সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

বেসামাল রাজশাহীর ‘কিশোর গ্যাং’

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪১

বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের হাত ধরে গজিয়ে উঠে কিশোর গ্যাং কালচার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা নগর নিরাপত্তায় অন্যতম প্রধান হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। বেসামাল সেই গ্যাং কালচার রাজশাহী মহানগরীতে আবারো দৃশ্যমান।

হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাসী হামলা, চাঁদাবাজি, মাদক বিক্রি ও মাদক গ্রহণ ছাড়াও তারা চুরি ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে। বিশেষত বাইকে চেপে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের তারা উত্ত্যক্ত ও যৌন হয়রানিও করছে। সম্প্রীতি নগরবাসীর মধ্যে এ নিয়ে ভীতি ছড়িয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য রুখতে গত কয়েক বছর আগে মহানগরীতে ৬ শতাধিক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যের ডাটাবেজ তৈরি করেছিল পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। কিন্তু পুলিশের নজরদারির অভাব ও রাজনৈতিক নেতাদের দাপটে এলাকাভিত্তিক গড়ে উঠা বিভিন্ন কিশোর গ্যাং বেপরোয়া হয়ে ওঠে। 

সরকার পরিবর্তনের পর আবারো সক্রিয় হয়ে ওঠছে এসব অপরাধী চক্র। এতে বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। রমরমা মাদক সাম্রাজ্যও।

কিশোর ছিনতাইকারীদের কারণে বিশেষ করে ভোরবেলা ও রাতের রাজশাহী আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এতে নগরবাসীর মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন আতঙ্ক।

ভুক্তভোগী নগরবাসীর অভিযোগ, রাজশাহী মহানগরী, পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য আবারো দৃশ্যমান হচ্ছে। সন্ধ্যা হলেই এসব কিশোর দল বেঁধে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে সড়কে নেমে পড়ে। বিভিন্ন সড়কে মোটরসাইকেল রেসে লিপ্ত হচ্ছে। পথচারী নারীদের হয়রানি করছে। সুযোগ পেলেই ছিনতাইও করছে। আর এদের হাতে থাকছে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র।

নগরীর কয়েরদাঁড়া এলাকার বাসিন্দা শাহানাজ পারভীন বলেন, ‘গত পয়লা অক্টোবর ভোরে আমি আমার মায়ের অপারেশনের জন্য ২০ হাজার টাকা নিয়ে লক্ষ্মীপুরের দিকে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে বর্ণালি এলাকায় বাইকে করে তিন ছিনতাইকারী আমার ব্যাগ ধরে টান দেয়। 

আরেকটু হলে শারীরিকভাবেও বড় দুর্ঘটনা ঘটত। ওরা ব্যাগ নিয়ে গেছে। ওইখানে টাকাসহ মূল্যবান ডকুমেন্টও ছিল।’ পরে সমস্যা হতে পারে এমন শঙ্কায় থানায় কোনো অভিযোগও করেননি এই গৃহবধূ।

আরেকজন মালিহা অন্তরা রায়দা। কয়েকদিন আগে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ছিনতাইয়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, ‘আমার জীবনে এরচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা আর কোনোদিন সম্ভবত ঘটেনি। 

রাত সাড়ে ৯টার দিকে বন্ধ গেট পার হয়ে সিটি বাইপাসের আগে আমার ব্যাগটা পাশে থেকে এক বাইকে তিনজন এসে টান দেয়। আমি ব্যাগটা খুব শক্ত করে ধরেছিলাম। আর ব্যাগের হ্যান্ডেলটা শক্ত না হওয়ায় হ্যান্ডেলটা নিয়ে যায়। যদি হ্যান্ডেলটা শক্ত হতো তাহলে ব্যাগের সঙ্গে আমিও পড়ে যেতাম।’

তিনি আরো লিখেছেন, ‘কয়েকদিন আগে নর্দান মোড় থেকে আমার এক বান্ধবীর ব্যাগও ছিনতাই করে নিয়ে গেছে।’

