আলহামদুলিল্লাহ্! সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ্র যিনি আমাদের ঈমান দ্বারা মর্যাদিত করেছেন, আমাদের জন্য দ্বীনের পথকে সহজ করে দিয়েছেন এবং ঈদুল আদহা’র মতো একটি পবিত্র উৎসব দান করেছেন, যার মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহ্র প্রতি তাদের ভালোবাসা, আনুগত্য ও আত্মত্যাগের নিদর্শন পেশ করে।ইদ উল আদহা কেবল একটি উৎসব নয়—এটি একটি মহা বার্তা বহন করে, তা হলো আত্মত্যাগ, তাকওয়া ও নিঃস্বার্থ আনুগত্য। এই দিনের পেছনে রয়েছে হযরত ইবরাহিম (আঃ) ও হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর বিস্ময়কর আত্মত্যাগ ও আল্লাহ্র প্রতি সর্বোচ্চ আনুগত্যের অনন্য দৃষ্টান্ত।আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন: "তোমার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সালাত কায়েম করো এবং কুরবানি দাও।"
(সূরা কাউসার: ২)
এছাড়াও, কোরআনে আল্লাহ্ বলেন:
"আল্লাহ্র নিকট তাদের গোশত ও রক্ত পৌঁছে না, বরং তোমাদের তাকওয়াই তাঁর নিকট পৌঁছে।"
(সূরা হজ্জ: ৩৭)
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
"আদম সন্তানের কোনো কাজ কুরবানির দিনে আল্লাহর নিকট কুরবানির চেয়ে অধিক প্রিয় নয়।"
(তিরমিজি, হাদীস: ১৪৯৩)
এই দিনটি আমাদের শিক্ষা দেয়, আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য আমরা কী পরিমাণ আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত আছি। ইদুল আদহা যেন হয়ে ওঠে আমাদের জীবনের এক নতুন উপলব্ধি—যেখানে আমরা কেবল পশু কোরবানির মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ না থেকে নিজের খেয়াল, অহংকার, পাপ প্রবৃত্তিকে কোরবানি করি এবং একজন খাঁটি মুত্তাকী বান্দা হওয়ার সংকল্প করি।
ইদুল আদহা ইসলামী ক্যালেন্ডারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এটি "কুরবানির ঈদ" নামেও পরিচিত। এ উৎসব শুধু আনন্দের দিন নয়; এটি আমাদের ঈমান, তাকওয়া ও আত্মত্যাগের এক জীবন্ত নিদর্শন। এর পেছনে রয়েছে একটি গভীর ইতিহাস—যা কোরআন ও হাদীসের মাধ্যমে আমাদের জানা যায়, এবং যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন আল্লাহর খলিল (প্রিয় বন্ধু) হযরত ইবরাহিম (আঃ) ও তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ)।
১. হযরত ইবরাহিম (আঃ)-এর স্বপ্ন ও আদেশ
আল্লাহ্ তাআলা কোরআনে বলেন:
"অতঃপর যখন সে (ইসমাইল) পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন ইবরাহিম বলল, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, আমি তোমাকে কোরবানি করছি। এখন তুমি বলো, তোমার মত কী?"
ইসমাইল বলল, "হে পিতা! আপনাকে যা আদিষ্ট করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।"
(সূরা সাফফাত: ১০২)
এই আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায়, ইবরাহিম (আঃ) কোন কল্পনায় নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে তাঁর প্রিয় পুত্রকে কোরবানি করতে প্রস্তুত হন। এটি ছিল এক বিরল ও মহান আত্মত্যাগ, যা আল্লাহ্র প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যের চূড়ান্ত নিদর্শন।
২. আল্লাহর পরীক্ষা ও পুরস্কার
ইবরাহিম (আঃ) যখন পুত্রকে কোরবানি করতে প্রস্তুত হন এবং উভয়েই আত্মসমর্পণ করে যান, তখন আল্লাহ্ তাআলা সেই কোরবানি গ্রহণ করেন এবং হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর পরিবর্তে একটি বিরাট জন্তু পাঠান।
"অতঃপর যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম তাকে কাত করে শুইয়ে দিল, আমি তাকে আহ্বান করলাম: হে ইবরাহিম! তুমি তো স্বপ্নকে বাস্তব করে দেখালে। আমি এমনিভাবেই সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিঃসন্দেহে এটা ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা।"
"এবং আমি তার পরিবর্তে একটি বিশাল কোরবানি প্রদান করলাম।"
(সূরা সাফফাত: ১০৩-১০৭)
