজ করলাম তারপর নাস্তা করার জন্য কিছু সময় বিরতি। আমরা কেউ কেউ নাস্তা করলেও অনেকেই আছে তারা সকালের নাস্তা করে না, একেবারে দুপুরের লাঞ্চ করে। শুনতে অবাস্তব মনে হলেও এটাই সত্যি। কারণ নাস্তা করতে গেলে টাকার প্রয়োজন, সীমিত বেতনের চাকরি করে বেতন পাওয়ার আগেই যাদের বাড়ি থেকে টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দেয় তাদের সকালে নাস্তা করার মতো সে টাকা আর থাকে না।

অনেকেই শুধু দুইবেলা ভাত খেয়ে কাজ করে এই প্রবাসে। নাস্তা সেরে আবারো কাজে যোগ দিলাম এরপর ১২টায় দুপুরের লাঞ্চ বিরতি দুই ঘণ্টা। কিন্তু লাঞ্চ করার পর যে রেস্ট এরিয়ায় কোথায় বসব সেটিও সুযোগ নেই, সবখানে জুতার গন্ধ আর এক রুমে ৩০-৪০ জন আড়াআড়িভাবে বসে থাকে। এই রোদের মধ্যে দুই ঘণ্টা রেস্ট দিলেও বাস্তবে সেটা উলটো ক্ষতি হয়।

সন্ধ্যা ৬টায় কাজ শেষ করে ক্যাম্পের উদ্দেশ্য রওনা দেব, আবারো সকালের মতো বাসের জন্য লাইনে দাঁড়ালাম সেই তীব্র গরমের ভেতর বাসে এক ঘণ্টার জার্নি যেন মৃত্যু যন্ত্রণার সমান। ৭টায় রুমে আসলাম, এসে গোসল করার জন্য আবারো লাইন। ২০ মিনিট পর গোসলের সিরিয়াল আসল, তারপর গোসল সেরে বাজার করতে গেলাম।

বাজার থেকে এসে রান্নাবান্নার কাজে নেমে পড়লাম রান্নাঘরেও একই অবস্থা। সিরিয়াল আর সিরিয়াল। সিরিয়াল ছাড়া যেন মরতেও পারব না এমন এক অবস্থা। রান্না শেষ করতে করতে রাত ১০টা। তারপর খাওয়া দাওয়া এরপর ঘুমাতে যাওয়া। বাড়িতে যে ভালো করে কথা বলব সে সুযোগই নেই। এই কথাগুলো আমিরাতের একজন সাধারণ শ্রমিকের, যেখানে সকল শ্রমিকের জীবনের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে।

মন্তব্য করুন