অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপেক্ষা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা৷
তারা বলছেন, একমাত্র গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য কোন কমিশনে নেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ৷ এমনকি সরকার এতকিছু সংস্কার করছে, সেখানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নেতাদের কোন মতামত নেওয়া হচ্ছে না৷ এমন পরিস্থিতিতে দেশে সংখ্যালঘুরা উদ্বিগ্ন, তাদের মধ্যে বাড়ছে শঙ্কা৷
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মনীন্দ্র কুমার নাথ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সামনে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ এমন পরিস্থিতিতে আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি, শঙ্কা আরও বাড়ছে৷ ২০০১ সাল থেকেই নির্বাচনের সময় ও পরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ হওয়া একটা সংস্কৃতি হয়ে গেছে৷ আবার এই সরকার যে আমাদের গুরুত্ব দিচ্ছে তাও না৷ কোন একটা কমিশনেও সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি রাখা হয়নি, শুধুমাত্র গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ছাড়া৷ সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেও সংখ্যালঘুদের মতামত নেওয়া হয়নি৷ ফলে আমরা যে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাচ্ছি সেটা কিভাবে হবে? আমরা তো দাবি জানাতেও ভয় পাচ্ছি৷ আগে তো অন্তত পুলিশের সহযোগিতা পাওয়া যেত৷ এখন পুলিশও আসে না৷ কিছু হলেই সেখানে মব সন্ত্রাস তৈরি করা হচ্ছে, ফলে পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক৷''
১১ মাসে সংখ্যালঘুদের উপর ২৪৪২টি সহিংসতার ঘটনা
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট থেকে গত ৩০ জুন পর্যন্ত ৩৩০ দিনে অর্থাৎ ১১ মাসে দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর ২ হাজার ৪৪২টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে৷ এসব সহিংস ঘটনার মধ্যে রয়েছে হত্যা, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাঙচুর, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার, জোর করে বাড়ি ও ব্যবসা দখল, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, জোর করে পদত্যাগ প্রভৃতি৷ সংগঠনটি জানায়, সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে গত বছরের ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত, ২ হাজার ১০টি৷ এসব ঘটনায় গত ছয় মাসে নিহত হয়েছেন ২৭ জন৷
এছাড়া গত বছরের ২১ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩২টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে৷ আর চলতি বছরের শুরু থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত নতুন করে আরও ২৫৮টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে৷ সরকারের পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে অস্বীকার করা ও প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি না করায় দুর্বৃত্তরা দায়মুক্তি পাচ্ছে৷
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘আমরা দেখছি সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়েই অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম শেষ হচ্ছে৷ সংখ্যালঘুদের জন্য এটা সবচেয়ে হতাশার জায়গা৷ আমরা একসঙ্গে সবাই পথ চলতে চাই৷ আমরা কোন অভিযোগ করলেই বলা হচ্ছে, এর সঙ্গে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কোন সম্পর্ক নেই৷ এগুলো রাজনৈতিক৷ ঘটনাগুলো তারা অস্বীকার করতে পারছে না৷ আমরা যে ঘটনাগুলোর কথা বলছি, সেগুলো মিডিয়াতেও এসেছে৷ তারপরও এর বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটাও নেওয়া হচ্ছে না৷ ফলে আমরা অসহায় বোধ করছি৷''
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের দাবির বিষয়ে পুলিশের ব্যাখ্যা
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও সহিংসতার যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর৷ তারা বলছে, ২৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ২২টি ঘটনায় নিয়মিত হত্যা মামলা এবং পাঁচটি ক্ষেত্রে অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে৷ হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে জমি-জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ (দুটি), আর্থিক লেনদেন (দুটি, যার মধ্যে মাদক ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত (একটি), ডাকাতি/দস্যুতা (সাতটি), প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের গুলিতে একজন (সন্ত্রাসী সন্দেহে), তরমুজ ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে মারামারি (একটি), আত্মহত্যা (তিনটি) এবং মৃতদেহ উদ্ধার (১১টি) সংক্রান্ত ঘটনাগুলো উঠে এসেছে৷
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে মোট ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ১৫ জন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন এবং ১৮ জন আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন৷ তদন্তে দেখা গেছে, কোনো হত্যাকাণ্ডই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বা সাম্প্রদায়িকতার কারণে সংঘটিত হয়নি৷
যৌন হয়রানি/ধর্ষণ/গণধর্ষণ সংক্রান্তে মোট ২০টি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়৷ এর মধ্যে ১৬টি ঘটনার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে এবং ২৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তিনটি ঘটনা সংক্রান্তে কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি৷ রাজশাহীর তানোরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি৷ অভিযুক্তের সঙ্গে বাদির আগে থেকে পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল৷
