মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গাজায় আর্তনাদ বাড়ছেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১৮ মে ২০২৫, ১২:০৩

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ হতেই স্বরূপে ফিরেছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ গাজা ও ইয়েমেনের হুথি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ফের জোরেশোরে সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনারা।

স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (১৬ মে) সারা রাত ধরে গাজা উপত্যকার দাইর আল-বালাহ ও খান ইউনিসে লাগাতার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলায় অন্তত ১০৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। 

এই হামলার ব্যাপারে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামাসের হাতে থাকা ৫৮ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করতে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, জিম্মিদের মুক্তি না দিলে আরও বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালানো হবে।

অন্যদিকে, ইয়েমেনের হুথি নিয়ন্ত্রিত ২টি বন্দরেও বিমান হামলায় চালিয়েছে ইসরায়েল। এ ঘটনায় অন্তত একজন নিহত ও ৯ জন আহত হওয়ার খবর দিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ হওয়ার পরপরই ইসরায়েল হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজা ও ইয়েমেনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের এ সফর শেষ হতেই ইসরায়েলি হামলায় যোদ্ধা ও বেসামরিক মিলিয়ে উপত্যকার ১৩০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

গাজায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে মানবিক সহায়তা বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্য সফরকাল ট্রাম্প গাজায় পুনরায় যুদ্ধবিরতি কিংবা অন্তত মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ফের চালু করার চেষ্টা করবেন বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ সফর করলেও এ বিষয়ে তাকে তেমন কিছু বলতে দেখা যায়নি।

অবশ্য গাজার মানবিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। সফরের শেষ দিন আবুধাবিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, গাজাসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক সংকট তিনি সমাধানের চেষ্টা করছেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টি গাজার দিকে। আমাদের এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। সেখানে ভয়াবহ অবস্থা চলছে। অসংখ্য মানুষ অনাহারে দিনাতিপাত করছে।’

একই সঙ্গে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনাও অব্যাহত রেখেছেন তিনি। ট্রাম্প প্রশাসন গাজায় হামাস এবং ইয়েমেনে হুথিসহ বেশ কয়েকটি ইসরায়েল-বিরোধী গোষ্ঠীকে সমর্থন দেওয়া দেশটির সঙ্গে একটি পারমাণবিক চুক্তির করার চেষ্টা করছেন।

যুদ্ধ শুরুর পায়তারা নেতানিয়াহুর। এদিকে, ইয়েমেনে হামলার পর নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ‘এমন আরও অনেক কিছু আসবে।’

চলতি মাসের শুরুতে হুথিদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। হুথিদের দাবি, তারা ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরকালে ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলি আকাশসীমার দিকে ছোড়া বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে ।

হামলার ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, গাজায় সর্বশেষ হামলাগুলো একটি বৃহত্তর অভিযানের পূর্বাভাস। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে হামাসের হাতে জিম্মি ৫৮ জন ইসরায়েলি নাগরিককে মুক্তি না দিলে শিগগিরই এই অভিযান শুরু হবে বলে আগেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে হামাসকে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করে ধ্বংস করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার (১৩ মে) তিনি মন্তব্য করেন, ‘অসাধারণ শক্তি সমেত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের’ লক্ষ্যে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় প্রবেশে মাত্র কয়েকদিনের দূরত্বে আছে।’

পরে শুক্রবার (১৬ মে) ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটস নিশ্চিত করেন, সপ্তাহের শুরুতে গাজায় হামলাগুলো হামাসের সামরিক শাখার নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ারকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে। যদিও হামলায় হামাস নেতার পরিণতি নিয়ে তিনি স্পষ্ট কিছু জানাননি।

মোহাম্মদ সিনওয়ার ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই। ইয়াহিয়া সিনওয়ার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আগেই নিহত হয়েছেন।

গাজায় আর্তনাদ বাড়ছেই

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমানায় স্মরণকালের সবচেয়ে বড় হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামাসের ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ জন বেসামরিক ইসরায়েলি নিহত হন। সেই সঙ্গে আরও ২৫১ জন ইসরায়েলি নাগরিককে অপহরণ করে নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। তারপর থেকেই প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এছাড়া খাদ্য, পানি ও ওষুধের সংকটে সেখানে মানবিক পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে।

হামাস পরিচালতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে হামলা চালাচ্ছে। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার গাজাবাসী নিহত হয়েছেন।

হামাসের হাতে অবশিষ্ট জিম্মিদের মধ্যে ২৩ জন এখনও জীবিত আছেন বলে আশা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের। তবে কর্তৃপক্ষের ধারণা, তাদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা উদ্বেগজনক।

তিন মাস ধরে অবরুদ্ধ গাজা

চলতি বছরের ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে আরও লাখো মানুষ। এখন পর্যন্ত গাজার প্রায় ৫০ শতাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী (আইডিএফ)।

যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য, জ্বালানি ও পানিসহ সমস্ত মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। ফলে প্রায় ১৯ মাসের যুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে অঞ্চলটির বাসিন্দারা।

গাজায় জাতিসংঘের সহায়তায় কয়েকটি মানবিক রান্নাঘর চালু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি বেসরকারি সংস্থাও ত্রাণ সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে জাতিসংঘ সেই পরিকল্পনার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

শুক্রবার জাতিসংঘ জানায়, গাজায় চলমান খাদ্য সংকটে কমিউনিটি মেম্বাররা অবশিষ্ট খাদ্য মজুদ ভাগ করে নেওয়ার পর বন্ধ থাকা ১৮টি রান্নাঘর পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে।

এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত একটি নতুন মানবিক সংস্থা গাজায় ত্রাণ বিতরণ করবে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করে সংস্থাটি। এ মাসের শেষের সপ্তাহের মধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু হবে বলে দাবি করেছে তারা। তবে ত্রাণ কার্যক্রমের দায়িত্ব পাওয়া এ সংস্থাটি নিয়েও অভিযোগ উঠেছে।

গাজায় নতুন ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা মানবিক নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় অভিযোগ করে ইতোমধ্যেই জাতিসংঘসহ অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলো এ কার্যক্রম থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তাদের দাবি, ফিলিস্তিনের মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় এ ব্যবস্থা অত্যন্ত অপ্রতুল এবং এটি ফিলিস্তিনিদের অভাব পূরণ করার মতো যথেষ্ট নয়।

মন্তব্য করুন