শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১

ইতালি যাওয়ার পথে নিহত ২৩, বেশিরভাগই মাদারীপুরের

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:৩৫
ছবি-সংগৃহীত

অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে নিহত ২৩ জনের মধ্যে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১০ জন রয়েছেন। তাদের মৃত্যুর খবরে পরিবারসহ এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম।

নিহতরা হলেন রাজৈর উপজেলার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের চা বিক্রেতা হাসান হাওলাদারের ছেলে টিটু হাওলাদার, গোবিন্দপুরের বাসিন্দা আক্কাস আলী আকনের ছেলে আবুল বাশার আকন, সুন্দিকুড়ি গ্রামের নীল রতন বাড়ৈর ছেলে সাগর বাড়ৈ, একই গ্রামের মহেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের ছেলে সাগর বিশ্বাস, গোবিন্দপুরের ফিরোজ শেখের ছেলে ইনসান শেখ, একই গ্রামের আশিষ কীর্তনীয়া, বৌলগ্রামের নৃপেন কীর্তনীয়ার ছেলে অমল কীর্তনীয়া, একই গ্রামের চিত্র সরদারের ছেলে অনুপ সরদার, শাখারপাড়ের সজিব মোল্লা ও সাদবাড়িয়ার রাজীব। এদের সবার বয়স ২০-৩০ বছরের মধ্যে।

পুলিশ, স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দালালদের খপ্পরে পড়ে গত ১ জানুয়ারি ইতালির উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়েন মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের চা বিক্রেতা হাসান হাওলাদারের ছেলে টিটু হাওলাদার। মামা একই উপজেলার গোবিন্দপুরের বাসিন্দা আবুল বাশার আকন তার সঙ্গে যোগ দেন। 

গত ২৪ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাত্রা করেন তারা। মাঝপথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারান মামা আবুল বাশার ও তার ভাগনে টিটু। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাদের মৃত্যুর খবর এলে পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া।

শুধু তারাই নন, একই ঘটনায় রাজৈর উপজেলার মোট ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ২৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করে লিবিয়ার কোস্ট গার্ড। এর মধ্যে ১০ জনের বাড়িই মাদারীপুর রাজৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।

নিহত ১০ জনের পরিবারের প্রায় সবাই চড়া সুদে লাখ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দালালদের হাতে তুলে দিয়েছেন। অনেকে ভিটেমাটি বিক্রি করে দালালদের টাকা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

তাদের লিবিয়া নেওয়ার পেছনে মূলহোতা রাজৈর হরিদাসদি গ্রামের স্বপন মাতুব্বর, মজুমদারকান্দি গ্রামের মনির হাওলাদার ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলীপুরের রফিক। এ ঘটনায় জড়িত দালালদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন নিহতের পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী। তবে ঘটনার পর থেকেই ঘরবাড়িতে তালা দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন দালালরা।

নিহত আবুল বাশারের বাবা আক্কাস আলী আকন বলেন, ‘মনির হাওলাদার ও স্বপন মজুমদার এই দুই দালাল ২৮ লাখ টাকা নিয়েছে। তারা আমার ছেলেকে ইতালি পাঠাবে বলেছে। আমার ছেলের এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। দালালদের কঠোর শাস্তি চাই।’

নিহত টিটু হাওলাদারের চাচাতো ভাই রেজাউল হাওলাদার বলেন, ‘দালালরা লোভ দেখিয়ে আমার ভাইকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ফেলে দেবে কখনো ভাবতে পারিনি। দালালের কঠিন বিচার চাই। আমার ভাইয়ের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।’

এ বিষয়ে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ খান বলেন, ইতালি যাওয়ার সময় লিবিয়ায় রাজৈর উপজেলার ১০ জন যুবক মারা গেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি। নিহতদের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ দিলে দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহ মোহাম্মদ সজীব বলেন, মরদেহগুলো দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দূতাবাসের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

মন্তব্য করুন