৮ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তথ্য মতে, সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটে গত বছরের ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত, ২ হাজার ১০টি৷ এর মধ্যে ১ হাজার ৭৬৯টি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা৷ পুলিশ এই ১ হাজার ৭৬৯টি ঘটনা যাচাই-বাছাই করে ৫৬টি জেলায় মোট ১ হাজার ৪৫৭টি ঘটনার সত্যতা পেয়েছে৷ এর মধ্যে ১ হাজার ৪৫৭টি ঘটনার মধ্যে মোট ৬২টি ঘটনায় মামলা রুজু হয়েছে এবং ৯৫১টি ঘটনায় জিডি করা হয়েছে৷ ৬২টি মামলায় মোট ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
পুলিশ সদর দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংঘটিত প্রতিটি ঘটনায় পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং সব স্থাপনা, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷
বাংলাদেশ সনাতন পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের যে ঘটনাগুলো সামনে এসেছে, এর কোনটি কি সরকার অস্বীকার করতে পারবে? কিন্তু তারা কি ব্যবস্থা নিচ্ছে? চট্টগ্রামে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ম কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর গত ৮ মাস ধরে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে৷ আমরা অনেক চেষ্টার পর হাইকোর্ট থেকে তার জামিন করলাম৷ কিন্তু মব তৈরি করে উস্কানি দেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আরো কতগুলো হত্যা মামলা দেওয়া হলো৷ সর্বশেষ বৃহস্পতিবারও আমরা তার ৫টি মামলায় জামিন চেয়েছিলাম, কিন্তু জামিন দেওয়া হয়নি৷ এখন তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে৷ চিন্ময় ব্রহ্মচারীর মতো নেতার যেখানে জামিন হচ্ছে না, ফলে অন্যরা আন্দোলন করতে ভয় পাচ্ছে৷ ফলে সরকার যে সবার, সেটা তো প্রমাণ করতে পারছে না৷''
খিলক্ষেতে দুর্গামন্দির গুড়িয়ে দেওয়া ও প্রতিমা ভাঙচুর
গত মাসে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অস্থায়ী দুর্গা মণ্ডপ ভেঙ্গে ফেলা হয়৷ এর ফলে সেখানে থাকা প্রতিমাগুলোও ভাঙা হয়৷ রেলের জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অংশ হিসেবে অস্থায়ী মন্দিরটি ভাঙা পড়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে৷ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই মন্দির ভাঙার জন্য সরকারকে ক্ষমা চাইতে হবে৷''
বিবিসি'র প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ২৪শে জুন রাতে ‘স্থানীয় জনতা' পরিচয়ে কয়েকশ' মানুষ মন্দিরটি সরিয়ে নিতে বিক্ষোভ করেন৷ পরদিন বেলা ১২টার মধ্যে মন্দিরটি সরিয়ে নিতে আল্টিমেটাম দেন তারা৷
পরে ২৬শে জুন রেলওয়ে কর্মকর্তাসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বুলডোজার দিয়ে স্থাপনাটি উচ্ছেদ করে৷ একই সাথে উচ্ছেদ করা হয় ওই এলাকায় রেল লাইনের পাশ দিয়ে গড়ে তোলা অনেক অবৈধ স্থাপনাও৷ পূজা আয়োজন করতে গত বছর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অস্থায়ী মণ্ডপ তৈরির লিখিত অনুমতি নিয়েছিল মন্দির কমিটি৷ তবে মন্দির গড়ে তোলার কোনো অনুমতি তাদের ছিল না বলে জানিয়েছে মন্দির কমিটি৷
এই ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনও করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা৷ মানববন্ধন থেকে লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আটক পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে পিটিয়ে পুলিশে দেওয়া, যশোরের অভয়নগরে বর্বরোচিত হামলা, প্রশাসনের সংখ্যালঘু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আচরণসহ সারা দেশে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে৷
বাংলাদেশ পূজা উৎযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অন্তবর্তী সরকার গঠনের পর ১৩ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এসে বলেছিলেন, ‘আমরা যেন নিজেদের সংখ্যালঘু, অমুক-তমুক বলে শ্রেণিবিভাগ না করি৷ আমরা এই দেশের মানুষ, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা হোক৷' সব সরকারের কাছে এটাই চাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি৷
কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখছি, আমাদের বাদ দিয়েই সব হচ্ছে৷ সরকার এতগুলো কমিশন করল, সেখানে আমাদের কাউকে রাখেনি৷ সংবিধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, অথচ কোথাও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কোন প্রতিনিধিত্ব নেই৷ তাহলে এই সরকারকে আমরা কিভাবে আমাদের সরকার ভাবব! কিভাবে বিশ্বাস করবো? ফলে আমাদের আতঙ্ক দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে৷ শঙ্কা তো কমছে না, বরং বাড়ছে৷''
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘‘দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে৷ সরকারের উস্কানিতে, সরকারি লোকদের কথাবার্তায় সাম্প্রদায়িক শক্তি বা মব ভায়োলেন্সের নামে যারা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তারা আরও উৎসাহিত হচ্ছে৷ সরকারের উদ্যোগে একটি মন্দির বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ সরকার দেশকে যে অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে, এ অবস্থা দেশের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে আনবে৷''
নড়াইলের বাসনা মল্লিক হত্যার তদন্ত কতদূর?