এ ঘটনাই পরবর্তীতে মুসলমানদের জন্য "কুরবানি"র বিধান হিসেবে নির্ধারিত হয়।
৩. হাদীসের আলোকে কুরবানির গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
"আদম সন্তানের কোনো কাজ কুরবানির দিনে আল্লাহর নিকট কুরবানির চেয়ে অধিক প্রিয় নয়। কিয়ামতের দিন কোরবানির পশুগুলোর শিং, লোম ও খুরসহ আগমন হবে, এবং অবশ্যই কোরবানি আল্লাহর নিকট গ্রহণ করা হয় কোরবানির রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই। অতএব, খুশি মনে কোরবানি করো।"
(তিরমিজি: ১৪৯৩)
এছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কোরবানিকে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং সাহাবিদের এ আমল করতে উৎসাহিত করেছেন।
৪. কোরবানির মূল শিক্ষা: তাকওয়া ও আনুগত্য
"আল্লাহর কাছে কোরবানির পশুর গোশত বা রক্ত পৌঁছে না, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।"
(সূরা হজ্জ: ৩৭)
এই আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোরবানি শুধু পশু জবাই নয়—বরং এটা আত্মিক এক ইবাদত, যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় নিজের ভালবাসার জিনিস ত্যাগ করে।
ইদুল আদহার দিনে মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজসমূহ
১. সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা ও গোসল করা
রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিনের সকালে গোসল করতেন। এটা সুন্নাত।
হাদীস:
"রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিন (সালাতের জন্য) বের হওয়ার পূর্বে গোসল করতেন।"
(ইবন মাজাহ: ১৩১৫)
২. পবিত্র পোশাক পরা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা
ঈদের দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, উত্তম ও ইসলামী শালীন পোশাক পরা সুন্নাত। সুগন্ধি ব্যবহার করাও মর্যাদাপূর্ণ।
৩. ঈদের নামাজ আদায় করা (ওয়াজিব/সুন্নাতে মুয়াক্কাদা)
ঈদুল আদহার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ঈদের নামাজ আদায় করা। এটি জামাতে আদায় করা হয় খোলা ময়দানে বা মসজিদে।
হাদীস:
"আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদহায় একসঙ্গে নামাজ আদায় করতাম।"
(বুখারি: ৯৬২)
৪. ঈদের নামাজে যাওয়ার পূর্বে কিছু না খাওয়া (সুন্নত)
ইদুল ফিতরের বিপরীতে, ইদুল আদহার দিনে ঈদের নামাজের আগে কিছু না খেয়ে বের হওয়াই সুন্নাত। নামাজ শেষে কুরবানির গোশত খাওয়া উত্তম।
৫. আল্লাহর জিকির ও তাকবির পাঠ করা
ইদুল আদহার অন্যতম বিশেষ আমল হলো উঁচু স্বরে তাকবির বলা, যা ৯ জিলহজ ফজর থেকে শুরু করে ১৩ জিলহজের আসর পর্যন্ত ওয়াজিব তাকবিরের অন্তর্ভুক্ত।
তাকবিরে তাশরিক:
اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
৬. কুরবানি করা (সামর্থ্যবানদের জন্য ওয়াজিব)
যেসব মুসলমান সামর্থ্যবান, তাদের উপর কুরবানি করা ওয়াজিব (বা হানাফি মতে বাধ্যতামূলক)।
কোরআনে বলা হয়েছে:
"তোমার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড় এবং কোরবানি কর।"
(সূরা কাউসার: ২)
৭. কুরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করা (সুন্নত)
এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়স্বজনকে
এক তৃতীয়াংশ গরিবদের
এক তৃতীয়াংশ নিজ পরিবারে রাখার সুন্নত রয়েছে
৮. সৎকাজে মনোযোগ ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা
ঈদের দিনেও মুসলমানদের উচিত তাকওয়া ও নৈতিকতা বজায় রাখা, গান-বাজনা, অশালীনতা, অপচয় ও অহংকার থেকে দূরে থাকা।
৯. আত্মীয়তা রক্ষা ও শুভেচ্ছা বিনিময়
ঈদের দিন আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা, সালাম বিনিময়, এবং দোয়া ও ভালোবাসা ভাগ করে নেওয়া ইসলামি মূল্যবোধ।
১০. গরিব-দুঃখীর পাশে দাঁড়ানো
এই দিনে কেউ যেন অভুক্ত না থাকে, সেজন্য যাকাত, সদকা, কোরবানির গোশত বিতরণ—সবই মানবিক ও ইসলামি দায়িত্ব।
আসুন আমরা জেনে নেই , কুরবানি কারা দিতে পারবে?
