বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

গাজার অনাহারী মানুষের ওপর হামলা অব্যাহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫:৩১
ছবি-সংগৃহীত

গাজার অনাহারী মানুষের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। ফলে সেখানে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাঁচার আকুতি জানিয়ে গাজাবাসী সাহায্যের আহ্বান জানাচ্ছেন। অনেক মাকে দেখা গেছে তার অনাহারী সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ইউটিউব শর্টস, ফেসবুক রিলে এসে আহাজারী করছেন। 

তার ওপর ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ৬০,০৩৪ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। মৃত্যুর এই মাইলফলক সামনে আসছে এমন এক সময়ে, যখন গাজার অভ্যন্তরে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, মানবিক অবরোধ এবং অব্যাহত বোমাবর্ষণের মধ্যে খাদ্য সহায়তার খোঁজে বের হওয়া অসহায় জনগণের ওপরও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী।

গ্লোবাল হাঙ্গার পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি জানিয়েছে, গাজার বেশির ভাগ এলাকায় খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্ভিক্ষের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। গাজা সিটির অভ্যন্তরে তীব্র অপুষ্টির হার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। জুলাইয়ের প্রথমার্ধেই ২০,০০০-এরও বেশি শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে চিকিৎসা গ্রহণ করেছে। 

এর মধ্যে ৩০০০ শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। গাজার নাসের হাসপাতালের শিশু ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ আল-ফাররা বলেন, শিশুরা আসছে হাড় আর চামড়ার অবয়বে ঢাকা শরীর নিয়ে। তাতে মাংস নেই, চর্বি নেই। শুধু খালি দেহ। এটা শুধু তীব্র অপুষ্টি নয়, এটা ধ্বংস। তিনি বলেন, অপুষ্টির কারণে শিশুর স্নায়ুবিক বিকাশ ব্যাহত হয়, ফলে ভবিষ্যতে লেখাপড়ার সমস্যা, বিষণ্নতা ও উদ্বেগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’-এর প্রতিনিধি ডাক্তার তানিয়া হাজ হাসান বলেন, খাদ্য এলেই সমস্যার সমাধান হয় না। অপুষ্টি দেহের প্রতিটি অঙ্গকে প্রভাবিত করে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, অপুষ্টির ফলে অন্ত্রে কোষ মারা যায়। ফলে পুষ্টি শোষণে সমস্যা হয়। হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পুনরায় খাদ্য গ্রহণ শুরু করলেও হৃদপিণ্ড ব্যর্থ হয়। 

এতে শিশুর মৃত্যু হতে পারে। দখলদার ইসরাইলি বাহিনী গাজার বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশে সহায়তা নিতে যাওয়া মানুষের ওপর গুলি চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আল-জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খৌদারি। একইদিনে গাজায় প্রথমবারের মতো আকাশপথে সাহায্য পাঠায় বৃটেন। এর মূল্য প্রায় পাঁচ লাখ পাউন্ড।

বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বলেছেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইসরাইল যদি যুদ্ধ বন্ধ না করে ও শান্তির অগ্রগতি না ঘটায়, তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে বৃটেন। ফ্রান্সও জর্ডানের সঙ্গে সমন্বয়ে ৪০ টন সহায়তা গাজায় ফেলার ঘোষণা দিয়েছে। তবে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করেছে, আকাশপথে সহায়তা পাঠানো কার্যকর বা নিরাপদ নয়, বরং স্থলপথে বাণিজ্যিক ও মানবিক প্রবাহ পুনরায় চালু করাই জরুরি। 

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জিএইচএফের তথ্যের ভিত্তিতে বলেন, গাজাবাসী এক মহাবিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এটা কোনো আশঙ্কা নয়, এটা চোখের সামনে ঘটে যাওয়া বাস্তবতা। তিনি বলেন খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং জ্বালানি সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আসতে হবে- বাধাহীনভাবে। এই দুঃস্বপ্নের অবসান চাই। গুতেরেস একটি তৎক্ষণাৎ ও স্থায়ী মানবিক যুদ্ধবিরতি, সব বন্দির মুক্তি এবং সমগ্র গাজা ভূখণ্ডে মানবিক সংস্থাগুলোর পূর্ণ প্রবেশাধিকারের দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রের বরাতে আল-জাজিরা জানায়, ইসরাইল দিয়ের আল-বালাহে ট্যাংক, ড্রোন ও ফাঁদ পাতা রোবট ব্যবহার করেছে, যা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে রক্তাক্ত রাত বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। এর মধ্যেই বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইসরাইলের এই যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়েছে এবং পূর্ব জেরুজালেমসহ দখলকৃত অঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনি জনগণের সম্পূর্ণ মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে।

মন্তব্য করুন