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর নড়াইলের মাইজপাড়ার নারী ইউপি সদস্য বাসনা মল্লিককে (৫০) ডেকে নিয়ে ধর্ষণের পর মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়৷ একদিন পর তার মত্যু হয়৷ এই ঘটনায় তার ছেলে রিংকু মল্লিক বাদী হয়ে নড়াইল সদর থানায় একটি মামলা করেন৷ আসামিরা হলেন, সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নপর দৌলতপুর গ্রামের ওসমান মোল্যার ছেলে ফারুক মোল্যা (৫০), দৌলতপুর গ্রামের আয়ুব আলীর ছেলে রজিবুল মোল্যা (৩০), সাত্তার মোল্যার ছেলে চঞ্চল মোল্যা (৩৫) ও শহিদ মোল্যার ছেলে শফিকুল মোল্যা (৩৩)৷
রিংকু মল্লিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার মায়ের মৃত্যুর পর অনেকেই নানা কথা বলেছিল৷ আসলে আমার মা মৃত্যুর আগে আমাকে বলে গিয়েছেন, তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল ওরা৷ সেই টাকা না দেওয়ার কারণে তাকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের পর মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়৷
ভয় দেখানো হয় যাতে কাউকে কিছু না বলে৷ মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়৷ যদিও পুলিশ আসামি চারজনকেই গ্রেপ্তার করেছে, কিন্তু কিবরিয়া নামে একজনের নাম আমি এজাহারে দিতে পরিনি৷ তার কথা পরে জেনেছি৷ সেই ছিল মূল হোতা৷ যদিও তার বিচার সৃষ্টিকর্তাই করেছে৷ গত তিন দিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় সে মারা গেছে৷ আমরা গরীব মানুষ, ফলে ওই মামলার কি অবস্থা আমি আর জানি না, খোঁজও নিতে পারিনি৷''
মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঘটনার তিনদিন পর তার মৃত্যু হওয়ায় ধর্ষণের অলামত পাওয়া যায়নি৷ আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করেছি৷ তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবো৷ তদন্তাধীন মামলার বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না৷''
যদিও বাসনা মল্লিকের মৃত্যুর পর যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) বজলুর রশীদ বলেছিলেন, ‘‘ওই নারীকে ধর্ষণ করে বিষ খাওয়ানো হয়েছে৷ ধর্ষণের ক্ষত ছিল৷ আলামতও সংগ্রহ করা হয়েছে৷ এছাড়া ওই নারীর পেটে বিষ পাওয়া গেছে৷''
"কোনো হত্যাকাণ্ডই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা থেকে হয়নি"
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কয়েকদিন আগে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিষয়ে যে তথ্য উপস্থাপন করেছে, সেই অভিযোগগুলো কি খতিয়ে দেখেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়? ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "তাদের অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর বিস্তারিত ব্যাখা দিয়েছে। তারা যে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ করেছিলেন, তার কোনটিই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা থেকে হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ধর্ম উপদেষ্টা জানান, "পুলিশ ওই ২৭ জন নিহতের বিষয় পর্যালোচনা করে বলেছে, এগুলো মূলত জমিজমা নিয়ে বিরোধ, মাদক কেনাবেচা, ডাকাতি, প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের গুলি, তরমুজ কেনাবেচা নিয়ে মারামারি, গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার কারণে ঘটেছে। এসব ঘটনায় ২২টি হত্যা মামলা ও ৫টি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। এই ঘটনাগুলোতে ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৫ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে।
ধর্ষণ বা গণধর্ষণের ২০টি অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টিতে মামলা হয়েছে। তাতে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনটি ঘটনায় কোন অভিযোগ করা হয়নি এবং রাজশাহীর তানোরে নারী ধর্ষণের ঘটনার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। মাগুরায় ডাকাতির পর গণধর্ষণের ঘটনায় কোন অভিযোগ করা হয়নি। ঘটনাটির প্রাথমিক তদন্ত করে সত্যতা পাইনি পুলিশ। মন্দিরে চুরি, মন্দির ভাঙচুর বাং অগ্নিসংযোগের, উচ্ছেদ এবং দখলের ঘটনায় ৬০টি অভিযোগ করা হয়েছে। এই বিষয়েও পুলিশ ব্যাখা দিয়েছে।”
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, "অন্তবর্তী সরকার দেশটিকে একটি পরিবার মনে করে। এদেশে আমরা যারা বসবাস করি তারা সবাই এই পরিবারের সদস্য। কোন কোন সম্প্রদায়কেই সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু বিবেচনা করার অবকাশ নেই। আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান। ধর্মীয় স্বাধীনতাসহ অন্যান্য অধিকারও সমান।
এদেশে সকল ধর্মের মানুষের জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি। এই মন্ত্রণালয় থেকে সব ধর্মের মানুষের জন্য একই ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। সব ধর্মের মানুষের মধ্যে সোহার্দ্যমূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে নানা ধরনের কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছে। মূল কথা হলো, আমরা সোহার্দ্য বজায় রাখতে সচেষ্ট রয়েছি।”
মন্তব্য করুন