ভাইরাল হওয়া একটি হৃদয়স্পর্শী ভিডিওতে দেখা যায়, ভূমধ্যসাগরের পাড়ে বসে মিশরীয় নাগরিক একের পর এক খাবার ভর্তি বোতল সাগরে ছুঁড়ে দিচ্ছেন। তার প্রার্থনা একটাই—এই বোতলগুলো যেন ইসরায়েলি অবরোধে বন্দি গাজার মানুষদের হাতে পৌঁছে যায়।
২০১৬ সাল থেকে ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যেই রয়েছে গাজা উপত্যকা। তবে ২০২৫ সালের ১৮ মার্চ থেকে এই অবরোধ আরও কঠোর ও সর্বাত্মক রূপ ধারণ করে।
‘মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ’—ইসরায়েলি অবরোধের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের তীব্র অভিযোগ
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে ক্ষুধাকে একটি যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের ভাষ্যমতে, গাজা বর্তমানে এক ভয়াবহ ‘মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ’ এর কবলে পড়েছে—যার প্রধান কারণ এই দীর্ঘমেয়াদি এবং অবরোধ।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে—এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে গাজার জন্য প্রতি সপ্তাহে অন্তত পাঁচ লাখ বস্তা আটা প্রয়োজন। তা না হলে, এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে এই জনপদ।
বিশেষত শিশুদের অবস্থা দিন দিন শোচনীয় থেকে শোচনীয়তর হয়ে উঠছে। পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে চরম অপুষ্টির হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। অসংখ্য শিশু পড়ালেখা বা স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার পরিবর্তে দিন কাটাচ্ছে হাড় জিরজিরে দেহ নিয়ে তাঁবুতে কিংবা হাসপাতালের বিছানায়। অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন—ক্ষুধার কান্না নিয়েই ঘুমায় তাদের সন্তান, সেই কান্না নিয়েই জেগে ওঠে। অনেক শিশু দীর্ঘসময় না খেয়ে থেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ছে।
‘ক্ষমা করে দিও ভাই...’—মানবতার এক নিঃশব্দ আর্তনাদ
এই করুণ বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে, ভিডিওটিতে ধরা পড়েছে এক নিঃসঙ্গ মিশরীয় পুরুষের প্রতীকী প্রতিবাদ। তিনি প্রতিটি বোতল ছুঁড়ে দেওয়ার সময় প্রার্থনা করছেন যেন তা গাজায় পৌঁছে যায়। তার কণ্ঠে ভেসে আসছে এক নিঃসঙ্গ স্বীকারোক্তি, যা যেন পুরো মুসলিম বিশ্বের আত্মগ্লানির প্রতিধ্বনি।
‘ক্ষমা করে দিও ভাই... আমরা কিছুই করতে পারছি না।’
এই দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বজুড়ে মানুষ আবেগে আপ্লুত হয়েছে। গাজার জনগণের পাশে দাঁড়াতে, তাদের জন্য দোয়া ও সহানুভূতির বার্তায় মুখর হয়েছে নানা মহল। অনেকেই মানবিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন—এই নিষ্ঠুর অবরোধ ভেঙে দিয়ে ফিলিস্তিনের শিশুদের যেন বাঁচিয়ে তোলা যায়।
মন্তব্য করুন