যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের ওপর হামলায় অংশ নেয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে পাল্টা হামলা চালাতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে ইরান। মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনা করে এমনটাই জানাচ্ছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
মার্কিন কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ইরান এরই মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুত রেখেছে, যা প্রয়োজনে বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে মার্কিন সামরিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানতে ব্যবহৃত হবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিষয়টি এখন শুধু কূটনৈতিক নয়, পূর্ণাঙ্গ সামরিক উত্তেজনার হুমকি। মধ্যপ্রাচ্যে ৪০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে ও তাদের বেশিরভাগই সৌদি আরব, জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন।
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে মার্কিন প্রশাসন আশঙ্কা করছে, তারা যদি ইসরায়েলের সাথে মিলে ইরানের পরমাণু স্থাপনা ‘ফোর্ডোতে’ হামলা চালায়, তবে ইরানপন্থি হুথি গোষ্ঠী লোহিত সাগরে আবারও বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা শুরু করবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে কেউ কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারবে না। ইরানি জনগণের ওপর কোনো ইচ্ছা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
তিনি ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপে জানান, যদি যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে, তবে তার দায়ভার বহন করতে হবে ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্রদের।
মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা মনে করছেন, ইসরায়েল এককভাবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করতে পারবে না। ফোর্ডো পরমাণু স্থাপনার নিচে বিস্তৃত টানেলে লুকানো ইউরেনিয়াম মজুত থাকায় তা ধ্বংস করতে বি-২ স্টেলথ বোম্বারের মতো অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের সহায়তা দরকার হবে। এই বিমান থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রই একমাত্র অস্ত্র, যা পাহাড় ভেদ করে আঘাত হানতে পারে।
কিন্তু এমন হামলা চালানো মানেই- মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের অগ্নিশিখা ছড়িয়ে পড়া। ইরান ঘোষণা দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি হামলা শুরু করে, তাহলে ইরাকে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোই হবে প্রথম টার্গেট হবে। পাশাপাশি যারা ইসরায়েলকে সহায়তা করবে, সেই সব আরব দেশের ঘাঁটিতেও হামলা চালানো হবে।
গোটা পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, মার্কিন সামরিক বাহিনী আশঙ্কা করছে, ইরান যদি হরমুজ প্রণালীতে নৌ-মাইন স্থাপন করে, তাহলে পারস্য উপসাগরে থাকা মার্কিন রণতরীগুলো কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে।
ইরানপন্থি গোষ্ঠীগুলো আগেও মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জর্ডানে একটি ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হন। হুথি গোষ্ঠীও বেশ কয়েকবার মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ও বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ইরান এখনও পরমাণু অস্ত্র তৈরির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিলে এক বছরের মধ্যেই একটি পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হবে।
এ অবস্থায়, ট্রাম্প প্রশাসন কী করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ দাবি করেছেন, তবে তার ভেতরেই প্রতীয়মান হচ্ছে মার্কিন কৌশলের দ্বিধা।
‘ডিফেন্স প্রায়োরিটিজ’ নামক থিঙ্কট্যাংকের মধ্যপ্রাচ্য বিভাগের পরিচালক রোজমেরি কেলানিক বলেন, ইসরায়েলের হামলা ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথে ঠেলে দিতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি যুদ্ধে জড়ায়, তাহলে সেই সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যাবে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, একবার যুদ্ধে ঢুকে পড়লে আর বের হওয়া সহজ নয়। আপনি হয়তো পুরোপুরি জড়িয়ে পড়বেন।
মন্তব্য করুন