ঈদের পর গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজসহ প্রায় সব ধরনের শাকসবজির দাম বাড়ছে চাঁদপুরে। কেবল পেঁয়াজের দামই প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। অথচ বাজারে শুধু পেঁয়াজ কেন, কোনো শাকসবজিরই সরবরাহে কমতি নেই।
কেন এমন দরবৃদ্ধি, তা নিয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। তারা বলছেন, কেন দাম বাড়ছে জানি না। তবে গত কয়েক সপ্তাহের বাজার বিবেচনা করে সহজেই বলে দেওয়া যায় যে, সামনে দাম আরও বাড়বে।
চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। অথচ ২০/২৫ দিন আগে তা ছিল ৩০-৩৫ টাকা কেজি।
এছাড়া দাম বেড়েছে সব সবজিরও। প্রতিটি সবজিই ১০ থেকে ৩০, আবার কোনো কোনোটি ৪০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে এক কেজি কাকরোল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়, পটল ৭০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, লম্বা সিম ৭০ টাকা কেজি, গাজর ৪০-৪৫ টাকা কেজি , ধুন্দল ৬০ টাকা কেজি, কাঁচা মরিচের কেজি ১০০ টাকা, ধনে পাতা ১২৫ টাকা কেজি।
এ ছাড়া রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে, পেঁপে ৮০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, টমেটো ৩৫-৪০ টাকা, ঢেড়স ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, মিষ্টি আলু ৬০ টাকা কেজি; মাঝারি সাইজের লাউ একেকটি ৫০-৬০ টাকা,মাঝারি সাইজের চাল কুমড়া প্রতিটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শাকের মধ্যে লাল ও সবুজ শাক বিক্রি হচ্ছে কেজি ৪০ টাকা দরে। এ ছাড়াও কচুর লতি ৭০ টাকা কেজি, শসা ৬০ টাকা ছড়া কচু ৭০ টাকা, কাঁচকলা ৪০ টাকা হালি, লম্বা কালো বেগুন ৭০ টাকা ও গোলাকার কালো বেগুন ৮০ টাকা কেজি। আর মাঝারি সাইজের লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। তবে গোল আলুর দাম এখনও ২০ টাকা কেজিই আছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব শাকসবজির দাম বাড়ায় জেলার সীমিত আয়ের লোকজনের দুর্ভোগ বেড়েছে।
এ বছর জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পুরাপুরি অর্জন হয়েছে বলে দাবি চাঁদপুর কৃষি বিভাগের। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে কর্মরত কৃষিবিদ মোবারক হোসেন ইউএনবিকে জানান, জেলায় এ বছর পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ৭৫০ হেক্টরে। কাটা ও হয়েছে ৭৫০ হেক্টরের পেঁয়াজ। এসব জমিতে মোট উৎপাদন হয়েছে ৮ হাজার ৮১১ দশমিক ৬ টন পেঁয়াজ।
তার দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় রসুনের আবাদ হয়েছে ৩৬০ হেক্টর জমিতে। এরই মধ্যে সব রসুন তোলা হয়েছে। জেলায় রসুনের মোট উৎপাদন হয়েছে ২ হাজর ৯৬২ দশমিক ২৫ টন।
মাছের বাজারেও আগুন
সবজির মতো শহরের মাছ বাজারের চিত্রও এক। ইলিশসহ অন্যান্য মাছের দাম চড়া।
চিংড়ি মাঝারি সাইজেরটা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা কেজি, মাঝারি সাইজের শিং/মাগুর ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি, চাষের পাঙ্গাস কেজিপ্রতি ২২০ টাকা, কাচকি বইচা মাছ ৫০০ টাকা এবং তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি দরে।
আর ইলিশের দাম তো সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিপনীবাগ মাছ বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৩০০ টাকা দরে, ৫০০/৬০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২০০০ টাকা কেজি, তিনটায় এক কেজি—এমন ইলিশের দামও ১৩০০-১৪০০ টাকা কেজি।
শহরের ব্যস্ততম বিপনীবাগ বাজারের পুরাতন ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় স্টেশন মাছের মোকাম, হরিণাঘাট ও আনন্দবাজার মাছের মোকামে ইলিশের আমদানি এখনও কম। এ ছাড়া শহরের টিলাবাড়ি এলাকার ইলিশশিকারী জেলেদের কাছ থেকে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার পর এখনও জালে ইলিশ ধরা পড়ছে কম। তাই বাজারে দাম একটু চড়া।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি ও প্রবীণ ব্যবসায়ী শবেবরাত সরকারসহ কয়েকজন বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর এখনও বড় স্টেশন মাছ ঘাট জমে উঠেনি। সাগরেও নিষেধাজ্ঞা চলছে। তাই দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা ভোলা, হাতিয়া, চরফ্যাশন ইত্যাদি এলাকা থেকে ইলিশ আমদানি হচ্ছে না। সারা দিনে এই মাছ ঘাটে গড়ে পদ্মা নদীর দুই থেকে আড়াই মণ ইলিশ আসে।
তারা আরও বলেন, এখন তো ইলিশের সিজন নয়। সিজন শুরু হবে জুন-জুলাইতে। আশা করি তখন নদীতে ঢেউ উঠবে, ঝড় ও বজ্রবৃষ্টিসহ বাতাস থাকবে। তখন বেশি বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে।
মন্তব্য করুন