জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে আসামি সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন। দোষ স্বীকার করে বলেছেন, তিনি একজন সাক্ষী হিসেবে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যাপ্ত তথ্য দিয়ে আদালতকে সহায়তা করবেন।
এর মাধ্যমে তিনি ‘অ্যাপ্র“ভার’ হতে চেয়েছেন। রাজসাক্ষী হওয়ায় ট্রাইব্যুনালের বিচারে আবদুল্লাহ আল-মামুন কি দায় থেকে মুক্তি পাচ্ছেন, নাকি তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে- এ নিয়ে বিচারপ্রার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বক্তব্যের মাধ্যমে পুরোপুরি সত্য প্রকাশিত হলে আদালত তাকে ক্ষমা করতে পারেন। অথবা অন্য কোনো আদেশও দিতে পারেন।
ট্রাইব্যুনাল আইনে বলা হয়েছে, ঘটনার মূল হোতা বা সহায়তাকারীকে সেটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত (রাজসাক্ষী) ব্যক্তি সাক্ষ্য গ্রহণে সত্য ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করার শর্তে ক্ষমা পেতে পারেন। তবে শর্ত থাকে যে, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এরূপ ব্যক্তিকে আটক রাখতে হবে।
তাজুল ইসলাম অ্যাপ্র“ভার শব্দের ব্যাখ্যায় বলেন, আইনের ভাষায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ‘অ্যাপ্র“ভার’ হয়েছেন। বাংলায় একে ‘রাজসাক্ষী’ বলে। আইনের পরিভাষায় ‘একটি অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বা সে সম্পর্কে গোপন তথ্যের অধিকারী কোনো ব্যক্তি যদি ক্ষমা পাওয়ার শর্তে অপরাধের সমগ্র ঘটনা, মূল অপরাধী ও সহায়তাকারী হিসাবে জড়িত সব অপরাধী সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ও সত্য ঘটনা প্রকাশ করে আদালতে যে সাক্ষ্য প্রদান করে, তখন তাকে ‘রাজসাক্ষী বলে’।
রাজসাক্ষী হওয়ার বিষয়টি ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৭, ৩৩৮ ধারা, সাক্ষ্য আইনের ১৩৩ ধারায় উল্লেখ রয়েছে। সাক্ষ্য আইন প্রণয়নের সময় যেহেতু রাজার শাসন ছিল, তাই এই ধরনের সাক্ষীকে রাজসাক্ষী বলা হয় এখনও। এখন রাজসাক্ষীকে রাষ্ট্রের সাক্ষী বলে অভিহিত করেন কেউ কেউ। আসামি হলেও আদালতকে সহায়তা করায় রাজসাক্ষীর শাস্তি কম পাওয়া কিংবা ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ থাকে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইন-১৯৭৩-এর ১৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘বিচারের যে কোনো পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বা ধারা-৩ এ উল্লেখিত অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণের উদ্দেশ্যে এরূপ ব্যক্তিকে এই শর্তে ক্ষমা করতে পারেন যে, সে ঘটনার মূল হোতা বা সহায়তাকারী হিসেবে সে যা জানে তার পূর্ণ ও সত্য ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করবে। (২). বিচারে এরূপ প্রস্তাব গ্রহণকারী ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে পরীক্ষা করা হবে। (৩). বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এরূপ ব্যক্তিকে কারাগারে আটক রাখতে হবে।’
প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেছেন, শর্ত মোতাবেক রাজসাক্ষী যদি সাক্ষ্য দেন, তাহলে ট্রাইব্যুনাল যে কোনো শাস্তি দিয়ে আবার ক্ষমা করে দিতে পারেন। প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ বলেন, আইন অনুযায়ী কোনো রাজসাক্ষী যদি সব শর্ত পূরণ করে, তাহলে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন ট্রাইব্যুনাল। এই ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালের রয়েছে। এটা সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার।
মন্তব্য করুন