রবিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

প্রবাসীরা বঞ্চিত হলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে

সাইদুল ইসলাম, সৌদি আরব
  ২৮ জুলাই ২০২৫, ২১:৩৯
ছবি-সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন দেশে তাঁরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করেছেন। সভা-সমাবেশ করেছেন দিনের পর দিন। 

মধ্যপ্রাচ্যে বিক্ষোভ করতে গিয়ে অর্ধশত প্রবাসী জেল খেটেছেন। সফল গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ৫৩ বছর পর দেশ গড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ থেকে মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ বাংলাদেশি, যাঁরা প্রবাসে থাকেন, তাঁদের বঞ্চিত করলে বরং দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

প্রবাস থেকে আমারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লড়াই করি। শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনে দমন-পীড়নের একপর্যায় সরকার ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সব দেশ থেকে এক যোগে রেমিট্যান্স শাটডাউনের কর্মসূচি হাতে নেন। এতে করে দ্রুত পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে।

অথচ এই দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশের নাগরিক। তাঁরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন। পৃথিবীর প্রায় ১২০টি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ আছে, যাদের একেকটি দেশের মোট জনসংখ্যা দেড় কোটিও হবে না। 

সুতরাং এত বিপুলসংখ্যক প্রবাসীকে অবহেলা করে রাষ্ট্রের টেকসই সংস্কার বা মেরামত করা সম্ভব নয়। দেড় কোটি প্রবাসীর মূল্যায়ন করুন এবং তাঁদের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি মানুন, তার বিনিময়ে দেখবেন প্রবাসীরা কোটি কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি চাঙা করে দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।

বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে তার দেড় কোটি নাগরিক প্রবাসী। তাঁদের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার দিয়ে সঠিকভাবে যুক্ত করলে তাঁরা বাংলাদেশের জন্য এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়াতে একেকজন আনঅফিশিয়াল অ্যাম্বাসেডরের ভূমিকা পালন করতে পারেন।

বিশ্বের শতাধিক দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীরা বসবাস করছেন। যেহেতু বর্তমানে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি—যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। রেমিট্যান্স আয়ের দিক থেকে ২০২৪ সালে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সপ্তম। যেহেতু ভোটাধিকার নাগরিকের একটি রাজনৈতিক অধিকার। এটি আমাদের সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত। একজন নাগরিকের সাময়িক অবস্থানের পরিবর্তনও সংবিধানস্বীকৃত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দেশের মোট রিজার্ভ ২০২৫ সালের ২ জুলাই পর্যন্ত ৩১ দশমিক ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত রিজার্ভে বড় চাপ পড়েনি। বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় এখনো স্থিতিশীল। প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়ের উন্নতির কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। 

দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার স্বপ্ন বহন করে দেড় কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি ছড়িয়ে আছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে। তাঁদের রক্ত–ঘামে আসে বছরে প্রায় ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রধান উৎস।

বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করা স্টকহোমভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্ট্যান্সের (আইডিইএ) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১২৬টি দেশ তাদের প্রবাসী নাগরিকদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দেয়। তাই বাংলাদেশি প্রবাসী নাগরিকদেরও এই সুযোগ দেওয়া উচিত।

সংস্কারের পাশাপাশি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা পূর্ণ করার এখনই সময়। রাষ্ট্রের উচিত, নিজের দায়িত্ববোধ থেকে এই প্রবাসী জনগণের পাশে দাঁড়ানো। প্রবাসীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ঘোষণা করা উচিত। প্রবাসীদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত এখন সময়ের দাবি।

মন্তব্য করুন