সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জনবল সংকটে ভুগছে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ১২ মে ২০২৫, ১১:৫২

চরম জনবল সংকটে ভুগছে নওগাঁর মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এর ফলে সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ চিকিৎসকের পদের বিপরীতে বর্তমানে চিকিৎসক আছেন মাত্র চারজন। চিকিৎসকের অভাবে জেলার সবচেয়ে জনবহুল এই উপজেলার মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সচল দুটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক না থাকায় এক বছরের বেশি সময় ধরে সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। পড়ে থাকতে থাকতে সেগুলো অচল হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, এখানে চিকিৎসকের ২৪টি শূন্য পদের মধ্যে ১০টিই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের। এ ছাড়া শূন্য রয়েছে ১০ জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদ। এ অবস্থায় চিকিৎসাসেবা চালিয়ে নেওয়ার স্বার্থে উপজেলার বিভিন্ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সাতজন স্বাস্থ্য সহকারীকে প্রেষণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পদায়ন করা হয়েছে। চিকিৎসক সংকটে ছোট ছোট সমস্যাতেও রোগীদের রেফার করা হচ্ছে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল কিংবা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাসনিম হোসাইন আরিফ বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় আগে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সচালক অবসরে যান। তারপর থেকেই এখানকার সচল দুটি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার হচ্ছে না। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স চালানোর জন্য তেলের যে বরাদ্দ সেটিও দেওয়া হচ্ছে না। ফলে অ্যাম্বুলেন্সগুলো গ্যারেজেই অব্যবহৃত অবস্থায় দিনের পর দিন পড়ে আছে।’

তিনি বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সের চালক নিয়োগ ও তেলের বরাদ্দ দেওয়ার জন্য ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।’

নওগাঁর সবচেয়ে বড় উপজেলা মান্দা। ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় ৫ লাখের বেশি মানুষের বাস। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০ জন রোগী বহির্বিভাগে টিকিট কাটেন। এ ছাড়া জরুরি ও অন্তর্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নেন আরও ১৩০ থেকে ১৪০ সেবাপ্রত্যাশী।

গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ২০-২২ জন রোগী টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। টিকিট না কেটে চিকিৎসকের খোঁজখবর নিচ্ছেন আরও অনেকে। বহির্বিভাগের দুটি কক্ষে রোগী দেখছেন দুজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এ ছাড়া হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স রাখার গ্যারেজ বাইরে থেকে তালা দেওয়া। আর হাসপাতাল চত্বরে বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে দুটি অ্যাম্বুলেন্স।

সেবা নিতে আসা উপজেলার বিজয়পুর, ছোট বেলালদহ ও বড়পই গ্রামের সাত-আটজনের সঙ্গে এ সময় কথা হয়।

তারা বলেন, হাসপাতালে আর আগের মতো চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় না। ঘণ্টার ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে সেবা না নিয়েই অনেক সময় ফিরে যেতে হয়।

এখানে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের (প্রেসক্রিপশন) বেশিরভাগ ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয় বলে অভিযোগ করেন তারা।

উপজেলার কশব ইউনিয়নের পলাশবাড়ি গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী শামীম হোসেন বলেন, ‘বুকে ব্যথার চিকিৎসা নিতে আমি ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু টিকিট কেটে একজন ডাক্তারকে দেখানোর পর তিনি কোনো চিকিৎসা না দিয়ে হার্টের বিশেষজ্ঞ কোনো ডাক্তারকে দেখাতে বললেন। ভালো ডাক্তার না থাকায় এখন আমাকে রাজশাহী কিংবা নওগাঁতে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।’

এলাকাবাসী জানায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা না মেলায় স্থানীয়রা অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। জটিল রোগে আক্রান্তরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) ও নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ থাকায় রোগীদের রাজশাহী কিংবা নওগাঁতে আসা-যাওয়া করতেও বাড়তি টাকা গুনতে হয়।

উপজেলার সতীহাট এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুজ্জামান সেতু বলেন, ‘সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা চালু না থাকায় রোগীদের বাড়তি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে মান্দা থেকে রাজশাহী কিংবা নওগাঁয় যেতে এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ হয়, সেখানে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘চালকের অভাবে লাখ লাখ টাকার অ্যাম্বুলেন্স অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা খুবই হতাশাজনক। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অবহেলার কারণেই এটা হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ হাসপাতালে মাত্র চারজন চিকিৎসক আছেন। এদের দিয়ে কোনোভাবে জরুরি ও অন্তর্বিভাগের কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরও সংকট রয়েছে। এসব কারণে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।  জনবল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই এসব সমস্যার উত্তোরণ হবে।’

এ ব্যাপারে নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন মুনীর আলী আকন্দ বলেন, ‘শুধু মান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নয়, জেলার অন্যান্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও চিকিৎসক সংকট রয়েছে। বিষয়গুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্সের চালক নিয়োগের দেওয়ার জন্য ঊধ্বর্তন কর্তপক্ষকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।’

মন্তব্য করুন