সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। রাজ্য রাজনীতি থেকে বিনোদন দুনিয়া— সর্বত্র চাহিদা তাঁর। নীরজ পাণ্ডের ‘খাকি: দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার’-এর প্রচার ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। আবার স্টার জলসার ‘বিগ বস্’ এবং ক্যুইজ় শো-এর জন্য মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিকের বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
খবর, যার জেরে জি বাংলার সঙ্গে ১১ বছরের গাঁটছড়া খুলতেও দ্বিধা করেননি! পাশাপাশি, দেশের ৪০টি প্রথম সারির বিপণি সংস্থার মুখ তিনি। এমনও শোনা যায়, সময়ে সময়ে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খানের জনপ্রিয়তাও নাকি ম্লান তাঁর কাছে! বাংলা অভিনেতারা দূরঅস্ত, বিজ্ঞাপনী ছবির দুনিয়ায় বলিউডের তাবড় তারকাদের থেকে তাঁর পারিশ্রমিক বহু গুণ বেশি।
অন্য দিকে, বঙ্গ বিজেপি তাঁকে বার বার দলের হয়ে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু ‘দাদা’ রাজি নন। কেন? রাজনৈতিক দুনিয়া থেকেও বিনোদন দুনিয়ায় যশ-খ্যাতি-অর্থ বেশি বলেই কি ‘মহারাজ’ ক্যামেরার মুখোমুখি হতে বেশি ভালবাসেন? না কি এত অর্থ রাজনৈতিক মঞ্চ দিতে পারবে না বলেই তিনি রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন?
বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যোগাযোগ করেছিল প্রযোজনা সংস্থা উইন্ডোজ়-এর সঙ্গে। সংস্থার দুই কর্ণধার নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় বিজ্ঞাপনী ছবিতে কাজ করেছেন সৌরভ। এই প্রযোজনা সংস্থার কাহিনি-চিত্রনাট্যকার জ়িনিয়া সেন। কেন ‘দাদা’র এত চাহিদা? প্রশ্ন রাখতেই নন্দিতা-শিবপ্রসাদের হয়ে তাঁর জবাব, “সৌরভের মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। ওঁর আকর্ষণ তীব্র। সেটা কোনও ভাবে উপেক্ষা করা যায় না।
উনি হাসিমুখে এসে দাঁড়ালেই যেন সমস্ত আলোর ওঁর উপর জড়ো হয়।” এই জায়গা থেকেই নাকি অনেক সময় বেশি অর্থ দিয়েই তাঁকে পেতে চায় বিপণি সংস্থা। একই ভাবে ভিন্ন দুনিয়া থেকে এসেও তাঁর পেশাদারিত্ব অন্য অনেকের থেকে বেশি। সৌরভ পরিশ্রমী। এক শট একাধিক বার হাসিমুখে দেন। না বুঝতে পারলে জেনে নেন। সুশৃঙ্খল, প্রত্যেকের সঙ্গে ভীষণ আন্তরিক ব্যবহার করেন। তা ছাড়া, তিনি আন্তর্জাতিক স্তরেও বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেন। ফলে, সব মিলিয়ে তাঁর চাহিদা তুঙ্গে।
এ দিকে টলিউডের অন্দরের খবর, এই কারণেই নাকি সৌরভ ‘অভিনেতাদের ঈর্ষা বাংলার গর্ব!’ বিশেষ করে, স্টার জলসা তাঁকে মোটা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে চার বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ করায় বাংলা বিনোদন দুনিয়ার অভিনেতারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বাংলা ছবির এক উজ্জ্বল অভিনেতা বললেই উঠে আসে রাইমা সেন, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাধ্যায়ের নাম। এঁরা বিজ্ঞাপনী ছবির পাশাপাশি সঞ্চালনাও করেন।
‘দাদা’র পারিশ্রমিক এঁদের থেকে অনেক বেশি। তবু তাঁকেই চায় বাংলা! সত্যিই কি সৌরভকে ঘিরে টলিপাড়ার অন্দরের ছবি এ রকম? জানতে রাইমা, পরমব্রতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। রাইমা উচ্ছ্বসিত সৌরভকে নিয়ে। তাঁর কথায়, “ঈর্ষার প্রশ্নই নেই। আমি ওঁকে নিয়ে গর্বিত।
‘দাদা’ বাংলা এবং আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি এই সম্মানের জন্য উপযুক্ত।” বিষয়টি নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি আরও জানিয়েছেন, ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়কের একটি দুর্দান্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী পেশাজীবন রয়েছে। সেই সাফল্যই যেন এই সাফল্য গড়ে দিয়েছে। তিনি তাই এত সম্মানের যোগ্য। পরমব্রত অবশ্য এ সব নিয়ে ভাবেন না! একই ভাবে টলিউডের বাকিরাও মনে করেন, কেন তাঁকে হিংসা করবে বাংলা? তিনি তো অন্য কোনও প্রদেশ থেকে আসেননি! বরং বাংলার প্রতিনিধিত্ব করছেন। “সৌরভকে নিয়ে তাই বাংলা গর্বিত।”
যাঁকে নিয়ে এত চর্চা, সেই সৌরভ কী বলছেন? বাংলা ছাপিয়ে বলিউডও তাঁর জনপ্রিয়তা এবং পারিশ্রমিকের অঙ্কের কাছে পদানত। অর্থই কি তাঁকে রুপোলি পর্দায় আটকে রেখেছে?
প্রশ্ন শুনে ফোনের ও পারে মৃদু হাসি। সৌরভ স্বীকার করেছেন, সঞ্চালনা বা বিজ্ঞাপনী ছবিতে বলিউডের অনেক তারকার থেকে তাঁর পারিশ্রমিক বেশি। বলেছেন, “আমি ও ভাবে দেখি না। শুধুই কাজ করি। কাজ সফল হলে আমার আনন্দ।”
বলতে বলতে তিনি প্রথম ‘দাদাগিরি’র স্মৃতি ভাগ করে নিয়েছেন। জানিয়েছেন, তিনি ভাবতেই পারেননি ১০ বছর ধরে একটি শো-কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। “খেলার সময়েও কোনও দিন মাথা ঘামাইনি কী পাচ্ছি! অর্থ আমার কাছে সাফল্যের সংজ্ঞা নয়”, দাবি ‘মহারাজ’-এর। কাজ করলে পারিশ্রমিক তো আসবেই।
দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অর্থ দিলেও রাজনীতিতে আসব না। কারণ, আমি রাজনীতি বুঝি না।” এ-ও জানান, বাংলার অভিনেতারাও আগামী দিনে তাঁর সমান পারিশ্রমিক পান, মন থেকে চাইছেন তিনি।
মন্তব্য করুন