যাদের উপর কুরবানি ওয়াজিব/বাধ্যতামূলক
হানাফি মাজহাব অনুসারে, কুরবানি নিম্নোক্ত শর্ত পূরণকারীদের ওপর ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক):
১. মুসলিম হওয়া
কুরবানি শুধু মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত। অমুসলিমের ওপর কুরবানি নেই।
২. বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) হওয়া
শিশুদের ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।
তবে অভিভাবক চাইলে তাদের নামে কুরবানি করতে পারেন—তবে সেটা ওয়াজিব নয়, নফল।
৩. আক্লবান (সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন) হওয়া
পাগলের ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।
৪. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া
যার কাছে ঈদুল আযহার দিন সুবহে সাদিক (ফজরের সময়) নিসাব পরিমাণ সম্পদ (সোনা বা রূপার মূল্যে) থাকে, তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব।
নিসাবের পরিমাণ
সোনা: ৭.৫ ভরি (৮৭.৪৮ গ্রাম), রূপা: ৫২.৫ ভরি (৬১২.৩৬ গ্রাম)
বা এর সমপরিমাণ মূল্যমান
যাকাতের জন্য নিসাব যেভাবে ধরা হয়, কুরবানির জন্যও তা-ই ধরা হয়। তবে বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত নয়।
মুসলমানদেরকে ইদুল আদহার দিনে যেসব কাজ না করতে বলা হয়েছে
১. কুরবানির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি না করা
যাদের কুরবানির সামর্থ্য আছে, তারা কুরবানি না করলে বড় গোনাহগার হবে।
হাদীস:
"যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।"
(ইবনে মাজাহ: ৩১২৩)
২. কুরবানির পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা বা নির্যাতন করা
ইসলামে পশুর প্রতি দয়া প্রদর্শন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুরবানির পশুকে আঘাত করা, কষ্ট দেওয়া, ক্ষুধার্ত রাখা, ভয় দেখানো ইত্যাদি কঠোরভাবে নিষেধ।
হাদীস:
"নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সদাচরণ করতে বলেছেন। কুরবানি করলেও সদয়ভাবে করো, পশু জবাই করলে তা সুন্দরভাবে করো।"
(মুসলিম: ১৯৫৫)
৩. কুরবানির গোশত বা চামড়া বিক্রি করে টাকা রাখা
কুরবানির পশুর কোনো অংশ বিক্রি করা বৈধ নয়। এমনকি কসাইয়ের পারিশ্রমিক হিসেবেও পশুর চামড়া বা গোশত দেওয়া হারাম।
হাদীস:
"যে ব্যক্তি কুরবানি করে, সে যেন কসাইকে তার পারিশ্রমিক কুরবানির কোনো অংশ দিয়ে না দেয়।"
(বুখারি ও মুসলিম)
৪. কুরবানির আগে চুল-নখ কাটা (কুরবানিদাতার জন্য)
যে ব্যক্তি কুরবানি করার ইচ্ছা রাখে, তার জন্য জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকে কুরবানির দিন পর্যন্ত চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা সুন্নত (হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে)।
হাদীস: "যখন তোমরা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখতে পাও এবং তোমাদের কেউ কুরবানি করার ইচ্ছা রাখে, সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে।"
(মুসলিম: ১৯৭৭)
5. অপচয় ও অহংকার করা
ঈদের দিনে পোশাক, খাবার বা আনন্দ-উৎসবের নামে বাড়াবাড়ি, অপচয় ও আত্মপ্রদর্শন ইসলাম সমর্থন করে না।
কোরআন:
"নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।"
(সূরা ইসরাঃ ২৭)
6. গান-বাজনা, অশ্লীলতা ও হারাম আনন্দে মেতে ওঠা
ঈদের আনন্দ যেন হারামের সীমা না লঙ্ঘন করে। অনেক সময় গান-বাজনা, নাচ, অশ্লীল বিনোদন ইত্যাদি চলে—যা ঈদের পবিত্রতা নষ্ট করে।
7. গরিব-অসহায়দের অবহেলা করা
ঈদের দিনে শুধু নিজের পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে খুশি হওয়া নয়—অসহায়, গরিব ও প্রতিবেশীদের অবহেলা করাও ইসলামবিরোধী।
এখন আলোচনা করব কুরবানির মাংস বণ্টনের সঠিক পদ্ধতি নিয়ে সাধারণ সুন্নাত বণ্টন পদ্ধতি:
কুরবানির মাংস সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা সুন্নত:
এক-তৃতীয়াংশ: গরিব, মিসকিন, অভাবীদের মাঝে বিতরণ করা
এক-তৃতীয়াংশ: আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও বন্ধুদের উপহার দেওয়া
এক-তৃতীয়াংশ: নিজ পরিবারে রেখে খাওয়া
এটা বন্টনের সুন্নত পদ্ধতি, ফরজ বা ওয়াজিব নয়। তবে গরিবদের হক আদায় করা জরুরি।
কুরবানির মূল শিক্ষা কী হওয়া উচিত ?
