যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যেসব বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা স্থগিত করেছে এবং দেশটিতে প্রবেশে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে, তাদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া শিথিল করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ স্পেন৷
স্পেন মঙ্গলবার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নিতে ইচ্ছুক যেসব শিক্ষার্থী মার্কিন প্রশাসনের বিধি-নিষেধের আওতায় পড়েছেন, তাদের জন্য স্পেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিপ্রক্রিয়া দ্রুততর এবং শিথিল করা হয়েছে৷
স্প্যানিশ অভিবাসন মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভিসা স্থগিতের কারণে যেসব শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পড়াশোনা শেষ করতে পারছেন না, তারাও চাইলে ইউরোপের দেশটিতে সহজেই আসতে পারবেন৷
গাজায় সংঘাতের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনি অধিকারের পক্ষে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ হয় যুক্তরাষ্ট্রে৷ এর জের ধরে দেশটির বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ যুক্তরাষ্ট্র সরকার অভিযোগ করেছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইহুদিবিদ্বেষের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে৷
মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে গত মে মাসে নতুন সিদ্ধান্ত নেয় ট্রাম্প প্রশাসন৷ বিশ্বব্যাপী বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে ওয়াশিংটন৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গোটা বিশ্বে থাকা মার্কিন সব দূতাবাস ও কনস্যুলেটকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাদের ভিসার সাক্ষাৎকারের দিন নির্ধারিত হয়েছে, তারা ছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নতুন করে সব বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা আবেদন যেন স্থগিত রাখা হয়৷
ওই সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছিলেন, ‘‘আমাদের দেশে কারা আসছে, তাদের সব বিষয় যাচাই-বাছাই (ভেটিং) করার প্রক্রিয়াটি আমরা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি৷ আমরা এটা অব্যাহত রাখব৷ কারা আমাদের দেশে আসছেন, তারা শিক্ষার্থী নাকি অন্য কেউ, সেটা যাচাই করে দেখার যত উপায় আছে, তার সবই ব্যবহার করা হবে৷’’
ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যেতে চাওয়া শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন৷ এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও৷ অনেকের ভিসা সাক্ষাৎকারের নির্ধারিত তারিখ এক থেকে দেড় বছর পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস৷ এছাড়া, কয়েকজন শিক্ষার্থী ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেয়েও মার্কিন মুলুকে যেতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন৷ অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী দেশটিতে যাওয়ার স্বপ্নে ভাষা দক্ষতা পরীক্ষা দিয়েছেন, অনেকে প্রস্তুতি শেষ করেছেন৷ তারা সবাই এখন হতাশ৷ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বাংলা সংস্করণেও এ সংক্রান্ত অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷
বিশ্বজোড়া সুপরিচিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিরোধকে কেন্দ্র করে তহবিলও স্থগিত করেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়টির করমুক্ত মর্যাদা বাতিল করারও হুমকি দিয়েছেন তিনি৷
পাশে দাঁড়ালো স্পেন
এমন প্রেক্ষাপটে স্পেনসহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ মেধা আকর্ষণের জন্য গবেষণা খাতে অনুদান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এমনতিতেই ইউরোপের দেশগুলোর শ্রমবাজারে শূন্যতা তৈরি হয়েছে৷ সেই শূন্যতা পূরণে বিদেশি দক্ষ কর্মীদের উপর নির্ভর করা ছাড়া গতি নেই ইউরোপীয় দেশগুলোর৷
যুক্তরাষ্ট্র যখন অভিবাসন সীমিত করার চেষ্টা করছে, তখন স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ অভিবাসনকে উৎসাহিত করছেন৷ এর কারণ হিসেবে অর্থনীতি গতিশীল হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন তিনি৷
অনিয়মিত অভিবাসন ইস্যুতে ইউরোপের অনেক দেশ কঠোর অবস্থান নিলেও নিয়মিত অভিবাসনের ক্ষেত্রে জার্মানি, স্পেনসহ বেশ কয়েকটি দেশ নানা উদ্যোগও নিয়েছে৷
ওপেন ডোরস ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী মার্কিন শিক্ষার্থীদের শীর্ষ পছন্দের তালিকায় স্পেনের অবস্থান তৃতীয়৷ এক নম্বরে আছে যুক্তরাজ্যের নাম আর দ্বিতীয় অবস্থানে ইটালি৷
প্রতি বছর অন্তত ২০ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য স্পেনের ভিসা চেয়ে আবেদন করেন বলেও জানিয়েছে ওপেন ডোরস৷
মন্তব্য করুন
