ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন বলেছেন, বাংলাদেশে ফল ও সবজিতে কীটনাশকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।
রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) কার্যালয়ে আয়োজিত 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি উল্লেখ করেন, স্থানীয় কৃষকরা প্রায়শই এই রাসায়নিকগুলো প্রয়োগ করার সময় সুরক্ষা নির্দেশিকা অনুসরণ করেন না। ফলে খাদ্য সুরক্ষা সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ উঠছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ফলস্বরূপ, এই খাদ্য পণ্যগুলোতে কীটনাশকের উপাদানগুলো ঘন ঘন শনাক্ত করা হয়, খাদ্য সুরক্ষা সম্পর্কে উদ্বেগ তুলে ধরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাবারের সুরক্ষার স্তর নির্ধারণ করা কঠিন এবং জোর দেন যে, সমস্ত খাদ্য বৈশিষ্টগতভাবে খাওয়ার জন্য নিরাপদ হওয়া উচিত।’
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. আমিন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মাহমুদুল কবির মুরাদ ও মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান।
ড. আমিন তার উপস্থাপনায় জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ২-এর সঙ্গে সম্পর্কিত খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেন, যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের বিষয়টিকে তুলে ধরে।
তিনি গ্রামীণ ও শহুরে জনগোষ্ঠীর মধ্যে ফল খাওয়ার শতকরা হার উল্লেখ করে বলেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং শহরের বাসিন্দাদের ৩৮ শতাংশ ফল খায়।
আঞ্চলিকভাবে ফল খাওয়ার তারতম্য রয়েছে- বরিশালে ৪০ দশমিক ২ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ, ঢাকায় ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ, খুলনায় ২৬ দশমিক ২ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৩৫ দশমিক ৮ শতাংশ, রংপুরে ৬০ দশমিক ১ শতাংশ এবং সিলেটে ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে, গ্রামীণ জনগোষ্ঠী গরুর মাংসের ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং হাঁস-মুরগির ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ খায়, আর গ্রামাঞ্চলে ডিম খাওয়ার হার ১০ দশমিক ১ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
ড. আমিন উল্লেখ করেছেন যে দেশে ডিম, দুধ এবং মাংসের উৎপাদন বাড়লেও ধনীরা দরিদ্রদের তুলনায় অনেক বেশি হারে এই খাবারগুলো গ্রহণ করতে সক্ষম। ধনীদের খাওয়ার হার ৭ শতাংশ এবং অন্যদের মাত্র ২ শতাংশ।
খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে ড. আমিন জোর দিয়ে বলেন, খাদ্য রপ্তানি করতে হলে অবশ্যই নিরাপত্তার মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। এসব নিশ্চিত করা ছাড়া বিদেশি ক্রেতাদের বাংলাদেশি পণ্য কেনার সম্ভাবনা কম।
তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, খাদ্য সুরক্ষা তিনটি স্তরের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়: জনসাধারণের খাদ্য সুরক্ষা, তৃতীয় পক্ষের পরিদর্শন এবং জাতীয় পর্যায়ের পদক্ষেপ।
দেশে খাদ্য নিরাপত্তার মাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. আমিন বলেন, কোনো খাদ্যপণ্য, বিশেষ করে ফল ও শাকসবজি, যেখানে কীটনাশকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, সেখানকার সঠিক নিরাপত্তা নির্ধারণ করা কঠিন।
জাকারিয়া পরামর্শ দেন, কীটনাশকের ঝুঁকি মোকাবিলায় কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ কমাতে শাকসবজি ১৫ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখা উচিত।
তিনি মানুষকে অত্যন্ত অনিরাপদ বা ক্ষতিকারক খাবার যেমন অর্গান মাংস(টিস্যু থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত মাংস) এড়াতে এবং সেগুলো খাওয়ার সময় অংশের আকারের বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য সতর্ক করেন।
বিএফএসএ বর্তমানে ২৪৮ জন কর্মী নিয়ে কাজ করছে এবং এই সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা পরীক্ষা করতে বিদেশি অর্থায়নে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় তিনটি নতুন ল্যাব স্থাপন করা হবে।
জাকারিয়া বিএফএসএ উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ না করায় খোলা বাজারে পণ্য পরীক্ষা পরিচালনার অসুবিধার কথাও তুলে ধরেন। তবে তারা রেস্তোরাঁগুলোকে ভেজাল খাবার পরিবেশন করছে না তা নিশ্চিত করতে মনিটরিং করে এবং নিয়ম লঙ্ঘনের ঘটনা পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষ কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি উল্লেখ করেন, বিএফএসএ সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় মসলায় চকের গুঁড়া এবং একটি কোমল পানীয়তে ক্ষতিকর পদার্থ পেয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, বিএফএসএ'র পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতা দেখিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য আইনি পথের আশ্রয় নিয়েছে।
মন্তব্য করুন