মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

লন্ডনে বাংলাদেশিকে সুবিধা দিতে কর্মকর্তার ঘুস গ্রহণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ২৯ জুন ২০২৫, ১৮:২৪
ছবি-সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যে এক বাংলাদেশির আশ্রয়-মর্যাদা নিশ্চিত করতে ঘুস লেনদেনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এক অভিবাসন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট অভিবাসীকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া একজন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আশ্রয়ের মর্যাদা পাইয়ে দিতে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের কেসওয়ার্কার ইমরান এম. তিন হাজার পাউন্ড অর্থ ঘুস নিয়েছেন। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

ব্রিটিশ পত্রিকা ডেইলি টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীর আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান করে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ৷ এরপর তাকে ফোন করেছিলেন ৩৯ বছর বয়সি ওই কর্মকর্তা।

মামলার শুনানিতে প্রত্যাখ্যাত বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী নুরাল বি. বলেছেন, নগদ অর্থের বিনিময়ে অভিবাসন কর্মকর্তা ইমরান এম. তাকে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নিশ্চিত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

তার এক সপ্তাহের মধ্যে, ২৩ বছর বয়সি নুরাল বি. ওই কর্মকর্তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেড় হাজার পাউন্ড জমা করেছিলেন বলে জানা গেছে।

টেলিগ্রাফ আরো জানিয়েছে, ইমরান এম. ওই বাংলাদেশিকে আশ্রয় মর্যাদা পাইয়ে দিতে কাজ শুরু করেন এবং ধাপে ধাপে তার অ্যাকাউন্টে অবশিষ্ট পাউন্ড জমা হতে থাকে।

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারভিত্তিক আশ্রয় দাবি প্রক্রিয়াকরণ দলের একজন নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন ইমরান এম।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, দোষী সাব্যস্ত ইমরান এম. নিরাপত্তা, তথ্য সুরক্ষা, জালিয়াতি, ঘুস এবং দুর্নীতি দমনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে প্রশিক্ষণ দিতেন।

আশ্রয় মর্যাদা পাওয়ার আশায় নুরাল বি. যখন অ্যাকাউন্ট সবশেষ অর্থ জমা করলেন, ততদিনে ইমরান এম.-এর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ।

দণ্ডিত ঘুস দাতা ও গ্রহীতা
ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (সিপিএস) জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে অনিয়মিত অভিবাসনে সহায়তার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ইমরান এম। অপরাধ সংঘটন বা সহায়তার লক্ষ্যে কম্পিউটারে অননুমোদিত অ্যাক্সেস নিশ্চিত করেছেন তিনি। তাই চলতি সপ্তাহের শুরুতে তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশি অভিবাসীর কাছ থেকে ঘুস নেয়ার পর এক তুর্কি নাগরিককেও একই প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইমরান এম.৷ তখনই তার আইন বহির্ভুত কর্মকাণ্ড কর্তৃপক্ষের নজরে আসে৷ আর ওই তুর্কি নাগরিকও ইমরান এম.-এর প্রস্তাবের কথা ফাঁস করে দিয়েছিলেন।

ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস জানিয়েছে, নুরাল বি.-কে যুক্তরাজ্যে বেআইনি অভিবাসনে সহায়তার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকা এবং একজন সরকারি কর্মকর্তাকে ঘুস দেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে ১৮ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সাজা ভোগের পর নুরাল বি.-এর ভাগ্যে কী ঘটবে, তা স্পষ্ট নয়৷ কারণ, ঘুসের বিনিময়ে পাওয়া আশ্রয় মর্যাদার প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেনি অভিবাসন কর্তৃপক্ষ।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান
যুক্তরাজ্যের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর প্রিস্টনের আদালতে এই মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ সেখানে নিযুক্ত সিনিয়র ক্রাউন প্রসিকিউটর ফ্রান্সেস কিলিন বলেন, ‘‘ইমরান এম. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আশ্রয় সংক্রান্ত দলের একটি বিশ্বস্ত পদে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু তিনি অর্থের বিনিময়ে আশ্রয় আবেদনের ফলাফল পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়ে সেই আস্থার অপব্যবহার করেছেন।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি আশা করি, এই মামলাটি একটি স্পষ্ট বার্তা দেবে৷ দুর্নীতি নির্মূল করার জন্য সিপিএস আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’

স্বরাষ্ট্র অফিসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘‘আমরা আশ্রয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ মান আশা করি, যাতে আবেদনগুরো সঠিকভাবে বিবেচনা করা হয়, সিদ্ধান্তগুলো সঠিক হয় এবং যাদের সত্যিকার অর্থে প্রয়োজন তাদেরই যেন সুরক্ষা দেয়া হয়।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, যখনই অগ্রহণযোগ্য আচরণ পাওয়া যাবে, বিষয়টি সম্পূর্ণ তদন্ত করা হবে এবং উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’

মন্তব্য করুন