১. আল্লাহর জন্য আত্মত্যাগের শিক্ষা
কুরবানি আমাদের শেখায়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রিয় জিনিস ত্যাগ করতেও আমরা প্রস্তুত থাকবো।
কোরআন:
"তুমি বলো, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও মৃত্যুও আল্লাহর জন্য—যিনি সকল সৃষ্টির পালনকর্তা।"
(সূরা আন'আম: ১৬২)
২. তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জনের শিক্ষা
আল্লাহ তাআলা কুরবানির পশুর মাংস বা রক্ত চান না—তিনি চান আমাদের তাকওয়া।
কোরআন:
"আল্লাহর নিকট পশুর মাংস ও রক্ত পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।"
(সূরা হজ: ৩৭)
৩. আনুগত্য ও ইবরাহিম (আ.) এর অনুসরণের শিক্ষা
ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশে নিজ পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কুরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন—এটা আমাদের শেখায় বিনা প্রশ্নে আল্লাহর আদেশে আত্মসমর্পণ করা।
4. পরিবার ও সন্তানদের ইসলামের পথে উৎসর্গ করার শিক্ষা
ইসমাইল (আ.)-এর আত্মসমর্পণ ও ইবরাহিম (আ.)-এর আনুগত্য—একটি আদর্শ মুসলিম পরিবারে কেমন আত্মত্যাগ ও আল্লাহভীতি থাকা উচিত, তার অনন্য উদাহরণ।
5. মানবিকতা ও সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠার শিক্ষা
কুরবানির মাংস গরিব, দুঃস্থ ও প্রতিবেশীদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হয়। এতে সমাজে ধনী-গরিব বৈষম্য কমে, সহানুভূতি ও ভালোবাসা তৈরি হয়।
6. জীব হত্যা নয়, বরং মহান ত্যাগের প্রতীক
কুরবানি ইসলামকে সহিংসতা নয়, বরং তা পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত, করুণাময় ও নৈতিক আচরণের সাথে সম্পন্ন করতে শেখায়।
হাদীস:
“তোমরা যখন কুরবানি করো, তখন তা সুন্দরভাবে করো। পশুকে কষ্ট দিও না।”
(মুসলিম: ১৯৫৫)
7. নফস ও খেয়াল-খুশির কুরবানি দেয়ার শিক্ষা
শুধু পশু জবাই নয়, বরং নিজের অহংকার, গুনাহ, হিংসা, লোভ—এসবকেও কুরবানি করার শিক্ষা দেয়।
পরিশেষে বলবো, ইদুল আযহা শুধুমাত্র একটি আনন্দের দিন নয়—বরং এটি মুসলমানদের জন্য ত্যাগ, তাকওয়া, আনুগত্য ও মানবতার এক মহান পরীক্ষার দিন।
হযরত ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমরা শিখি, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটিও উৎসর্গ করতে কখনো পিছপা হওয়া যাবে না।
এই দিনে কেবল পশু জবাই করাই উদ্দেশ্য নয়, বরং আল্লাহর জন্য আমাদের আত্মা, নফস, লোভ, অহংকার ও গুনাহের প্রবৃত্তিকে কুরবানি করাই এই ইবাদতের আসল উদ্দেশ্য।
কুরবানির মাধ্যমে আমরা তাকওয়া অর্জন করি, গরিবদের পাশে দাঁড়াই, সামাজিক বৈষম্য দূর করি এবং ইসলামের করুণাময় ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা অনুসরণ করার শিক্ষা নেই।
কুরআনের ভাষায়:
"আল্লাহর নিকট পশুর মাংস ও রক্ত পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।"
(সূরা হজ: ৩৭)
তাই আমাদের উচিত, কুরবানির এই ইবাদতকে বাহ্যিক রীতি-নীতি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না রেখে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করা, এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।
কুরবানি যেন শুধু একটি ঈদের আনুষ্ঠানিকতা না হয়ে, বরং একটি আত্মশুদ্ধির বিপ্লব হয়ে ওঠে আমাদের জীবনে—এই হোক আমাদের প্রার্থনা।আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এই মহান ইবাদত সঠিকভাবে আদায় করার তাওফিক দিন, এবং কুরবানির মাধ্যমে তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার সৌভাগ্য দান করুন। আমীন।
লেখকঃ ড. আজিজুল আম্বিয়া, কলাম লেখক ও বিশ্লেষক। email:[email protected]
মন্তব্য করুন