ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে ওই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রয়টার্স এবং জিও টিভি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। কী কারণে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বা এ থেকে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি না সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
এর আগে বুধবার ভোরের দিকে পাকিস্তানের অন্তত ৯ স্থানের ২৪টি স্থাপনায় হামলা চালায় ভারত। এতে এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত হয়েছে বলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন।
মূলত ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে ভারত। ওই হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ শুরু থেকেই তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে। পহেলগামে হামলার দুই সপ্তাহ পর পাকিস্তানের নয় স্থানে হামলা চালিয়েছে নয়াদিল্লি।
ভারতের হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা ওই হামলার জবাবে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের পর এই প্রথম পরমাণু অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে এত বড় সামরিক সংঘর্ষ ঘটলো।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিতে অন্তত ১২টি দেশের কূটনীতিকদের জানিয়েছে, পাকিস্তান যদি জবাব দেয়, তাহলে ভারতও আবার পাল্টা জবাব দেবে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলে বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বেড়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা নয়টি ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে—যার মধ্যে কয়েকটি গত মাসে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলায় ২৫ পর্যটক ও একজন স্থানীয় বাসিন্দা নিহতের ঘটনায় জড়িত বলে দাবি করা হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান জানিয়েছে, এই হামলা ও সীমান্তে গোলাবর্ষণে অন্তত ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, গত রাতে ভারত যে ভুল করেছে, তার মূল্য দিতে হবে। তারা হয়তো ভেবেছে আমরা পিছু হটবো, কিন্তু তারা ভুলে গেছে—এটা সাহসী মানুষের জাতি।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ বলেছেন, ভারতীয় বেসামরিক জনগণ নয়, কেবল সামরিক লক্ষ্যবস্তুতেই পাল্টা আঘাত হানবে পাকিস্তান। পাকিস্তান জানায়, ভারতের হামলায় ছয়টি স্থান লক্ষ্যবস্তু করা হয়। কিন্তু সেগুলোর কোনোটি ‘সন্ত্রাসী শিবির’ ছিল না।
পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে এক মসজিদ ও মাদ্রাসায় ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, যেখানে তিনজন নিহত হন। স্থানীয়দের ভাষ্য, এই ভবনে আবাসিক অংশও ছিল। ভারতীয় এক সূত্র দাবি করেছে, সেটি ছিল ‘সন্ত্রাসীদের শিবির’। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, সব লক্ষ্যবস্তুই বেসামরিক ছিল।
হামলার সময় পাকিস্তানের আকাশে ৫৭টি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ ছিল, যেগুলোতে হাজারো যাত্রী ছিলেন—সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের উড়োজাহাজ ছিল এসবের মধ্যে।
মন্তব্য করুন