এদিকে, গত কয়েকদিন আগে রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানা এলাকা থেকে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মতিহার থানা পুলিশ। আসামিদের বয়স ২৪-২৬ বছর। ধারণা করা হচ্ছে এরাও কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য।

এছাড়া দামকুড়া থানায় সম্প্রতি ছিনতাইয়ের পর অটোরিকশা চালককে ফিল্মি কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। এসব ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এখন ছিনতাই আতঙ্ক নগরবাসীর মনে। তবে কিশোর গ্যাং রোধ ও ছিনতাই নির্মুলে আরএমপি কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে।

রাজপাড়া থানার ওসি আশরাফুল আলম বলেন, আমাদের দিনে ও রাতে ৪টা করে টহল টিম কাজ করছে। আমার যোগদান প্রায় মাসখানেক হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ছিনতাইয়ের কোনো জিডি হয়েছে বলে মনে নেই। তারপরও কাগজপত্র দেখে বলা যাবে। আর কিশোর গ্যাংয়ের যে তালিকা ছিল তা চুরি হয়ে গেছে। আবারো নতুন করে কাজ করা হচ্ছে।

মতিহার থানার ওসি আব্দুল মালেক বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা একেবারে যে নাই, এমনটা না। এরইমধ্যে ২টা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়েছে। আর আমাদের রাতে ৩টি এবং দিনে ৪টি টহল টিম কাজ করছে।

চন্দ্রিমা থানার ওসি মতিউর রহমান বলেন, আমি গত মাসের ১৮ তারিখ জয়েন করেছি। এরমধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি হয়নি। আর আমার রাতে ২টি এবং দিনে ২টি টহল টিম কাজ করছে। কিশোর গ্যাং নিয়েও কাজ শুরু করেছি। ধীরে ধীরে তৎপরতা বাড়বে।

কাটাখালি থানার ওসি আব্দুল মতিন বলেন, আমাদের এখানে ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা নেই। আর দিনে ও রাতে টহল টিম কাজ করছে। এটার নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই। প্রয়োজন অনুযায়ী ডিউটি দেওয়া হয়। আর কিশোর গ্যাংয়ের কোনো তালিকা আমাদের নেই। আপনাদের কাছে থাকলে আমাদের দিতে পারেন।

শাহমখদুম থানার ওসি মাহবুব আলম বলেন, আমি গত মাসের ১৭ তারিখ যোগদান করেছি। এখন পর্যন্ত ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা পাইনি। আর আমার থানায় ৩টা করে রাত ও দিনে টহল টিম কাজ করছে। কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা থানায় নেই। তবে আমি এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছি।

এয়ারপোর্ট থানার ওসি শহিন আখতার বলেন, গত একমাসের মধ্যে আমার থানায় ১টা মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরে কোনো ঘটনা নেই। আর কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা আরএমপিতে আমার হাত ধরেই তৈরি।

বোয়ালিয়াতেই প্রায় ৩০০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। অন্য থানাগুলো মিলিয়ে আরো ২০০-২৫০ জনের তালিকা ছিল। এয়ারপোর্ট থানায় সে তালিকাটা দেখে জানাতে পারব। তবে আমরা কাজ শুরু করছি।

পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার থানায় কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা নেই। কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তালিকা নেই। তবে আমাদের উচ্চ পর্যায়ের যে নির্দেশনা আছে, সেটা অনুযায়ী কাজ করছি।

কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, আমি আসার পর কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা পাইনি। কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা সর্ম্পকেও জানা নেই। তবে আমরা কাজ করছি। আর রাতে-দিনে মিলিয়ে ৬টা টহল টিম কাজ করছে।

আরএমপির সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বোয়ালিয়া। যেখানে সম্প্রতি ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো এই থানা এলাকাতেই বেশি। এ বিষয়ে জানতে বোয়ালিয়া থানার ওসিকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

তবে থানার তদন্ত কর্মকর্তা তাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এখানে যোগদান কয়েক দিন হলো। এরমধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা পাইনি। আর কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়েও কাজ শুরু হচ্ছে।’

মন্তব্য করুন