জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম জানিয়েছে, লিবিয়ায় এখন ২০ হাজার ৪১১ জন বাংলাদেশি অভিবাসী আছেন। সংস্থাটির ‘ডিসপ্লেসমেন্ট ট্র্যাকিং ম্যাট্রিক্স (ডিটিএম)’-এর ৫৭তম প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
চলতি বছরের মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে ‘ডিসপ্লেসমেন্ট ট্র্যাকিং ম্যাট্রিক্স (ডিটিএম)’-এর তৈরি করা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে সোমবার (২১ জুলাই)।
এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে লিবিয়ায় অবস্থানরত অভিবাসীদের সংখ্যার বিবেচনায় সপ্তম স্থানে রয়েছেন বাংলাদেশিরা, যা দেশটির অভিবাসী জনসংখ্যার প্রায় দুই শতাংশ৷ লিবিয়ায় বর্তমানে মোট অভিবাসীর সংখ্যা আট লাখ ৬৭ হাজার৷ যারা বিশ্বের ৪৪টি দেশ থেকে এসেছেন।
বিশেষ করে ত্রিপোলি ও বেনগাজি শহরে বাংলাদেশি অভিবাসীদের সংখ্যা বেশি৷ অধিকাংশ বাংলাদেশিই পুরুষ এবং তারা নিয়োজিত আছেন নির্মাণ, পরিচ্ছন্নতা ও কারখানা সংশ্লিষ্ট কাজে৷ তাদের বেশিরভাগই স্বল্প মজুরি ও অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আইওএম জানায়, এই অভিবাসীরা মূলত আর্থিক সংকট ও বেকারত্বের কারণে বাংলাদেশ ছেড়েছেন৷ অনেকেই মধ্যপ্রাচ্য ঘুরে লিবিয়ায় পৌঁছেছেন এবং যাত্রাপথে এজেন্টদের মাধ্যমে ভ্রমণের জন্য গড়ে চার হাজার ৪১৪ মার্কিন ডলার ব্যয় করেছেন৷ যা অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের তুলনায় সর্বোচ্চ।
লিবিয়ায় অভিবাসীদের জন্য চিকিৎসা ও শিক্ষা সুবিধাও সংকুচিত৷ ৭৫ শতাংশ অভিবাসী স্বাস্থ্যসেবা পান না৷ যেসব অভিভাবকের সন্তান আছে তাদের অর্ধেকের বেশি জানিয়েছেন, তাদের সন্তানদের স্কুলে যাওয়ার সুযোগ নেই।
অভিবাসীদের মধ্যে নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত৷ নারী অভিবাসীদের ৫৬ শতাংশ কাজ খুঁজছেন৷ পুরুষদের মধ্যে এই হার ২০ শতাংশ৷ অনেক নারী শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
আইওএম জানিয়েছে, সাব-সাহারা আফ্রিকা, মিশর, চাদ এবং নাইজার থেকে আসা অভিবাসীরা লিবিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও বাংলাদেশ হচ্ছে গুটিকয়েক এশীয় দেশের একটি, যাদের নাগরিকদের লিবিয়ায় উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে৷ সিরিয়া, পাকিস্তান এবং ফিলিস্তিন থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসী আছেন উত্তর আফ্রিকার এই দেশটিতে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, লিবিয়ায় বসবাসরত অভিবাসীদের মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছেন সুদানের নাগরিকেরা৷ দেশটি থেকে এসেছেন প্রায় দুই লাখ ৮২ হাজার অভিবাসী, যা মোট অভিবাসীর ৩৩ শতাংশ৷ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আফ্রিকার দেশ নাইজার, যেখান থেকে এসেছেন এক লাখ ৮৮ হাজার ২৯৭ জন অর্থাৎ মোট অভিবাসী সংখ্যার ২২ শতাংশ৷ তৃতীয় স্থানে থাকা মিশর থেকে আসা অভিবাসীর সংখ্যা এক লাখ ৬৪ হাজার ৮০ জন বা ১৯ শতাংশ।
এরপর রয়েছে আফ্রিকার আরেক দেশ চাদ, যেখান থেকে এসেছেন ৮৫ হাজার ৪৭৪ জন অভিবাসী, যা অভিবাসী সংখ্যার ১০ শতাংশের সমান৷ পঞ্চম স্থানে থাকা নাইজেরিয়া থেকে এসেছে ২৯ হাজার ৩৮৩ জন, অর্থাৎ ৩ শতাংশ।
ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে সিরিয়া, যেখান থেকে এসেছে ২৩ হাজার ৭৩২ জন অভিবাসী, যা মোটের ৩ শতাংশ৷ বাংলাদেশ আছে সপ্তম স্থানে৷ এরপর রয়েছে ঘানা, যার অভিবাসীর সংখ্যা ১২ হাজার ৭৬৭ জন এবং মালি থেকে এসেছেন ১২ হাজার ২৪৮ জন অভিবাসী৷
দশম অবস্থানে রয়েছে ফিলিস্তিন অঞ্চল, যেখান থেকে এসেছেন ছয় হাজার ৫৬৫ জন অভিবাসী।
লিবিয়া অভিবাসীদের জন্য মূল গন্তব্য দেশ নয়৷ এটি ইউরোপে পৌঁছাতে চাওয়া অভিবাসীদের জন্য একটি ট্রানজিট পয়েন্ট৷ অনেকেই লিবিয়া হয়ে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ কেউ কেউ সেখানে থেকে যাওয়ার পরিকল্পনাও করছেন৷ আবার অনেকেই নিজ দেশে ফিরে যেতে চান৷ কিন্তু পরিস্থিতির কারণে সেটি সব সময় সম্ভব হয় না।
মন্তব্য করুন